বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


বেইনসাফের দেয়াল ভেঙ্গে দিতে হবে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খতিব তাজুল ইসলাম
যুক্তরাজ্য থেকে

বৃহস্পতিবার একটু বেশিই বিজি থাকি। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর বিকাল ৭টা থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত থাকে গরীব এন্ড এতীম ফান্ডের নিয়মিত আপীল। ঘরে এসে বিছানায় যেতে যেতে আজকের ফান্ডরেইজিংগের অনুভূতিটা লিখতে মন চাইলো।

ড্রাইভ করে করে যাওয়ার পথে আমার ক্লাসমেট একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। বললেন, কোথায় যাচ্ছো? যাচ্ছি ফান্ডরেইজিং আপীলে। ওহ সালেহ হামিদীর ওটায়। সে তো এখন এই নামে ভেসেছে। কামাই তো কম হচ্ছে না। মনে হয় লয়ারিতে হচ্ছে না।

বল্লাম- কামাই অবশ্যই তো হচ্ছে। কিন্তু যাদের জন্য এই কামাই ও অর্জন এই কাম-কাজ তো আজকাল কমিউনিষ্ট স্যাকুলাররা করে বেশি। গরিব অনাথ অসহায় আর্তমানবতার জন্য যদি সালেহ হামিদী না করতো না কদম উঠাতো তাহলে আমাদের আলেম সমজাজের মুখ রক্ষা হতো না।

আমরা তো করি আমাদের পেটের ফিকিরের জন্য। মসজিদ মাদরাসার নামে নিজেদের আখের গুছাই। কিন্তু সমাজের অবহেলিত বঞ্চিত মানবতার দোয়ারে কে কড়া নাড়বে? কারা বিধবাদের আশ্রয় দিবে? কারা এতিমের মাথায় হাত বুলাবে? আজ সালেহ হামিদী আমাদের ইজ্জত রক্ষার পথ বের করেছেন। সকলে মিলে উচিত তাকে সাহস যোগানো অন্তত সাহায্য যদি করতে নাইবা পারি। আমার ক্লাসমেট অবশ্য পরে নিজের ভুল বুঝে ধন্যবাদ দিলেন।

সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি বালিকা। ৬ বছরের মেয়েটি মায়ের পাশে দাঁড়ানো। মা অঝুরে কাঁদছেন। বালিকা নির্বাক। টাকা নেই সামর্থ নেই চিকিতসা করাবেন কেমনে? সামান্য অসুখ থেকে এখন মারাত্মক অবস্থা। পেশাব এবং পাখানার রাস্তা সমান হয়ে অবিরত রক্তক্ষরণ। ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লাগে।

ওদের ঘরের ছবি দেখে আমি হতবাক। আফ্রিকার জংগলের দেশেও হয়তো আরেকটু ভাল অবস্থায় মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশে এমন একটি দেশের নাম যেখানে সবকিছুকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখা হয়।

একটি গ্রামের ১০টি বাড়ির ৫টি পাকা দালান। ২টি টিনের আর বাকি তিনটি ঘরকে ঘর বলা যাবেনা। ঝুপড়ি বলতে পারেন। যাদের পাকা দালান তারা গোটা গ্রামকে পাকা করে দিতে পারে। কিন্তু সে দিবে না। বা প্রয়োজন মনে করে না।

পাশের ঘরের কেউ বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে। সামর্থ্যবানরা ভাবে ওটা তার তকদীর। গরীব অসহায়রা ভাবে এটা আমার নসীব। উঁচা ও নীচের যে ফারাক বা দেয়াল খাঁড়া হয়েছে নিষ্ঠুর নির্মমতাকেও হার মানাবে। এরূপ মানসিকতা কেন? আলেম আর জালেম প্রায় সকলেই সমান।

তালেবানের আমলে মোল্লা উমর যখন শুকনা রুটি চিবিয়ে চিবিয়ে খেতেন তখন তাকে বলা হলো যে আপনি ভুনা গোশত দিয়ে খেতে পারেন। তখন তিনি বললেন, যেদিন গোটা আফগানিস্তানের জনগণ ভুনা গোশত দিয়ে রুটি খাবে সেদিন আমি খাবো। মোল্লা উমরের উদাহরণ আমি নিজেই সৃষ্টি করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা না?

সাম্য ও ইনসাফের ধর্ম ইসলামের অনুসারীদের মাঝে অসাম্যতা বিরাজমান। বেইনসাফ চলমান তা যেন জাহেলিয়াতকেও হার মানায়। কিন্তু বৃটেনের মুসলমানরা সেই ধারাকে পাল্টে দিচ্ছেন। সুখে শান্তিতে থেকেও গরিবদের ভুলে যানানি তারা। দূর প্রাবাসে থেকেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য রয়েছে তাদের অকৃত্রিম ভালবাসা। প্রায় ছয় লক্ষ টাকার ওয়াদা হয়েছে। এই বালিকাটির এখন চিকিৎসা হবে, হবে তার ঘরের ব্যবস্থাও ইনশাআল্লাহ।

আমি যাদি বৃটেনে না আসতাম তাহলে চ্যারিটি কাকে বলে চিন্তামও না জানতামও না। আমরা শুধু জানি যাকাত আর ফিতরা বন্টনের কথা। জানি বিপদে কেউ পড়লে একটু সহায়তা করা। ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দেয়া। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম চ্যারেটি একটি আলাদা জগত।

গোটা দেশকে তারা চ্যারিটেবল দেশ বানিয়েছে। অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা সবার জন্য। যাদের ভাল ইনকাম তারা টেক্স দেবে। কমজুরদের মাঝে সেই টেক্স বন্টন করে দেবে। যাকে আমরা বেনিফিট বলি।

বৃটেনের সমাজ ব্যবস্থার মাঝে এমন একটা পলিসি মেন্টেইন করা হয় যে যাই করুক তার কাজের একটা ভ্যালু থাকে। আমাদের দেশে ভাবা হয় যারা সরকারি চাকুরেজীবী তারা শুধু পেনশন পাবে টেক্স দেবে।

কিন্তু না এখানে সকলের জন্য পেনশন স্কীম আছে। বেসরকারি যে কোন ব্যবসা বাণিজ্য হোক বা ধর্মীয় কাজ ইমামতি শিক্ষকতা প্রাইভেট টিউশন যে যেভাবেই ইনকাম করুক তার হিসাব আছে। বেশি ইনকাম হলে টেক্স দেবেন। কম হলে সরকার বেনিফিটের মাধ্যমে পূরণ করে দেবে। সেজন্য সবার কাজের একটা মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু সেটা বুঝতে মনে হয় আমাদের দেশের সরকার কিংবা জনগণের আরো একশো বছর লেগে যাবে।

সরকার চ্যারিটিকে উৎসাহিত করে। চ্যারিটির কাজের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়। আপনি একশ পাউন্ড কালেকশন করলে সরকার গিফট এইড হিসাবে আরো ২৫% করে দেবে। খৃস্টানদের চ্যারিটির কথা শোনলে রূপকথাকেও হার মানাবে। শত শত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বিলিয়নারদের অনুদানে চলে।

বৃটেনের অধিকাংশ চার্চ বা গির্জায় আশ্রয়হীনদের জন্য খাবার দাবার ও শিক্ষার আয়োজন করে থাকে। তাদের দেখবাল ঐসমস্ত গির্জার অধিপতিরা করে। জানের ওরা কারা আসে? সোমালিয়া ইরাক সিরিয়া আর লিবিয়া সহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের অসহায় নাগরিকরা এসে এসমস্ত গির্জার হাওলা হয়। তারা সেখানে এসে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পায়। আস্তে আস্তে ধর্মের বাণীও তাদের শোনানো হয়। এভাবে ধর্মান্তরিত করণের একটা প্রক্রিয়া সেখানে কাজ করে।

প্রশ্ন হলো আমাদের ইসলামের নামের মসজিদের দরজা কি অসহায়দের জন্য আমরা খোলা রেখেছি? আপনি আমি এমন কোন ধার্মিক হলাম যে আমার সামনে ফুটপাতে অসহায় যুবতি মেয়ে কাতরাচ্ছে। না আছে ঘর না আছে খাবার না আছে দু‘পাট্টা সম্ভ্রম ঢাকার জন্য।

অথচ শত শত মুসলমান দিনে দুপুরে তাদের চিড়িয়া খানার অভিনব জানোয়ার দেখে দেখে চলে যাচ্ছে। রাতের বেলা হয়তো অনেক সাধুগণ পতিতা তাড়াতে এসে নামবেন। ভাল কথা তাড়ানোর দরকার। কিন্তু তাকে তাড়িয়ে কোথায় নিয়ে দিচ্ছেন? আরেক গলির মাথায়! চোর ডাকাত পতিতা মাদক সেবিদের জন্য সংশোধনাগারের দরকার না?

সরকার সবকিছু করবে। সরকার কি করছে? ক্রস ফায়ারে দিচ্ছে। আগে দিতো রাজনৈতি প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্রসফায়ারে পরে মাদক সেবিদের এখন দিচ্ছে ধর্ষকদের। ক্রস ফায়ার কি সমাধান? মোটেই না। অন্যায় দিয়ে আরেক অন্যায় থামানো যায় না।

সমাজে শান্তি শৃংখলার জন্য ১ম প্রয়োজন আইনের শাসন। শাসন হতে হবে সমাধানমূলক। জুলুম বর্বরতার শাসন দিয়ে সমাধান কখনো সম্ভব না। সরকার দিয়ে জনগণ জনগণ দিয়ে সরকার। কে ভাল হতে হবে আগে?

দুনোজনকেই ভাল হওয়া চাই। ভাল সরকারের জন্য ভাল পরিচালক ও ভাল সুনাগরিকের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের উভয় জাগাটা খালি।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ