শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


যে কারণে ইসলামের ছায়া তলে মুষ্ঠিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম>

একজন মুসলিম মুষ্ঠিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলি। বিশ্ব বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা। জন্মলগ্ন থেকে তিনি এ পরিচয়ে বেড়ে ওঠেননি। ১৭ জানুয়ারি ১৯৪২ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তখন তার নাম ছিল ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে। বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড পেইন্টার ক্যাসিয়াস সিনিয়র ও গৃহিনী ওডেসা দম্পতির প্রথম ছেলে ছিলেন তিনি।

কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে বিশ্ববিখ্যাত বক্সার হওয়া সত্ত্বেও তিনি বর্ণবৈষম্যের শিকার হন অনেকবার। বসতে দেয়া হয়নি শ্বেতাঙ্গদের হোটেলে, দেয়া হয়নি খাবার। সবকিছু মিলিয়ে এক সময় ক্যাসিয়াস জুনিয়র যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা ও শ্বেতাঙ্গদের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। খুঁজতে থাকেন এ বৈষম্য থেকে মুক্তির পথ।

Mohammad-Ali-Inner

১৯৬৪ সালের কথা। এলিজা মুহাম্মদ ও ম্যালকম এক্সের নেতৃত্বাধীন ‘নেশন অব ইসলাম’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরেই ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হন তিনি। তিনি জানতে পারেন ইসলামে নেই কোনো বর্ণ-বৈষম্যের ভেদাভেদ। এক সময় ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। নাম ধারণ করেন ‘মুহাম্মদ আলি’।

ইসলাম গ্রহণের পর জানতে পারেন ‘নেশন অব ইসলাম’ যদিও ইসলাম নামটি ধারণ করেছেন, তথাপিও তারা শুধুমাত্র ইসলাম নিয়েই কাজ করেন না বরং তারা আরেক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যেখানে ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্মকে সম্বন্বয় করে আরেক ধর্মমত প্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন তারা।

অবশেষে ১৯৭৫ সনে তিনি ‘নেশন অব ইসলাম’-এর সংস্পর্শ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করে সুন্নি মুসলিম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। শুরু করেন পুরোপুরি ধর্মীয় জীবন-যাপন। এরপর থেকেই নিজেকে প্রকৃত মুসলিম দাবি করেন।

Mohammad-Ali
তার দেখাদেখি তারই ছোট ভাই রুডলফও ‘রহমান আলি’ নাম ধারণ করে মুসলিম হয়ে যান। তার মেয়ে লায়লা আলিও পরবর্তীতে বাপের পেশায় সুনাম অর্জন করেন।

ঐ সময় তিনি বলতেন, ‘আমাকে যদি ‘ইসলাম এবং বক্সিং’ এ দুটোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়; তবে আমি ইসলামকেই বেছে নেবো। তিনি আমৃত্যু মানুষের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠা ও ভেদাভেদ নির্মূলে শান্তির লক্ষ্যে কাজ করেগেছেন।

৭৪ বছর বয়সী এ বিশ্ব বিখ্যাত বক্সার ২০০৫ সাল থেকে জীবনের বাকি সময় তিনি সুফিবাদ চর্চা করে কাটিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, বিখ্যাত ও জনপ্রিয় মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা লুইসভিলে। ইসলাম ধর্মালম্বী মুহাম্মদ আলী নিজ ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে গর্বের সঙ্গে কথা বলতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘এখন আমি যাই করি না কেন,আল্লাহ তায়ালাকে খুশিকে করার জন্যই করি।’

১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলাতে মুহাম্মদ আলী জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৭৫ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর তিনি আমেরিকান মুসলিমদের আদর্শ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

বিদ্যুতের মতো গতি, অবিশ্বাস্য ফুটওয়ার্ক এবং অকল্পনীয় শারীরিক নমনীয়তায় কিংবদন্তি এই বক্সার মোট ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতেই জিতেছেন। ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৩৭টি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে নকআউট করে জিতেছেন। ক্রীড়া জীবনের শুরুর দিকেই কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

মুহাম্মদ আলী ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে। তার নামে পল্টনের বক্সিং স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়।

১৯৮০ সালে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন। ৩২ বছর এ রোগে ভোগার পর ২০১৬ সালের ৩ জুন ৭৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

শুক্রবার শেষ রাতের দিকে অ্যারিজোনার ফোনিক্স এরিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। কামনা করি তার রূহের মাগফিরাত। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের উত্তম জীবন দান করুন। সূত্র: সিএনএন

-এটি


সম্পর্কিত খবর