শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘শুধু ইস্যুভিত্তিক জোট বেশিদিন টিকে না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নির্বাচন আসছে। বড় দলগুলোর নজর এখন ক্ষুদ্র দলগুলোর দিকে। নিবন্ধন থাকুক বা না থাকুক কিছু সমর্থ থাকলেই মহা গুরুত্ব পাচ্ছে তারা।  বড় দলগুলো সঙ্গে নিচ্ছে তাদের। ছোটদলগুলোও দু'একটা সিটের জন্য ভিড়ছে তাদের দ্বারে।

আগামী নির্বাচ হওয়া না হওয়া নিয়ে এখনো অনেকের মনে সন্দেহ। তবে এ সন্দেহের মধ্যেই চলছে ভোট ও জোটের কার্যক্রম। আর এসব কেন্দ্র করে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে ইসলামী দলগুলো। তাদের কদর বেড়েছে অনেকাংশেই। কিন্তু ইসলামি জনতার প্রত্যাশা একটু ভিন্নরকম।

এসব নিয়ে কথা হয় বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সিনিয়র সম্পাদক, লেখক ও প্রবীন আলেমে দীন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন  আওয়ার ইসলামের ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক সুফিয়ান ফারাবী

আওয়ার ইসলাম: নির্বাচন আসন্ন। একটি ইসলামী জোটের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সাধারণ মানুষ, আপনার কাছে কেমন মনে হয়?

উবায়দুর রহমান খান নদভী : আসলে, এই নির্বাচন হয় কিনা, এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। হলেও কেমন হবে সে ব্যাপারে সবাই সন্দিহান। জনমনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে কিনা এটাও বলা যাচ্ছে না এখনই।

শুধু একটা নমিনেশন পেলেই অটোমেটিক এমপি হওয়ার আশায় যারা আছেন, তারা ছাড়া বাকি সবার মনেই অনিশ্চয়তা। বাজে ইলেকশনে জনপ্রিয় প্রার্থী পাওয়া যায় না।

যেমন, একটা গাড়ি রওনা করবে, কিন্তু গন্তব্যে যাবে না। তখন কিন্তু এই গাড়িতে কেউ উঠতে চাইবে না। যদি সবাই জানে, গাড়িটা আমাকে অন্য পথে নিয়ে ছেড়ে দেবে বা ডাকাতি করবে তাহলেও কিন্তু কেউ উঠবে না।

আর যদি জানে, এটা নিয়মিত যায়, আপনার অভিজ্ঞতা আছে তাহলে আপনি উঠবেন। কারণ গন্তব্যে আপনাকে যেতে হবে। তখন আপনি ভাববেন, একা উঠবেন নাকি সবাইকে নিয়ে উঠবেন, কোন সিট নিবেন, কোন সাইডে বসবেন, সেটা পরের প্রশ্ন।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমানে ভোটের হিসেবে সরকার গঠন হয় কিনা ?

উবায়দুর রহমান খান নদভী : সেটা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ভালো বলতে পারবেন। সেটা আমি জানি না।

আওয়ার ইসলাম : সবগুলো ইসলামী দল একত্রে কতো পর্সেন্ট ভোটের মালিক?

উবায়দুর রহমান খাম নদভী: প্রায় দুই পার্সেন্ট। ইসলামি বা আলেমদের ভোট কম পাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : কারণগুলো কী?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: ১. আমাদের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করার ব্যাপারে জনগণের আস্থা কম। তারা ঈমান আমলে উলামায়ে কেরামের প্রতি আস্থশীল হলেও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের আস্থা একেবারেই কম।

যেমন বিমানের পাইলট নিয়োগ দেওয়ার সময় সবচে বড় হুজুরকে দিবে না। একজন দক্ষ পাইলট খুঁজবে। কারণ তিনি এতে পারদর্শী।

কিন্তু হুজুর যদি প্রমাণ করেন- উনি বিমান চালাতে পারেন, উনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ তাহলে অবশ্যই তাকে দায়িত্ব দেবে।

এটা হলো টেকনিক্যাল দিক দিয়ে তার অযোগ্যতা। আর এই দক্ষতা না থাকা তার জন্য দোষ বা অপূর্ণতা না। কিন্তু কারিগরি দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও সেটার দাবি করা বা সেখানে উঠতে চাওয়াটা তার জন্য দোষের।

২. আমাদের দেশের মানুষ দুটি দলের সাথে যুক্ত হয়ে আছে। এখানে তৃতীয় কোনো দল বড় আকারে দাঁড়াতে পারবে না। তারা যে দলই হোক। শুধু আলেমরা নয়। যেমন বামরাও দাঁড়াতে পারছে না।

৩. সবাই এক হয়ে একটা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে না পারা। কীভাবে ঐক্য হবে সে ব্যাপারে তৎপর থাকা, চিহ্নিত সমস্যাগুলো দূর করার চিন্তা করা, রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় থাকা- যেগুলো দেখে মানুষ আস্থাভাজন হবে। তারপর সমাজে আমাদের সেবা, বিশ্বস্ততা ও আন্তরিকতা দেখে একদিন তারা আমাদের পছন্দ করবে।

আওয়ার ইসলাম: মাইনাস দুই পার্সেন্ট ভোটের মালিক ইসলামী দলগুলো। এটা কি আপনার ধারণা নাকি হিসেব মতে?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: এটা প্রাপ্ত ভোটের সরকারি হিসেব মতে।

আওয়ার ইসলাম: সম্মিলিতভাবে একটি ইসলামী জোট প্রয়োজন কি না?

উবায়দুর রহমান খাম নদভী : দীর্ঘ মেয়াদি টার্গেট নিয়ে এগুতে পারলে এবং জোরদার প্রচেষ্টা চালাতে পারলে জোট ফলপ্রসূ হতে পারে। শুধু নির্বাচন বা ইস্যু নিয়ে গঠিত জোট টিকেও না, জনমনেও কোনো ভালো প্রভাব ফেলে না। আর জোটের মাধ্যমে সবকিছু হয় না।

কারণ, রাজনীতিতে কখনো ব্যক্তি, কখনো দল, আবার কখনো মতাদর্শও মূখ্য হয়ে থাকে, এসবও বিবেচনায় রাখা চাই। বাস্তবমুখি দীর্ঘ ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা এসব জায়গায় কাজে আসে। মওসুমি বা হঠাৎ করেই দানমারার রাজনীতি আর সাময়িক জোট তেমন কাজে আসে না।

আওয়ার ইসলাম: আমাদেরকে মূল্যবান সময় থেকে কিছু সময় দেওয়ায় আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন।

মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী: আমার পক্ষ থেকে আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

কওমি স্বীকৃতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার কাছে আমাদের প্রত্যাশা

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ