মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসলামী রাজনীতির উদ্দেশ্য ও আমাদের চলমান ক্ষমতার রাজনীতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী

বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ময়দানে চলছে চরম এক ক্রান্তিকাল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামী দলগুলোর মাঝে চরম ক্ষমতার নেশা কাজ করছে। সাময়িক ক্ষমতার নেশায় দলগুলো দিশেহারা। ক্ষমতা ও সাময়িক প্রাপ্তির মোহ ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে। এতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তারা ইসলামী রাজনীতির কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।

ক্ষমতা মোহ তাদেরকে ইসলামী রাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। স্বপ্নের মত এই মোহ তাদেরকে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সংসদে যাওয়ার স্বপ্নে তারা এতটাই বিভোর হয়ে পড়েছে যে, কেউ কেউ হিতাহিত জ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে।

তাদের ধারণা, যে কোনো উপায়ে যদি সংসদে যেতে পারি তাহলে বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের আকাবির আসলাফগণ বলছেন ভিন্ন কথা।

বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামী দার্শনিক ও মনীষী শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ১৯৫১ সালে মিসর সফরকালে সেখানকার দীনী সংগঠন ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’-এর নেতা-কর্মীদের সাথে মিলিত হন এবং তাদের উদ্দেশ্যেবলেন, ‘বন্ধুগণ! ইসলামীআন্দোলন ও ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ সহজ নয়। এর মূল অনেক গভীরে প্রোথিত।

শুধু কোনো শাসন ব্যবস্থাকে বদলে দেয়াই ইসলামী আন্দোলন ও মিশনের কাজ বা লক্ষ্য নয়, হতেও পারে না। ইসলামী সংস্কার কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের অদলবদল, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রচার-প্রসার, নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম, অচলাবস্থা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই এবং নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে মুক্তিলাভ করা নয়; বরং ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত, আরো গভীরে প্রোথিত, দিগন্ত-প্রসারিত। ইসলামী দা’ওয়াত ও আন্দোলন একটি ‘মহা সমন্বয়’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।

ইসলামী দা’ওয়াত ও আন্দোলন হলো- আকীদা-বিশ্বাস ও চরিত্র সুষমা, গুচ্ছ গুচ্ছ কর্ম.. স্তরে স্তরে বিন্যস্ত রাজনীতি, ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে বিন্মচিত্তে আত্মসমর্পণ, ব্যক্তি ও সামাজিক আচার-আচরণে পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা, হৃদয় মন ও দেহ-আত্মাকে সাথে নিয়ে বুদ্ধি ও যুক্তিকে স্বাগত জানানো এবং মন-মানস, আকীদা-বিশ্বাস ও বিবেক-বুদ্ধির পরিবর্তন।

ইসলামী দাওয়াত ও আন্দোলন দাঈর কলম নয়, কিতাবের পাতা নয়, বক্তৃতার মঞ্চও নয়; বরং হৃদয়োৎসারিত বোধ ও বিশ্বাস যা সমাজের আগে নিজের বাস্তব জীবনে পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।

ইসলামী আন্দোলন নবী-রাসূলগণের ঈমান ও জিহাদ, শিক্ষা ও দীক্ষা, হিকমত ও প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা ও অবিচলতা এবং তাঁদের ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। এই দা’ওয়াত শুধুমাত্র নবী-রাসূলগণের যুগ-মানসের সাথেই সম্পৃক্ত নয়; বরং সর্বযুগের সকল মানুষের জন্যেই এই দা’ওয়াত, তাই যুগ-চাহিদা এখানে প্রতিফলিত হতেই পারে।

দাওয়াতের পদ্ধতিগত পরিবর্তন ও সংস্কার আসতেই পারে। তাই বলে কোনো অবস্থাতেই নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের ভিত্তি থেকে সরে পড়া যাবে না। আলো গ্রহণ করতে হবে তাঁদের প্রদীপ থেকেই। যেকোনো মূল্যে, ত্যাগ ও সাধনায় ফিরে যেতে হবে সেই মূল উৎসধারাতেই।’

শায়খ নদভী রহ. আরো বলেন, ‘নবী-রাসূলগণের আরেকটি বুনিয়াদী বৈশিষ্ট্য ছিলো এই যে, তাঁদের দা’ওয়াত ও মেহনত ছিলো যাবতীয় ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা ও দ্রুত ফলাফল লাভের ব্যাকুলতা থেকে মুক্ত।

তাঁদের দা’ওয়াত, মেহনত ও জিহাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো আল্লাহর রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি এবং তাঁর নির্দেশ পালন করে যাওয়া। দুনিয়ার স্বার্থ অর্জন, মর্যাদা লাভ, পরিবার-পরিজন ও অনুসারীদের স্বার্থসিদ্ধি বা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে কোনো কিছু করা ছিলো তাঁদের জন্য অকল্পনীয়।

আর নবী-রাসূলগণের সময়কালে তাঁদের নেতৃত্বে যে হুকুমত ও রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ হয়, তা ছিলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ‘স্বাভাবিক’ পুরস্কার। সুতরাং রাষ্ট্রক্ষমতা হলো সমাজ ব্যবস্থায় শরীয়া বিধিবিধান বাস্তবায়নপূর্বক ইতিবাচক পরিবর্তন এনে সমাজকে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদানের একটি উসিলা বা মাধ্যম।

ইরশাদ হচ্ছে, ‘যদি আমি তাঁদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতা দেই, তাহলে তাঁরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে।’ (সূরা হজ্ব, আয়াত-৪১)।

সুতরাং রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া কখনই নবী-রাসূলগণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো না। এমনকি এর জন্যে তাঁরা কোনো স্বপ্নও দেখেনি; বরং গভীর মনোযোগের সাথে তাঁরা কেবল দা’ওয়াত ও জিহাদেই মশগুল ছিলেন। আর এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে রাষ্ট্রক্ষমতাও লাভ করেন। ঠিক যেমন বৃক্ষচারা বড় হলে...ফলদানের উপযুক্ত হলে স্বাভাবিক নিয়মেই তাতে ফল ধরে, ফুল ফোটে।’

শায়খ নদভী রহ. আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সা.-কে পাঠালেন। তিনি এসে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন। মানুষ সাড়া দিলো তাঁর ডাকে। জড়ো হলো তাঁর পরশে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কয়েকজন যুবক ঈমান এনেছিলো তাদের প্রতিপালকের প্রতি আর আমি তাদের হিদায়াতের উপর পথচলার শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাদের মনোবলকে সুদৃঢ় করে দিয়েছিলাম, যখন তারা দাঁড়িয়ে বলেছিলো : আমাদের রব হলেন আকাশমন্ডলী ও জমিনের রব। তাঁর পরিবর্তে অন্য কোনো ইলাহকে আমরা ডাকবো না।

এ ভিন্ন অন্য কোনো কথা বললে তা হবে গর্হিত উক্তি। এরা আমাদেরই স্বজাতি। এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। কেনো এরা তাদের ইবাদতের পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করছে না? যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে আছে?’ (সূরা কাহফ, আয়াত-১৩-১৫)।

এই যুব সম্প্রদায়ই যুগে যুগে জুলুম-নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। এদের উদ্দেশ্যেই ইতিপূর্বে বলা হয়েছিলো- ‘লোকেরা কি ভেবে বসেছে যে, তারা এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদেরকে (বিপদ আপদ দিয়ে) পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়কেও আমি পরীক্ষা করেছি। অবশ্যই আল্লাহ জেনে নেবেন (এই পরীক্ষার ভিতর দিয়ে) কে সত্যবাদী, আর কে মিথ্যাবাদী।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত-২-৩)।

ফলে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যে তাঁরা প্রতিটি মুহূর্তে পাহাড়ের ন্যায় অবিচলতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা বললো যে, এই হলো সেই প্রতিশ্রুতি, যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল আমাদেরকে দিয়েছিলেন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সত্য বলেছেন। (সূর আহযাব, আয়াত-২২)।

শেষ পর্যন্ত হিজরতের অনুমতি মিললো। দাওয়াতের কাজ এগিয়ে চললো নিজস্ব গতিতে। পথে পথে আসতে লাগলো তার ফল ও স্বাভাবিক পরিণতি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ইচ্ছায় আল্লাহর পথের এ দাঈরাই বিশ্ব শাসন করেন। ন্যায়-নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষকে উদ্ধার করেন কুফুরীর আঁধার থেকে ঈমানের আলোর দিকে, মানুষের ‘ইবাদত’ থেকে স্রষ্টার ইবাদতের দিকে এবং পৃথিবীর সংকীর্ণতা থেকে বিস্তৃতির দিকে।

এভাবে আল্লাহ তাঁদেরকে এমন অবস্থায় উন্নীত করেন যে, এখন তাঁদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দেয়া হলে-‘তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে।’ (সূরা হজ্ব, আয়াত-৪১)।

আর এটাই তাঁদের মূল দায়িত্ব। হিকমত, প্রজ্ঞা, ত্যাগ ও সাধনার ফলে দাওয়াতের কাজ এগিয়ে চলেছে নিজস্ব গতিতে। ফলে স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবেই হুকুমত ও রাষ্ট্রক্ষমতা এসেছে। যেমন বৃষ্টি হলে আঁধার বসুন্ধরায় ক্ষেত-খামার হেসে ওঠে সবুজ-শ্যামলিমায়। আজকের ছোট্ট চারাটা, ‘কালকেই’ বেড়ে উঠবে। ফলভারে নুয়ে পড়বে তার ডালপালা।

সুতরাং শাসন ক্ষমতাও সন্দেহাতীতভাবে ইসলামী দাওয়াতের অসংখ্য ফলের একটিমাত্র ফল। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার এ গৌরব ও সম্মান এবং নিয়ামত ও পুরস্কার হলোকষ্টঘেরা-দুঃখঘেরা-রক্তঝরা দিনগুলোর একটি স্বাভাবিক পরিণতি। কেননা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে এবং ঝরাতে হয়েছে মক্কার ও তায়েফের কালো ও নিষ্ঠুর দিনগুলোতে।

কোনো কিছুকে ‘টার্গেট’ বানিয়ে তার পেছনে ছুটে চলা এবং স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে কোনো কিছুর ফল প্রকাশ পাওয়া মোটেই এক নয়, বরং দুটি দুই জিনিস। এর মাঝে রয়েছে দুস্তর ফারাক। সুতরাং যার ‘টার্গেট’ রাষ্ট্র ক্ষমতা, তার এ ‘টার্গেট’ পূর্ণ না হলে সে হতোদ্যম হয়ে পড়বে।

নিরাশার অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। তখন সে দাওয়াতের কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে। অপরদিকে তার ‘টার্গেট’ যদি পূরণ হয়ে যায়, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যদি সে অধিষ্ঠিত হয়েই পড়ে, তখন সে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে।

সুতরাং রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার উদগ্র বাসনা যে কোনো দল ও জামাতের জন্যে বড় বিপজ্জনক। তারা নিজেদের ‘এই লক্ষ্য’ ছুঁইতে গিয়ে দাওয়াতের পথে ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করতে ব্যর্থ হবে এবং দাওয়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে পড়বে।

কেননা রাষ্ট্র ক্ষমতায় পৌঁছার জন্যে যে পথ ও পন্থা, ধাপ ও সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়, তা দাওয়াতের পথ ও পন্থা এবং ধাপ ও সিঁড়ি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটির সাথে আরেকটির আদর্শগত ও চেতনাগত কোনো মিল নেই।

এ জন্যে জরুরি হলো, আমাদের আকল-বুদ্ধি ও মন-মানসকে অন্য সব চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে শুধুমাত্র এবং একমাত্র দা’ওয়াত, খিদমত, আত্মত্যাগ ও আত্মবিসর্জন করা, মানুষকে আঁধার থেকে আলোয় নিয়ে আসা, জাহিলিয়াতের সকল রূপ ও ধরন থেকে মুক্ত করে পরিপূর্ণ ইসলামের দিকে আনা।

পৃথিবীর সংকীর্ণতা থেকে বিস্তৃতি ও প্রশস্ততার দিকে আহবান করা, বিকৃত ও ভেজাল ধর্মের অবিচার ও বেইনসাফি এবং অত্যাচারী শাসন ব্যবস্থার কবল থেকে মুক্ত করে ইসলামের শ্বাশত ন্যায়-নীতি, সুবিচার ও সর্বোত্তম আদর্শের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

কর্ম ও জিহাদের ময়দানে আমাদের প্রেরণার একমাত্র উৎসস্থল হবে আল্লাহর বিধি-বিধান ও হুকম-আহকাম। সুতরাং পরকালের মুক্তি ও সাফল্যের অভিলাষ, আল্লাহর পুণ্যবান বান্দাগণের জন্যে বরাদ্দকৃত জান্নাতের অফুরন্ত নায-নিয়ামত, সৃষ্টিলোকের প্রতি মায়া-মমতা ও ভালোবাসা এবং নিপীড়িত মানবতাকে উদ্ধারের সহজাত দায়বদ্ধতা হবে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

তবে এমন যদি হয় যে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ছাড়া দাওয়াতের সংগ্রাম ও সাধনামুখর এবং ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কুরবানীময় কোনো ধাপে বা কোনো সময়কালে যদি শরীয়তের মূল লক্ষ্য অর্জিত না হয়, তাহলে দাঈর মন-মানসে দাওয়াতের মাহাত্ম, বুনিয়াদি নীতিমালা ও তাৎপর্য দৃঢ়মূল হওয়ার পরই শুধু দা’ওয়াত ও দীন, সততা ও পবিত্রতা, সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতা এবং আাল্লাহ ও রাসূলের সর্বানুগত্যের স্বার্থে এই ‘রাষ্ট্র ক্ষমতা’র জন্যে বিচ্যুত হলে চলবে না।

অবশ্যই পূর্ণরূপে অব্যাহত থাকবে অন্যান্য ইবাতদসমূহ পালন করে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা-সাধনা ও সংকল্প। কেননা, মুমিনের জীবনে হুকুমত এবং ইবাদতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, যদি থাকে ইখলাস ও নিষ্ঠা এবং সততা ও বিশুদ্ধতা। আল্লাহর রিযা ও সন্তুষ্টির ভিতরেই রয়েছে মুমিনের কামিয়াবি ও সাফল্য। তখন মুমিনের সব কাজই সৎ কাজ হিসাবে গণ্য হবে, যা তাকে পৌঁছে দেবে আল্লাহর সকাশে, তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে।

শায়খ নদভী রহ. রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়ে ঈমানী ও নৈতিক পরিবর্তনের উপর অধিক জোর দিতেন। পক্ষান্তরে মাওলানা মওদূদী ও সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাজনৈতিক পরিবর্তনের উপর বেশি জোর দিতেন।

এ জন্যে শায়খ নদভী রহ. তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং সুপরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষত মাওলানা মওদূদী সাহেব ‘কুরআনের চার পরিভাষা’ গ্রন্থে ‘রব’, ‘ইলাহ’, ‘দীন’ ও ‘ইবাদত’ সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন শায়খ নদভী রহ. ‘ইসলামের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা’ নামক স্বীয় গ্রন্থে তার সমালোচনা করেন।

লেখক: মহাপরিচালক, শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বিরুলিয়া, ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ