মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও আমাদের মানসিকতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বশির ইবনে জাফর
মালয়েশিয়া থেকে

‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ একথা অনস্বীকার্য জেনেই একটি জাতিকে এগিয়ে যাবার পথ খুঁজতে হয়। সেই জাতি সবচেয়ে বেশি উন্নত ও পরিণত যার আছে শিক্ষিত জনবল। তাই বিত্ত, মধ্যবিত্ত কিবা উচ্চবিত্ত সবাই-ই শিক্ষাকে জীবনযাত্রার প্রধান উপাত্ত বলে স্বীকার করে থাকেন এবং সে লক্ষ্যেই শিক্ষাজীবনে নিজেদের উন্নত ও সমৃদ্ধকরণ করার প্রয়াস রাখেন।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় উচ্চশিক্ষা রীতিমত সোনার হরিণে পরিণত হচ্ছে দিনে দিনে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি আসন পেতে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে লড়াই করতে হয় একেকজন শিক্ষার্থীকে। যে জয়ী হবে সেই পাবে উচ্চশিক্ষা নামক সোনার হরিণ। আর বাকি ৭৯ জন মেধাবীই স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট নিয়ে ধিকৃত হতে থাকবে সমাজের চোখে।

আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে যত্রতত্র গড়ে উঠা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। একটি ভবনের কিয়দাংশ ভাড়া নিয়েই গড়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়। মিডিয়ায় টাকা খরচ করে লোভনীয় সব বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের টেনে নেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। যাদের লক্ষ্যই হয় ব্যবসা।

ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি কোন ধরণের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই বিশ্বমানের। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে আমরা যার নাম দিয়েছি সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই বিশ্বের সেরা ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়। আর যত্রতত্র গড়ে উঠা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তো আরো করুণ।

দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির পেছনে প্রধানত দায়ী আমাদের অভিভাবক সমাজ। তারাই সফল বলে শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে যারা সরকারি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। অথচ সে কী পরিবেশে, কোথায়, কী মানের শিক্ষা পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখছে না একজন অভিভাবকও। তাদের সান্তনা শুধু এটাই যে তার সন্তান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

আর এই আত্মতৃপ্তির রেশ শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই। এমনকি আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখন এমন যে, কারো জীবনের লক্ষ্যই যেন শুধু পাবলিকে চান্স পাওয়া। তারা কখনো চিন্তা করে দেখে না এই দেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় ঠিক কী কারণে শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। তারা বুঝতে চেষ্টা করে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেই যে পড়াশোনায় উন্নতির শেখড়ে উঠে যায়নি।

খুব বেশি দূরে যেতে হয় না। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এমনকি এশিয়ার ইউরোপ খ্যাত দেশ মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা আর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বা শিক্ষা পদ্ধতি তুলনা করলে দেখা যায় আমাদের দেশ কতো এবং কেন পিছিয়ে আছে।

অভিভাবক কিবা শিক্ষার্থী যারাই এই পার্থক্যটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন তারাই পাড়ি জমাচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে উচ্চশিক্ষা অন্বেষায় এবং অভিভাবকরা পাঠাচ্ছেন তাদের সন্তানদের দূরদেশের কোন উন্নত শিক্ষালয়ে এবং এটাই উচিত।

অন্তত যারা মধ্যবিত্ত কিংবা দেশীয় কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা রাখে তারা চাইলে একই খরচে কখনো বা আরো কম খরচেও বিশ্বমানের শিক্ষালয় থেকে শিক্ষা অর্জন করে দেশের মেধাবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন এসেছে বলা যায় এই দিকটিতে। এখন অনেক শিক্ষার্থীই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে অনতিবিলম্বে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশের মাটিতে।

বাইরের দেশে যে শুধু উন্নত পরিবেশ ও পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হয় তাই না বরং সেখানে শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা সহপাঠিদের ভিন্ন ভিন্ন জীবনাচরণের সাথে তালমিলিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়। প্রত্যক্ষ করতে পারে নানা পরিবেশ মত ও পরিস্থিতিকে, যা চাকরি জীবনে বৈশ্বিক যোগাযোগ রক্ষায় এক বড় ভূমিকা রাখে।

শুধু তাই নয় আমাদের দেশ থেকে অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের বড় একটা কার্যকরী পার্থক্য হলো এরা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে নিজেদের যোগ্যতাকে করে তুলে পরিণত ও পরিপক্ক। ফলশ্রুতিতে কর্মজীবনে দেশের আর দশজন শিক্ষার্থীর তুলনায় এদের পার্থক্য থাকে চোখে পড়ার মতো।

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে হঠাৎ করে বিশ্বমানের হয়ে যাবে তা নয়, তবে শিক্ষার্থীরা চাইলে বহিঃবিশ্বের উন্নত শিক্ষায় নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে সুসংগঠিত করে দেশের সেবায় ও দেশের উন্নয়নে অরো বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

এজন্য সর্বাগ্রে দরকার অভিভাবকদের উন্নত ও দৃঢ় মানসিকতা এবং সর্বপরি সরকারি ভাবেও দরকার শিক্ষার্থীদের বাইরে পড়াশোনার সুযোগ গড়ে দেয়া। কেননা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য না পেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে দেশের বাইরে পড়াশোনা নিয়ে অনিহা ও কখনো কখনো ভীতির সঞ্চার হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, মাশা ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া (প্রকৌশল বিভাগ)

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ