আওয়ার ইসলাম: পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ হুমকিতে কুমিল্লা শহরের রাজা কামাল নামে এক ব্যক্তি সপরিবারে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন।
‘হেল্পলেস’ শিরোনামে ৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করার পর থেকেই তা ভাইরাল হয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়।
রাজা কামাল কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ চর্থা থিরাপুকুর পাড় এলাকায় বসবাস করেন। প্রয়াত ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ছেলে তিনি। তার জমি নিয়ে পুলিশ প্রকৃত মালিকদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পেয়েছে বলে জানা যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও বার্তায় রাজা কামাল শুরুতে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মানবাধিকার সংস্থা সংগঠনসহ অন্যান্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমি যে জায়গায় বসে আছি এটা আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি। সিএস/আরসি খতিয়ান ও খাজনা রশিদ আমার নামে থাকা সত্ত্বেও বিএস খতিয়ানে কিছুটা ঝামেলা রয়েছে।
এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে। কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি নিজেকে আর্মির সার্জেন্ট পরিচয় দিয়ে আমাকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়ে গালমন্দ করেন। বলেন, এখান থেকে আমাকে উঠে যেতে হবে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ জায়গা ক্রয় করেছেন। একজন মন্ত্রীর নাম বলে তার বন্ধু হয় তারা এ কথাও বলে তারা।
আমার নামে তিনটি মামলা আছে, আমাকে এ বাড়ি থেকে যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
পরে আমি ক্যান্টনমেন্টে খোঁজ নিলে তারা বলে এটা ভুয়া তথ্য। র্যাব অফিসে গিয়েছি, সেখান থেকে জিডি করতে বলা হয়েছে, করেছি। কিন্তু কিছুদিন আগে সদর দক্ষিণ থানা ও ইপিজেড ফাঁড়ির পুলিশ আমার বাসায় এসে বলে আমার নামে মামলা আছে, বাসা ছেড়ে দিতে হবে। না হয় আরও কয়েকটি মামলা দিয়ে আমাকে জেলে নিয়ে যাবে বলে।’
ভিডিও বার্তাটিতে তিনি আরো বলেন, ‘গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) সকালে ইপিজেড ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আবুল আজিজ আমাকে কাগজপত্র নিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি সকল কাগজপত্র এবং আমার উকিল সাহেবকে নিয়ে যাই।
কিন্তু আমার কাগজপত্র না দেখে একদিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। সেখানে দেখি অন্তত ২শ লোক জড়ো করা হয়েছে আমাকে মারার ও হত্যার উদ্দেশ্যে। আমি ভয়ে কিছু বলিনি সেখানে, উকিল সাহেবকে নিয়ে কোনো রকমে বের হয়ে চলে আসি। আমাকে বলা হচ্ছে কিছু টাকার বিনিময়ে বাড়ি ছেড়ে দেন, না হয় আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব।’
তিনি সহযোগিতা চেয়ে আকুতি করে ওই ভিডিওতে আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে অনেকের দ্বারস্থ হয়েছি, কিন্তু কারো কাছ থেকেই সহযোগিতা পাইনি। তাই আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই, যদি আমাকে বাড়ি ছাড়তেই হয়, আমি আজকে দেখেন এই এনডিনের শিশিটা (বিষের বোতল দেখিয়ে) নিয়ে এসেছি।
যদি আমার বাড়ি ছেড়ে যেতেই হয় আমি আমার গর্ভবতী স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। তারপরও এ বাড়ি ছেড়ে আমি যাব না। আপামর জনতা, যারা আমার ভিডিও দেখছেন যদি আমাকে আইনি সহায়তা না দেন তাহলে আমি আমার পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করবো।’
রাজা কামালের বড় ভাই জানান, আমাদের অসচেতনতার সুযোগে একটি সমবায় সমিতির সদস্যরাসহ অন্য দখলদাররা বিএস খতিয়ানে নিজেদের নাম ‘এন্ট্রি’ করে ফেলে। তারা এখন এ জায়গা দলিল ছাড়া শুধু স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এ অবস্থা দেখে আমার ভাই রাজা কামাল কয়েক বছর যাবৎ সেখানে ৯ শতক ভূমির উপর ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকে। আর বাকি জায়গার দখল ফিরে পেতে আমরা মামলা করি। কিন্তু উল্টো এখন দখলদাররাই তাকে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে।
তবে জমির প্রকৃত মালিক দাবি করে জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি জানান, সকল কাগজপত্রে আমরাই জমির মালিক, রাজা কামাল ২/৩ বছর আগে অবৈধভাবে ওই ভবনে এসে দখল করেছে, তাই আদালত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে রাজা কামাল সাংবাদিকদের জানান, জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু এর সুরাহার আগেই আমাকে উচ্ছেদের জন্য হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে।
আজ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ইপিজেড ফাঁড়ির ইনচার্জ আমার হাতে নোটিশ দিয়েছেন। আমি এখন পুরোপুরি অসহায়। আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরত চাই। পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
রাজা কামাল আরো বলেন, আমার বসবাসরত ওই ৯ শতক ভূমি রেইনা নূর নামে এক নারী রেনেসা গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম কবীর জাহাঙ্গীর আলমের কাছে বিক্রি করে দেন। তিনিই এখন আমাকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছেন। অথচ আমি ওদের কাউকে চিনি না।
এ ব্যাপারে শনিবার দুপুরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ইপিজেড ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল আজিজ জানান, জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি এডিএম কোর্টে মামলা করার কারণে আদালতের আদেশে ওই জায়গায় ১৪৫ ধারা জারি করে আদালত পুলিশকে রিসিভার নিয়োগ করেছেন।
এখন এ জায়গা পুলিশের আওতায় থাকবে। তবে রাজা কামালকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়নি। সে বিষয়টি ভুল বুঝছে। সে আদালতে যেতে পারে। আত্মহত্যা করা তো কোনো সমাধান নয়।
এ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জনসাধারণ জমিখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোড় দাবি জানান।
https://www.facebook.com/100009617463579/videos/2109158392748056/?t=29
এটি