বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

অনিশ্চয়তার পথে তাবলিগ প্রতিনিধি দলের দেওবন্দ যাত্রা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আফফান: ভিসা জটিলতা, পাকিস্থান আলেমদের চিঠি, দেওবন্দের সর্বশেষ  নোটিশ  ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ তাবলিগ প্রতিনিধি দলের দেওবন্দ যাওয়া, না যাওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আজ সোমবার ( ২১ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তাবলিগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেওবন্দ যাওয়ার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে শীর্ষ  আলেম-উলামা এবং তাবলিগের উভয়ধারার মুরব্বিরা উপস্থিত থাকবেন।

গত ১৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের উচ্চতর প্রতিনিধি টিম দারুল উলুম দেওবন্দ সফরের কথা ছিল। যা এখনও যাওয়া সম্ভব হয়নি।

দেওবন্দ যাওয়ার উচ্চতর প্রতিনিধি টিমে আছেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, ধর্মসচিব মুহা. আনিছুর রহমান, এডিশনাল ডিআউজি মনিরুজ্জামান, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, মাওলানা রবিউল হক,  সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা মাহফুজুল হক।

তাবলিগের সঙ্কট নিরসনে গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখান থেকে ১৫ জানুয়ারি প্রতিনিধি দলকে দেওবন্দ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরলে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করার কথা রয়েছে।

পাকিস্থানের আলেমদের চিঠি! 

পাকিস্তানের খ্যাতিমান ২৬ জন আলেম ভারতের তাবলিগের প্রধান মারকাজ নিজামুদ্দিন, পাকিস্তানের রায়েবেন্ড মারকাজ, বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মুরব্বিদের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠিয়েছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমদের স্বাক্ষরিত এ চিঠি তিনটি মারকাজে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তাবলিগের চলমান সংকট নিরসনে কার্যত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্যই এ চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে উল্লেখ্য- এখন আমরা পাকিস্তানের আলেমগণ ‘আদদিন আন্নাসিহা’ এর উপর আমল করে তাবলিগের বর্তমান দুটি গ্রুপের মুরব্বিদের প্রতি আমাদের আবেদন, আল্লাহ ও তার রাসুল সা. এর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাবলিগের এ বিভক্তি যে কোনো মূল্যে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।

আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী এ বিভক্তি নিরসের পদ্ধতি এভাবে হতে পারে, তাবলিগের উভয় দলের মুরব্বিগণ সব মত আর দাবিগুলোকে এক পাশে রেখে আমরা একটি জায়গায় বসি। এক ও নেক হতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলেই এর সমাধান সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।

হজরত হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ. বলেন, ঐক্যবদ্ধ হতে মৌলিকভাবে দু’টি জিনিস দরকার। এক. ইসার- একে অপরকে প্রধান্য দেয়া। দুই. তাওয়াজু- বিনয়, নম্রতা। আর সততা একনিষ্ঠতা সব কাজের মূল। আমরা মনে করি এ তিনটি গুন হৃদয়ে রেখে খোলামেলা আলোচনা করলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন।

আমাদের কাছে তাবলিগের জন্য আমির ও মাশওয়ারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমির ও শুরা সদস্য নির্বাচনও মাশওয়ারা বা পরামর্শমত করা উচিৎ। শরিয়তের এ মূলনীতিগুলো সামনে রেখে তাবলিগের উভয় দল একনিষ্ঠতা, একে অপরকে প্রধান্য দেয়া, বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমে যদি ফায়সালা করতে চায় তাহলে আল্লাহর মেহেরবানিতে ঐক্যের পথ অবশ্যই বের হয়ে আসবে।

এ ঐক্যের পথে আমাদের কোনো সাহায্য-সহযোগিতার যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা মন-প্রাণ দিয়ে আমরা চেষ্টা করবো।

এ মজলিসে আমাদের এ কথা সামনে রেখে এগুতে হবে, যদি আমাদের জীবন দিয়ে হলেও ঐক্য সম্ভব হয়, তাহলে আমরা সেটাই করবো। আর যদি উভয় দল নিজেরদের জেদে অটল থাকে তাহলে মনে রাখতে হবে, তাবলিগের মাধ্যমে এ পর্যন্ত উম্মতের যে লাভ হয়েছে এ অনৈক্য এর চেয়ে বেশি উম্মতের ক্ষতি করবে। সামনে আমাদের কোনো পথও আর খোলা থাকবে না। তাবলিগের কঠিন দুর্দিনেরও আশংকা দেখ দিবে এতে।

অমাাদের মূল আবেদন হলো ইখলাস, ইসার, লিল্লাহিয়্যত ও তাওয়াজুর ভিত্তিতে উভয় দল সংকট নিরসনে অবশ্যই কোনো না কোনো রাস্তা বের করবেন। কিন্তু যতক্ষণ না উভয় দলের কোনো সমন্বয় না হয়, আমরা আশা করবো উভয় দল তাদের নিজেদের জায়গায় নিজেদের মত করে দীনের কাজ করে যাবে। এক দল অন্য দলের রাস্তায় বিরোধ করতে যাবে না।

উভয় দলের মুরব্বিদের প্রতি আমাদের আবেদন তারা যেনো তাদের অনুসারিদের খুব গুরুত্বের সঙ্গে এ কথা বলে দেয়, তারা অন্য দলের সম্পর্কে দোয়া ছাড়া আর কোনো মন্তব্য না করে। বিশেষ করে ঝগড়া সৃষ্টি করে এমন কোনো কথা বা আলোচনা যেনো তারা না করে।

কোনো জায়গায় যদি কোনো দলের আধিক্য বেশি হয়, বা তাদের মারকাজ নির্মাণ করে সেখানে অন্য দল জোড় করে ঢুকতে চেষ্টা থেকে বিরত থাকবে। আর যদি এমনই বিরোধ চলতে থাকে তাহলে দাওয়াতের মেহনত পৃথিবীর মানুষের কাছে জঘণ্যতম হয়ে ওঠবে।

মানুষ হেদায়াতের দিকে আসবেই না বরং এর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টি হবে। আর আমাদের ঐক্য নষ্ট করে ইসলামকে মিটিয়ে দিতেই চায় ইসলাম বিদ্বেষীরা।

প্রিয় মুরব্বিয়ে দীন, দয়া করে আমাদের আবেদনগুলো দীনের হেদায়ত ও ইসলামের উদারতা দিয়ে চিন্তা করে দেখবেন। দয়া করে উম্মতের এ টালমাটাল কাসতি আরো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবেন না। আল্লাহর দিকে তাকিয়ে উম্মত এ কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করবেন।

আমরা পাকিস্তানের উলামায়ে কেরাম বিশ্বের আলেমদের কাছেও আবেদন করছি আপনারা এমন বয়ান থেকে বিরত থাকুন, যাতে দু’দলের কোনো দলের পক্ষে যায়। আপনারা নির্দলীয় অবস্থায় থাকলে আশা করা যায় খুব দ্রুত এ সমস্যা থেকে আমাদের উত্তরণ সম্ভব হবে।

দেওবন্দের সর্বশেষ নোটিশ

সম্প্রতি দারুল উলুম দেওবন্দ ছাত্র-শিক্ষক এবং দেওবন্দের অভ্যন্তরিন বিষয়ে কঠোরে হুশিয়ারি বার্তা দিয়েছে।

একটি বিশেষ নোটিশে বলেছে-প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ! দ্বীনের প্রচার েএবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ আমাদের ওপর আবশ্যকীয় দায়িত্ব!

তবে তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরিন কোন্দল থেকে মুক্ত থাকার জন্য দেওবন্দের দায়িত্বশীলবৃন্দ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, দেওবন্দের প্রতিটি সদস্য তাবলিগের কোন গ্রুপের সঙ্গেই সর্ম্পক রাখবে না। এজন্য দেওবন্দের ছাত্র-শিক্ষক ভেতরে বাইরে তাবলিগের কোন হট্রগোলে অংশ নিবে না।

পাকিস্থানের আলেমদের উভয়গ্রুপকে মিলানোর মানসিকতা এবং তাবলিগের কোন কাজে দেওবন্দের অংশগ্রহণ না করা এবং  দেওবন্দ যাওয়া বাংলাদেশী আলেমদের কারও কারও ভিসা জটিলতার কারণে অনেকটাই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আজ  সোমবার ( ২১ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তাবলিগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেওবন্দ যাওয়ার  না যাওয়ার  বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ