শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আলিয়ার পাঠ্যবইয়ে সাহাবিদের প্রতি বিষোদ্গার; আলেমরা কী বলেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল ফাতাহ মামুন

আজকের এই সাজানো গোছানো ইসলামের নেপথ্যে আছে পনের শ’ বছর পেছনের রক্তাক্ত ইতিহাস। ইসলামের কান্ডারি রাসুলে আরাবি নিজে সে স্বীকৃতি দিয়েছেন অনেকবার অনেকভাবে। কখনো নাম ধরে কখনো সাধারণভাবে বলেছেন, ‘আমার সাহাবিরা না থাকলে ইসলামপ্রাসাদটি এত সুন্দর হত না।  সাহাবিদের রক্তে না ভিজলে ইসলাবৃক্ষ এত দ্রুত বীজ ফুটে মহিরুহ হতে পারত না।’

তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বজনস্বীকৃত সিদ্ধান্ত হলো, সাহাবিদের মন্দ বলা বারণ। তাছাড়া আল্লাহ যাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়ারাদু আনহু’, তাদের নিন্দা করতে পারে এমন সাহস কার আছে? কেইবা নবিজির নিষেধ ‘আমার সাহাবিদের গালি দিও না’ ডিঙিয়ে কটু কথা বলবে সাহাবিদের নিয়ে?

অবাক হলেও সত্যি! সাহাবিদের মন্দ বলা নিষেধ সত্ত্বেও বাংলাদেশ মাদারাসা শিক্ষাবোর্ডের দাখিল নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ইসলামের ইতিহাসে আমিরে মুয়াবিয়া এবং আমর ইবনে আস রা. সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করা হয়েছে।

আমিরে মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কে ‘স্বার্থন্বেষী, সম্পদলোভী, ক্ষমতালোভী, উচ্চাভিলাষী, স্বার্থপর, ঔদ্ধত, জঙ্গি মনোভাবাপন্ন, চক্রান্তকারী, পরিস্থিতি ঘোলাটেকারী, অপরাজনীতিবিদ, ভোজবাজ এবং নিকৃষ্টতম শঠ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

আমর ইবনে আস রা. সম্পর্কে বলা হয়েছে ছলচাতুরিকারী, চক্রান্তকারী, ধূর্ত, হঠকারী, বিশ্বাসঘাতক, এবং কপটের মত শব্দগুলো।

বইটি রচনা ও সংকলন করেছেন মুহাম্মদ আনোয়ার মাহমুদ এবং ইশরাত জাহান। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি কয়েকজন শিক্ষাবিদ ও আলেমের সঙ্গে।

বিএনপি-জামাত সরকারের সময় এসব বই সংকলন করা হয়েছে
ড. সাইয়েদ আব্দুল্লাহ আল মারূফ, সহযোগী অধ্যাপক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার জানামতে, আগে এমন ভুলভ্রান্তি ছিলো। আপনার কথায় বোঝা যাচ্ছে, এখনো এসব দৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য রয়েছে গেছে। আমি যখন মাদরাসা বোর্ডের সঙে যুক্তছিলাম, তখন এসব বিষয় নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছি।

বিএনপি-জামাত সরকারের সময় এসব বই সংকলন করা হয়েছে। ইসলাম-ইসলামী ইতিহাস জানে এমন কোনো লোকের মাধ্যমে বইগুলো রচনা করা হয়নি। তাছাড়া আলিয়া মাদরাসায় বই সম্পাদনায় অভিজ্ঞ লোকদের সংস্পর্শ খুব একটা নেই। ভিন্নধর্মের মানুষও আলিয়া মাদরাসার বই সম্পাদনা করে থাকে।

তো এখানে বড় ধরনের আকিদা বিধ্বংসী কথা থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিষয়টি নিয়ে দেশের আলেম-ওলামাদের সচেতন হওয়া জরুরি। সাংবাদিক বন্ধুদের এগিয়ে আসা সময়ের দাবি।

সাহাবিদের শানে বড় ধরণের গোস্তাখি ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী, অধ্যক্ষ, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদরাসা

বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে যেসব শব্দ আপনি উদ্ধৃত করেছেন, তা কোনোভাবেই সাহাবিদের সম্পর্কে ব্যবহার যোগ্য নয়। আলি ও মুয়াবিয়ার রা. এর সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তা আমরা ইজতিহাদি ভুল বলে থাকি। দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই এ ধরণের ভুল হয়ে গেছে।

কিন্তু তাই বলে ‘স্বার্থন্বেষী, সম্পদলোভী, ক্ষমতালোভী, উচ্চাভিলাষী, স্বার্থপর, ঔদ্ধত, জঙ্গি মনোভাবাপন্ন, চক্রান্তকারী, পরিস্থিতি ঘোলাটেকারী, অপরাজনীতিবিদ, ভোজবাজ এবং নিকৃষ্টতম শঠ’ শব্দ ব্যবহার কোনোভাবেই জায়েজ নই। সাহাবিদের শানে বড় ধরণের গোস্তাখি ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায় এসব সম্পর্কে!

বিষয়টি অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, অবিলম্বের এ ধরণের ইমানবিরোধী কথাবার্তা সংশোধন করুণ।

আমিরে মুয়াবিয়া রা. কাতেবে ওহির অন্তর্ভুক্ত জলিলে কদর সাহাবি
অধ্যাপক আবুল কাশেম গাজী, মুফাসসির, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা।

মাদরাসা বোর্ডের বই যারা সংকলন করে, তারা ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না। ফলে কার সম্পর্কে কেমন শব্দচয়ন করতে হবে এ সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও তাদের নেই। যদি থাকত তাহলে সাহাবিদের শানে এ ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করার দুঃসাহস দেখাতে পারত না।

আমিরে মুয়াবিয়া রা. কাতেবে ওহির অন্তর্ভুক্ত জলিলে কদর সাহাবি। আমর ইবনে আস রা.ও একজন সম্মানীত সাহাবি। তাদের সম্পর্কে সতর্ক-হুশিয়ার হয়ে মন্তব্য না করলে ইমান নিয়ে টানাপোড়ন বাঁধবে।

আমারা সাহাবিদের নিন্দা করতে পারি না। সর্বচ্চ এতটুকু বলতে পারি, ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে আমার মনে হয়ে ওমুক সাহাবি মজলুম ছিলেন অথবা অমুক সাহাবির পদক্ষেপ সঠিক ছিলো না।

এর বাইরে কাউকে গালিগালাজ করা, তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো উম্মাহর জন্য ভয়াবহ দুর্ভাগ্যের আলামত। আল্লাহতায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।

আরআর


সম্পর্কিত খবর