শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘একসঙ্গে রক্তাক্ত জখমের এত রোগী কখনো দেখিনি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ‘একসঙ্গে রক্তাক্ত জখমের এত রোগী টঙ্গী হাসপাতালে কখনো আসেনি’। এভাবেই টঙ্গী ইজতেমা মাঠের করুন চিত্র তুলে ধরলেন টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন।

মিডিয়ার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, প্রচুর পরিমানে মুসল্লি আহত হয়ে হাসপাতালে আসছে। আমরা সবাই মিলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।

শনিবার সকালে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে ঘটে গেল এমনই ভয়ঙ্কর ঘটনা। যেখানে ইবাদত করতে আসা শত শত মুসল্লি এখন আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে।

জানা যায়, জোড় ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির জন্য বেশ কিছুদিন থেকেই মাঠে অবস্থান করছিলেন তাবলীগের সাথীগণ। সকাল ১১ টার দিকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা মাঠ দখল করতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় সাদ অনুসারীরা মাঠের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং দফায় দফায় হামলা চালায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লাঠি দিয়ে বেধরক পেটানো হচ্ছে সাথীদের। অকেনের পুরো পাঞ্জাবি রঙ্কে রঙিন। অনেকের মাথা ফেটে চৌচির। কারো নাক মুখ কেটে গেছে।

মাঠে অবস্থানরত অনেকেই জানান, অন্যদিনের মতোই ইজতেমা মাঠে ইবাদতে লিপ্ত ছিল তাবলীগের সাথী ও উলামায়ে কেরাম। এদিকে সাদ অনুসারীরা যেন ভেতরে ঢুকতে না পারে সে জন্য গেটের পাহারায় ছিলেন অনেকে।

বেলা ১১ টার দিকে হঠাৎ করেই তারা লাটিসোটা হাতে মাঠে প্রবেশ করে। তারা তাবলীগের সাথী, মুরব্বি ও ছাত্রদের বেধরক পেটাতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানান, হামকারীদের বেশির ভাগের টার্গেট ছিল মাদরাসার ছাত্ররা। নিরিহ এসব ছাত্রকে দেখে লাঠি হাতে দৌড়ে আসে হামলাকারীরা।

আওয়ার ইসলামের টঙ্গী প্রতিনিধি তাওহিদ জানান, হামলাকারীরা মাঠে প্রবেশ করেই ছাত্র ও মুরব্বিদের বেধরক পেটাতে থাকে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে এসময় অনেক সাথী মারাত্মক আহত হন।

তিনি বলেন, মাঠে অবস্থানরত সাথীদের মাল সামানা ও চাটাইয়ে আগুনও ধরিয়ে দিচ্ছে তারা।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টঙ্গী ময়দানে তাবলিজ জামাতের নিয়মতান্ত্রিক জোড় অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনের ইজতেমা। সে মুতাবেক মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছিলেন তাবলীগের সাথীগণ।

এদিকে মাওলানা সাদ অনুসারীরাও আলাদাভাবে ৩০ নভেম্বর থেকে জোড় করার ঘোষণা দেন। এবং গত ২৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে মাঠ দখলের কথাও বলেন। এর পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভী তাবলিগ জামাতের একজন শীর্ষ মুরব্বি। তবে গত কয়েক বছর ধরে তার নিজেকে আমির দাবি ও নবীর শানে বিতর্কিত কিছু বক্তব্যসহ কিছু ভুল মাসআলা দেয়ায় তা সংশোধনের চেষ্টা করেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম।

কিন্তু এসব ভুল থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্কারভাবে ফিরে না এসে নিজের অবস্থানে অটুট আছেন।

এদিকে উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের বাংলাদেশের মুরব্বিগণ ঘোষণা দিয়েছেন, মাওলানা সাদ তার ভুল থেকে ফিরে আসলে সবাই তাকে মানবেন। কিন্তু এসব ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের অবস্থান অটুট রাখায় তাবলীগ জামাতে চলমান এ সঙ্কট।

চলমান এ পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভী তার ভুল থেকে ফিরে না এলে তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না এবং তার মতও প্রচার করতে দেয়া যাবে না।

বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাইল সে অনুযায়ী নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

গেট ভেঙে ইজতেমা মাঠে সাদপন্থীরা; ছাত্রদের মারধর

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ