শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

আড়াই কোটি নতুন ভোটারের প্রতি আহ্বান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত এবং প্রাচীন একটা ‘সংস্কৃতি’ আছে- যে কোনো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা। অর্থাৎ আল্লাহর নামে আরম্ভ করা।

আরেকটু ভেঙ্গে বলা যেতে পারে- আমারা বাঙ্গালী মুসলমানরা যে কোনো কাজ ‘ভালো’ দিয়ে শুরু করতে পছন্দ করি। এ ঐতিহ্য, অভ্যাস বা প্রথা বহু পুরনো। অনেক বছর আগে থেকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এ ভাবেই গড়ে উঠেছে।

শুধু বাঙ্গালী মুসলমানের কথা বলি কেনো- অন্যান্য ধর্মানুসারী বাংলাদেশিরাও একই ভাবে অভ্যস্ত। তারা তাদের ধর্মের নামে, ইশ্বর বা দেবদেবীর নামে সব ভালো কাজের সূচনা করেন।

মজার বেপার হলো যারা ধর্ম মানেন না বা পালন করেন না তারাও এই নিয়মের বাইরে যেতে পারেন নিই। তারা হয়তো সরাসরি সৃষ্টিকর্তা বা কোনো দেবদেবীর নাম উচ্চারণ করেন না, কিন্তু ‘ভালো’ দিয়ে, ‘উত্তম’ দিয়ে, ‘মসরিণ’ দিয়ে শুরু করতে পছন্দ করেন।

অর্থাৎ ‘ভালো’ দিয়ে শুরু করা, আল্লাহ খোদার নামে আরম্ভ করা-আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির একটাসার্বজনীন রুপ।

আমি মনে করি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ‘ভালো’ দিয়ে শুরু করা বা আল্লাহর নামে শুরু করার যে প্রাক্টিস দীর্ঘ কাল থেকে আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হয়ে উঠেছে তা রক্ষাকরা, ধরে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

এর অনেক ভালো দিক রয়েছে। প্রধান দুটি দিক হলো- ধর্মপালন এবং শুদ্ধ সংস্কৃতি লালন।


একাদশ জাতীয় নির্বাচন দোরগোড়ায় চলে এসেছে। বহু প্রতিক্ষার নির্বাচন। সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তরুণ যুবকরা জীবনের প্রথম ভোট প্রদান করবে, পছন্দের নেতা নির্বাচন করবে- এ এক অন্যরকম ফিলিংস, অন্যরকম রোমাঞ্চ। যে জন্য দেশের প্রায় আড়াই কোটি যুবককে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ দশ বছর।

জাতীগতভাবে আমরা অনেকটা অভাগা। দেশ স্বাধীনের এতগুলো বছরেও আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধুতি তৈরি করতে পারিনি। কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, আমরা একটা টেকসই নির্বাচন পদ্ধতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু হলো না। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রে কেয়ারটেকার পদ্ধুতি এখন বিলুপ্ত।

সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হলো- যে ভোটাধিকারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান লড়াই করেছেন, স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, সেই পরিবারের হাতেই আজ বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার বিপন্ন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি একটি প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। অথচ একবারও ভাবেন নি- প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখ নতুন ভোটার (২০১৪) যারা জীবনের প্রথম ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করে ছিল, তারা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে চেয়েছিল। দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চেয়েছিল।

কতো আশা নিয়ে, বুকের মধ্যে অন্যরকম এক রোমাঞ্চ নিয়ে তারা ভোট প্রদান করতে চেয়েছিল, কিন্তু হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা হতে দেননি। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি কেয়ারকেটার সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করেন এবং প্রহসনের নির্বাচন করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেন।

২০১৪ সালে ১ কোটি ৩৭ লাখ (প্রায়) নতুন ভোটার ছিল, যারা সে সময়ে জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারেনি। এবার যোগ হয়েছে আরো ১ কোটি ২৩ লাখ নতুন ভোটার। অর্থাৎ একাদশ সাধারণ নির্বাচনে দেশের প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার ভোট প্রদান করবে।

আমার আহবান মূলত এই আড়াই কোটি নতুন ভোটারের কাছে- জীবনের প্রথম ভোট ‘ভালো’ দিয়ে শুরু হোক। আল্লাহর নামে আরম্ভ হোক।

আমারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সকল কাজ যেমন ‘ভালো’ দিয়ে শুরু করি, সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করি, দেশের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাই হোক। জীবনের প্রথম ভোট কোনো অপাত্রে নয়, দুর্নীতি অনিয়ম সন্ত্রাস বা মাদকের প্রশ্রয়দাতাকে নয়, জীবনের প্রথম ভোট দিতে হবে আল্লাহর নামে, ইসলামের পক্ষে। জীবনের প্রথম ভোটপর্ব শুরু করতে হবে ‘ভালো’ দিয়ে।

যেমন আমাদের নেতানেত্রীরা ভোটপর্বের সূচনা করতে চেষ্টা করেন ‘ভালো’ দিয়ে। তারা কেউ মাজার জিয়াতর করে প্রচারে নামেন, কেউ মাথায় টুপি দেন, হিজাব পরেন, মসজিদ মাদরাসায় দান ছদকা বাড়িয়ে দেন, গরিব দুঃখিকে সাহায্য করেন, ইত্যাদি।

অর্থাৎ মূল উদ্দেশ্য ভোটপ্রাপ্তি হলেও ভোট চাওয়ার কাজটা তারা শুরু করেন ‘ভালো’ দিয়ে।


সরকার গঠনের জন্য সম্ভাব্য বড় দুই দল বা জোটের শাসন আমরা সবাই দেখেছি। তারা এমন কোনো ভালো কাজ করেনি যে তরুণ যুবকরা জীবনের প্রথম ভোট তাদের দিয়ে সূচনা করতে পারে।

সুতরাং রাস্তা একটাই খোলা- জীবনের প্রথম ভোট আল্লাহর নামে শুরু করতে হবে। যারা ইসলাম নিয়ে কাজ করে, ইসলামি আদর্শের রাজনীতি করে, জীবনের প্রথম ভোট তাদের দিয়েই শুরু করতে হবে। এতে আমাদের ধর্ম এবং স্বদেশি সংস্কৃতি চর্চা দুটোই হবে।

প্রশ্ন উঠতে পারে ইসলামি দল তো অনেক আছে, অনেকেই ইসলামের পক্ষে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, আমরা কাকে দিয়ে সূচনা করবো?

আমি ব্যক্তিগত ভাবে সকল ইসলামি দলকে সমর্থন করি। কারো প্রতি বিশেষ কোনো বিদ্বেষ নেই। যারা যতোটুকু ইসলামের পক্ষে কাজ করছে, আমি মনে করি তারা ততটুকুই ভালো কাজ করছে।

সুতরাং অযথা তাদের নিন্দা করার অধিকার আমার নেই। বরং ভেদাভেদ ভুলে, মতের অমিল বা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তারা যেনো কাজ করতে পারে, পথ চলতে পারেই এটাই আমার প্রত্যাশা।

আমি মনে করি জীবনের প্রথম ভোট ইসলামপন্থী যে কোনো দলকে বা দলের প্রার্থীকে দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তবে যেসব ইসলামি দল নিজেদের সংগঠন, আদর্শ এবং অস্তিত্ব বড় দুই দলে বা জোটে বিলিন করে ভোট করছে তাদেরকে স্বতন্ত্র কোনো ইসলামি দল বা ইসলামের পক্ষে প্রার্থী ভাবার আপাতত কোনো সুযোগ নেই।

কারণ তারা নির্বাচিত হলে বড় দলগুলো ক্ষমতায় যাবে, তাদের আদর্শ বাস্তবায়ন হবে। এতে ইসলামের মৌলিক কোনো উপকারের সম্ভবনা নেই, বরং মানুষ বিভ্রান্ত হয়।

সুতরাং টগবগে নতুন ভোটারদেই খুঁজে বের করতে হবে তারা কাকে দিয়ে বা কোনো দলকে দিয়ে দেশের স্বার্থে, জাতীর স্বার্থে জীবনের প্রথম ভোটের সূচনা করবে।

আমি প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার এবং তরুণ যুবক ভোটারদের প্রতি একটাই আহবান জানাতে চাই- জীবনের প্রথম ভোট কোনো দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস বা মাদকের প্রশ্রয়দাতাকে দেয়া যাবে না।

জীবনের প্রথম ভোট আল্লাহর নামে, ইসলামের পক্ষে দিতে হবে। আমাদের ধর্মচিন্তা এবং হাজার বছরের ঐতিহ্য সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে।

লেখক: প্রডিউসার, রেডিও বেইস ইতালি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ