শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আতর রপ্তানি করেই ১০০০ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আফফান: আতর ভেষজ উৎস থেকে উৎপাদিত সুগন্ধী। আতর শব্দটি ফারসি শব্দ ইতির থেকে এসেছে যার অর্থ সুগন্ধী। প্রাচীনকালে মিশরীয়রা সুগন্ধী তৈরীতে প্রসিদ্ধ ছিল। বিভিন্ন গাছপালা এবং ফুলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন তেলের সাথে মিশিয়ে আতর তৈরী করা হত।

আতর শিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। এখানে প্রায় ২০০টির মতো ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। ভারত, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেই রপ্তানি হচ্ছে এ আতর । আতর রপ্তানি করে প্রতিবছর ৮০০-১০০০ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। যা দেশের রপ্তানি খাতে বড় অবদান রাখবে।

২০১৩ সালে আগর-আতরকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনে আধুনিক পদ্ধতি ও পরীক্ষাগার না থাকায় এর মান নিয়ে সমস্যা, সাইটিস সার্টিফিকেট, এইচএস কোডসহ বিমানবন্দরে নানা জটিলতায় রপ্তানিতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে বৈধ পথে রপ্তানি না হয়ে বিকল্প পথে তা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব।

সুজানগরের কয়েকটি কারখানার রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আতর দেশের একমাত্র শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প।তারপরেও আগর থেকে আতর উৎপাদনে আধুনিক কোনো পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে না। এখানে কোনো আধুনিক পরীক্ষাগার নেই।

আগর থেকে উৎপাদিত প্রতি তোলা ভাল মানের আতরের দাম ৬ হাজার টাকার বেশি। আর নিম্নমানের আতর আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা তোলা। সে হিসেবে এক লিটার ভালো মানের আতরের বাজারমূল্য ৬ লাখ টাকারও বেশি।

বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আনসারুল হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার আতর রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে আতর রপ্তানিতে বন ও পরিবেশ বিভাগের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সময়মতো এ সনদ না পাওয়ায় বিদেশে পণ্য পাঠাতে দেরি হচ্ছে।

এছাড়াও কারখানাগুলোতে গ্যাস সমস্যার কারণে উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ শিল্পের অগ্রগতির জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি গ্যাস বিলিংয়ের ক্ষেত্রে শিল্প হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বিলিং হলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা উপকৃত হবে।

সুজানগর ঘুরে দেখা গেছে, এখনো সেই পুরানো পদ্ধতিতে আগর গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় আতর। গাছ বড় হওয়ার পর সেটি ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এসব টুকরো প্রায় এক মাস পর্যন্ত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর বড় ডেগে করে চুলার মাধ্যমে ১০-১৫ দিন জ্বালালে সেখান থেকে এক ধরনের রস বের হয়।

ওই রসের উপরিভাগের তৈলাক্ত অংশ হাত দিয়ে তুলে উৎপাদন করা হয় আতর। যা প্রক্রিয়াজাতকরণের পর তৈরি হয় মূল্যবান সুগন্ধি আতর। কিন্তু এ আতর এখানে তৈরি হয় না। আগর গাছকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে সংগৃহীত এ নির্যাস বৈধ-অবৈধ পথে চলে যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সেখান থেকে আগরের নির্যাস যায় মধ্যপ্রাচ্যে।

আগর গাছের কোনো অংশই নষ্ট হয় না। এগুলোর ছাল-বাকলসহ সব অংশই মূল্যবান। বেশি আতর পেতে প্রতিটি আগর গাছে ২ ইঞ্চি পরপর পেরেক মারা হয়ে থাকে। ৩৫০ টিরও বেশি ছোট-বড় আতর তৈরির কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার নারী-পুরুষ। প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ২৫০-৫০০ টাকা। প্রতি বছর এখানে উৎপাদন হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার লিটার আতর।

বিশ্বে অস্ত্র বিক্রিতে ১ম যুক্তরাষ্ট্র, ২য় রাশিয়া

এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ