শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


আল্লামা শফীর বক্তব্য, নারীর নিরাপত্তা ও সহশিক্ষা প্রসঙ্গে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ত্বরিকুল ইসলাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য বা পক্ষপাতিত্ব ইসলাম সমর্থন করে না।

পবিত্র কুরআনে সূরা আল-জুমারে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘বলো, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান?’ (আয়াত: ৯)। এখানে জানা না-জানার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনো বিভেদ আল্লাহ করেননি।

সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে ছেলেমেয়ে উভয়েরই শিক্ষার্জন অতীব জরুরি। রাসূল সা. বলেছেন, ‘জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ।’ সুতরাং, নারীশিক্ষার প্রতি অবহেলার কোনো অবকাশ নেই। ইসলামী জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে মুসলিম নারী স্কলারদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা বিস্মৃত হয়ে গেছে।

সিএসসিএস-এর একটা অনুবাদ লেখায় জানতে পারলাম, ড. মোহাম্মদ আকরাম নদভী মুসলিম নারী স্কলারদের জীবনী লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে কমপক্ষে ৮ হাজার নারী স্কলারের খোঁজ পেয়েছেন! অথচ তারা আজ একেবারেই বিস্মৃত হয়ে গেছেন!!

এই মুসলিম নারী স্কলারদের অনেকেই বৃদ্ধ বয়সে পুরুষদেরও হাদিসের দরস ও ইলম শিক্ষা দিতেন, নিশ্চয়ই পর্দা বজায় রেখেই। এটার সাথে আবার সহশিক্ষাকে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। সহশিক্ষা আর কোনো বয়স্কা মুসলিম নারী স্কলার কর্তৃক পুরুষদের পাঠদান এক বিষয় না।

সহশিক্ষার ধারণা এসেছে পাশ্চাত্য থেকে। উনিশ শতক পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সাধারণভাবে সহশিক্ষার প্রচলন ছিল না। যদিও ১৮১৮ সালে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড রাজ্যে ‘ডলার একাডেমি’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়, যেখানে আবাসিক-অনাবাসিক মিলে ছেলেমেয়েদের সহশিক্ষায় পড়াশোনা করানো হতো। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বের সবচে পুরনো কো-এডুকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়।

সহশিক্ষাব্যবস্থা বিস্তৃত হয় বিশ শতকে প্রধানত ওয়েস্টার্ন ইউরোপের দেশগুলোতে। অথচ এই ভারতীয় উপমহাদেশে একদা সহশিক্ষার সংস্কৃতি ছিল না, কিন্তু দখলদার ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা এসে তথাকথিত আধুনিকতার নামে আমাদেরকে মন-মানসিকতায় ইংরেজ বানানোর উদ্দেশ্যে এখানকার স্বকীয় মূল্যবোধ ও শিক্ষাব্যবস্থা আমূল বদলে দেয়।

এর প্রভাব এতই সুদূরপ্রসারী যে, আজও নানাক্ষেত্রে আমাদের দেশের তথাকথিত আধুনিক প্রগতিশীল মুক্তমনাদের মনে-মগজে ঔপনিবেশিক গোলামির ছাপ বিদ্যমান।

তবে আমাদের স্ট্যাটাস-কো বিবেচনায় নারীর নিরাপত্তা ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষার স্বার্থে সহশিক্ষা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলাম সমর্থন করে না। কারণ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এসব অবাধ পরিবেশে কিশোরী ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়না। ফলে ইভটিজিং, ধর্ষণ, প্রতারণা, যিনা-ব্যভিচার ও অমানবিকভাবে নির্বিচার ভ্রুণহত্যা ইত্যাদি অহরহ ঘটছে এবং নারীরাই এসবের চূড়ান্ত ভুক্তভোগী।

কখনো কোনো ছাত্র দ্বারা, আবার কখনো স্বয়ং শিক্ষকের হাতেই অসংখ্য ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। পত্রপত্রিকায় এসব খবর আমরা হরহামেশা পেয়ে থাকি।

আমাদের বর্তমান সহশিক্ষাভিত্তিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য যথার্থ নয় বলে ওলামায়ে কেরাম মনে করেন। সম্ভবত সেই কনসার্ন থেকেই নারীর নিরাপত্তার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লামা শফী সাহেব মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে বারণ করেছেন।

কিন্তু তিনি তো বালিকা স্কুল বা মহিলা কলেজে মেয়েদের পাঠাতে নিষেধ করেননি। ওনার পুরো বক্তব্যটা নারীশিক্ষার প্রশ্নে নয়, বরং নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নে।

সুতরাং, জেনারেল কো-এডুকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি। যদিও বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এক্ষেত্রে ইসলামের সাজেশন হলো- কো-এডুকেশনের পরিবর্তে ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক পৃথক ক্লাসরুম বা বালিকা/মহিলা শাখার ব্যবস্থা করে নারীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার্জনের পরিবেশ তৈরি করা। তাহলে ছাত্র বা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব হবে আশা করি।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের মহিলা কওমি মাদরাসাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৩ লক্ষ ছাত্রী পড়াশোনা করছেন বলে জানা যায়। সুতরাং, নারীশিক্ষার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামদের নিয়ে এত ঢালাও হতাশার কারণ দেখি না।

আরআর


সম্পর্কিত খবর