শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

সিক্স প্যাক কমেডি, সব পাগলের মাথা খারাপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রশীদ জামীল
গবেষক ও লেখক

খুব লম্বাও না আবার খাটোও না, মাঝারি গড়নের চেয়ে একটু দীর্ঘ ছিলেন। কপালটা ছিল চওড়া। দুই ভ্রু'র মধ্যখানে ছোট্ট একগাছি রগ ছিল। রাগ করলে একটু ফুলে উঠত। নাকটা ছিল ধারালো।

চুল ছিল কানের লতি পর্যন্ত। কুকড়ানোও ছিল না আবার একেবারে সোজাও না। চুলগুলো সবসময় পরিপাটি করে রাখতেন। কখনও-সখনও মধ্যখানে সিঁথিও কাটতেন।

দুই কাঁধের মাঝামাঝি পিঠের দিকে ছিল একটুকরো গোশত__ নবুওয়াতে নিদর্শন— মোহরে নবুওয়াত। ভাগ্যবান সাহাবিরা চুমো খেতে পারতেন।

চেহারা ছিল চাঁদের মতো উজ্জ্বল। মুখবয়ব ছিল রক্তিম লাবন্যে ভরপুর। চোখ দুটো টানা টানা। শুভ্র ছিল আবার কালোও। চোখের সাদা অংশ বেশি সাদা, কালো অংশ বেশি কালো। দাঁতগুলো সব মুক্তোর মতো, হাসলে মনেহতো বিদ্যুত চমকাচ্ছে।

বুক থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের একটি সরু রেখা প্রলম্বিত ছিল। হাত-পায়ের আঙুলগুলো ছিল মাংসল। হাতের তালু ছিলো প্রশস্থ। পায়ের গোড়ালি সরু ও হালকা।

আর বুক এবং পেট...

... এই অংশটি হুবহু আরবি তুলে দিই। শামাইলে তিরমিজি এবং তাবরানি শরিফে বর্ণিত কয়েকটি হাদিসের আলোকে উপরে বিশ্বনবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আংশিক শারীরিক বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।

নবি-দৌহিত্র হযরত হাসান ইবনে আলি রাজিয়াল্লাহু আনহুমা তার বর্ণনায় এক পর্যায়ে জানান, كان رسول الله صلى الله عليه وسلم سواء البطن والصدر ، عريض الصدر .

নবিজির বুক এবং পেট মোবারাক ছিল একেবারেই সমান, বুকটা একটু প্রশস্থ ছিল।

নবিজির শারীরিক গড়ন কেমন ছিল, সেটা ব্যাখ্যা করবার জন্য হাদিসের কিতাবাদি, বিশেষত শামাইলে তিরমিজির বাইরে যাওয়ার দরকার আছে বলে তো মনে হয় না।

তাহলে কেন খামাখা নিজেদেরকে অতি আধুনিক এবং ভার্সিটির মাল প্রমাণ করবার জন্য এসব সিক্স প্যাক বিতর্কের জন্ম দিতে হবে? আর সত্যি সত্যি ভার্সিটির মাল হলে তো ডিকশনারীগুলো অন্তত নাড়াচাড়া করে থাকবার কথা।

দুই

সিক্স প্যাক একটি নাউন। অক্সফোর্ড ডিকশনারী বলছে, সিক্স প্যাকের অরিজিনাল অর্থহলো, A pack of six cans of beer held together with a plastic fastener. ছয়টি বিয়ার অথবা কোমলপানীয়ের ক্যান একসাথে প্লাস্টিকের কন্টেইনারে থাকলে সেটাকে সিক্স প্যাক বলাহয়।

আর সিক্স প্যাকের ইনফরমাল বা বর্তমান ব্যবহৃত অর্থ A man's set of visibly well-developed abdominal muscles. একজন মানুষের পেটের দৃশ্যমান উন্নত পেশী।

ক্যামব্রিজ ডিকশনারী জানাচ্ছে, A set of six cans or bottles of a drink sold together একসাথে বিক্রিত ছয়টি পানীয়ের ক্যান অথবা বোতলকে সিক্স প্যাক বলে। আর ইনফরমাল ব্যবহারার্থে, A set of well-developed muscles on someone's stomach: কারো পেটে একসেট উন্নত পেশী থাকা।

কথাগুলোকে সহজ করে যদি বলি। সিক্স প্যাকের মূল অর্থ একসাথে ছয়টি বিয়ারের বোতল। বর্তমানে উন্নত পেশিবহুল পেটের মালিক হলে তার পেটকে সিক্স প্যাক বলাহয়।

আরো সহজ করে বললে, জিম করে পেটের মধ্যে ছয়টি ভাজ ধরানো, দেখলে মনেহয় যেন পেটের ভেতর ছয়টি বিস্কিট সারি সারি করে সাজানো। উপরে দুইটা, তার নিচে দুইটা, তার নিচে দুইটা।

সাধারণত সিনেমার অ্যাক্টারগণ আজকাল সিক্স প্যাক বডির প্রতি বেশ দুর্বল। কারণ তারা স্কিনে শার্ট খুলে পেটের ভাজ এবং হাতের মাসল প্রদর্শনের সুযোগ পায়। সিক্স প্যাক পেট বুক থেকে অনেকখানি ভেতরে থাকে। (প্রথম কমেন্টে ছবি দিলাম একটা, সিক্স প্যাকের)

তিন.

কিছু কথা আছে যা গ্রামাটিক্যালি রাইট, কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে রং। যেমন, দু’জন লোক একসাথে থাকে। এটার আক্ষরিক ইংলিশ হবে They live together. কিন্তু এই সময়ে লিভটুগেদার একটি বিশেষ পরিভাষা হয়েগেছে।

একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে যদি বিবাহ-বহির্ভুতভাবে একসাথে থাকে, স্বামী-স্ত্রীর মতো, তখন বলাহয় They are living together. তারা লিভটুগেদার করছে। সুতরাং এখন দুইজন লোক একসাথে বা একঘরে থাকলেই সেটাকে লিভটুগেদার বলা যাবে না।

প্রপোজ (propose) মানে কারো সামনে কোনো প্রস্তাব রাখা। এখন যেহেতু প্রপোজ একটি বিশেষ প্রস্তাবের সাথে বিশেষায়িত হয়েগেছে, একজন আরেকজনকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সেটাকে বলাহয় প্রপোজ করা।

এ জন্য এখন কোনো ছেলে অন্য মেয়ের সামনে সাধারণ কোনো প্রস্তাব রাখলে সেটাকে প্রপোজ বলা হয় না।

সব ভাষাতেই এমন উদাহরণ আছে। আরবিতে ভালবাসার সুপারলেটিভ প্রতিশব্দ হলো ইশক। কিন্তু ইশক শব্দটি সাধারণত: প্রেম-প্রীতির সাথে জড়িয়ে আছে; বিধায় আল্লাহপাক তাঁর নবিকে সবচে’ বেশি ভালবাসলেও সেটা বোঝাবার জন্য ‘ইশক’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।

কোরআনে কারিমে যেখানেই ভালবাসার কথা বলতে চেয়েছেন, ইশক’র স্থলে ‘হুব্ব’ শব্দটি প্রয়োগ করেছেন।

‘সালাত’ অর্থ শারীরিক কসরত। কিন্তু যে কোনো শারীরিক কসরতকে ‘সালাত’ বলা হয় না। শব্দটি নামাজের জন্য খাস হয়ে আছে।

যে কোনো কাজের ইচ্ছাকেই হজ্জ বলা হয় না; যদিও হজ্জের শাব্দিক অর্থ ইচ্ছাপোষণ করা।

যে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকলেই সেটাকে সাওম বা রোজা বলা হয় না, যদিও ‘সাওম’ শব্দের অর্থ বিরত থাকা।

কেউ যদি কাউকে বলে, অমুক ছেলেটাকে নায়কের মতো লাগছে, তাহলে যার জন্য বলাহল সে শুনলে খুশি হবে, কারণ এটি একটি কমপ্লিমেন্ট।

কিন্তু একই কথা যদি কেউ নবিজির নামের সাথে ফিট করে ফেলে, তাহলে সেটা হবে বেয়াদবি। কোনো শব্দের অর্থ ঠিক থাকলেই সেটাকে নবিজির সাথে ফিট করে ফেলা যাবে না।

চার. 

গেল কয়েকদিন থেকে কয়েকজন বক্তার মাঝে সিক্স প্যাক নিয়ে জ্ঞান এবং ফতওয়ার আদান-প্রদান হচ্ছে। কেউ কাউকে কাফের বলছেন, কেউ কাউকে আধুনিকতা শেখাচ্ছেন। আমি ভাবছি কেউ কি নেই যে তাদেরকে আগে মানুষ হতে শেখাবে?

তাদেরকে একটু বুঝিয়ে বলবে, বাবারা! ওয়াজ করো। পয়সা কামাও। কোনো সমস্যা নাই। শুধু নবিজিকে নিয়ে ফাইজলামিটা করো না। এই দয়াটুকু করো।

পাঁচ.

মমতাজ গান গায়, বক্তারাও গান গান। সে ড্যান্স করে, বক্তারাও করেন। মমতাজ গায় গানের আসরে, বক্তারা গাচ্ছেন ওয়াজ মাহফিলে। সে গাচ্ছে গানের নিয়তে, বক্তারা 'নকলে কুফর কুফর নাবাশদ'র বাটপারি ডায়লগ দিয়ে।

নকলে কুফর কুফর নাবাশদের মানে বুঝি গানের সুর দিয়ে পুরো গান গেয়ে দেখানো? ফাইজলামীরও তো একটা সীমা থাকা দরকার। আরে বাবা, গান গাওয়ার এতই যদি শখ, যাত্রা পার্টিতে নাম লেখালেই হয়।

ছয়. 

ওয়াজ মানে দ্বীনের কথা বলা। ওয়াজ মানে কোরআন-হাদিসের আলোকে ইমান ও ইসলামের কথা বলা। ওয়াজ মানে নসিহত। কিন্ত আজকাল কিছু কিছু ওয়াইজের কারণে ওয়াইজ এবং কমেডিয়ানের মধ্যে পার্থক্য করা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফেইসবুক এবং ইউটিউবের কল্যানে এই কমেডিয়ান বক্তাদের হার আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। আমি জানি না এদের থেকে মুক্তির উপায় কী।

(লেখকরে ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)

অারএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ