কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি পেয়ে আলেম সমাজ থেকে ছাত্র সমাজ সবাই সন্তুষ্ট। দীর্ঘদিন পর হলেও পূরণ হয়েছে প্রাণের এ দাবি। ধন্যবাদ, শুকরিয়া মিছিল শেষে উলামায়ে কেরাম আল হাইয়ার ব্যানারে এবার প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননার চিন্তা করছে।
তবে সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হলেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে যাওয়ার রাস্তাটি এখনো কংকরমুক্ত হয়নি। খুব শিগগির হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের ইসলামের গাজীপুর জেলা সভাপতি ও টঙ্গীর জামিয়া দারুল উলুমের প্রিন্সিপাল মাওলানা মাসউদুল করীম।
সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে আরও কিছু বিষয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক সুফিয়ান ফারাবী।
আওয়ার ইসলাম: শুরুতে আপনার কাছে জানতে চাইবো কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির দাবি প্রথম কারা উত্থাপন করে?
মাওলানা মাসউদুল করিম: সর্বপ্রথম বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়াহ এর মরহুম মহাসচিব আব্দুজ জাব্বার রহ. এর তত্ত্বাবধানে এ দাবি তোলেন দেশের উলামায়ে কেরাম।
আওয়ান ইসলাম: এ দাবির পেছনে মরহুম শাইখুল হাদিস রহ. গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই।
মাওলানা মাসউদুল করিম: যখন তৎকালিন বিএনপি সরকার স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েও এদিক সেদিক করছিল তখন শাইখুল হাদিস রহ. মুক্তাঙ্গনে অবস্থান করে এ দাবিকে আরো জোড়ালো করেন। তাই স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে তাঁর বিশেষ অবদানের কথা স্বীকার করতেই হবে।
আওয়ার ইসলাম: এ যাবৎ স্বীকৃতি আন্দোলন সংগ্রামে আলেমদের মধ্যে কারা বেশি ভূমিকা রেখেছেন?
মাওলানা মাসুদুল করিম: বিশেষ করে মাওলানা আব্দুল জাব্বার রহ., মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী ও মরহুম আবুল ফাতাহ ইয়াহয়া। উনারা বুদ্ধিভিত্তিক প্রচেষ্টা চালায়। অন্যরাও বেশ ভূমিকা রেখেছেন এ ব্যপারে। তবে বিশেষভাবে আমি তাদের তিনজনের নামই উল্লেখ করবো।
আওয়ার ইসলাম: এ দাবির সূচনা থেকে স্বীকৃতি দাবির বিল চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত আপনার ভূমিকা কী ছিল?
মাওলানা মাসউদুল করিম: বেফাকের দায়িত্বশীল হিসেবে তারা যা করতে বলেছেন আমি তাই করেছি। সবই করেছি সাংগঠনিকভাবে। ব্যক্তিগত কিছু নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, কখনো অনুপস্থিত ছিলাম না।
আওয়ার ইসলাম: বর্তমান সরকারের আমলে আপনারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে স্বীকৃতির বিল পাস হয়েছে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
মাওলানা মাসউদুল করিম: এ বিষয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানাবো। কারণ উলামায়ে কেরামের চিন্তার প্রতি তারা শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। সাধারণত সরকার পক্ষ উলামায়ে কেরামের কথার ওপর এতোটা শ্রদ্ধাশীল হন না। আমাদের ধারণামতে আমরা যেভাবে স্বীকৃতি চেয়েছি সেভাবে দেওয়াটা কিছুটা অসম্ভব ছিল।
তারা উলামায়ে কেরামের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এটা সম্ভব করেছেন। এজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
আওয়ার ইসলাম: দেওবন্দের ৮ মূলনীতির সাথে স্বীকৃতির কোনো বৈরিতা আছে কিনা?
মাওলানা মাসউদুল করিম: এর কোনো সুযোগই নেই। কারণ ওই আট মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোনভাবেই বৈরিতা নেই বলে মনে করি। সুতরাং তারা কোনভাবেই স্বকীতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
বাকি আমাদের মাঝে কিছু কিছু আলেমকে এতো উৎসাহি হতে দেখা যাচ্ছে যে, কখন নিজেদের স্বকীয়তার দাবি থেকে সরে যান এ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও আগামী নির্মাণে এ স্বীকৃতি কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে?
মাওলানা মাসউদুল করিম: বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কারণ তারা সামাজিকভাবে একটা সম্মান ও আত্মতৃপ্তি পাবে।
আওয়ার ইলাম: মাদরাসা-তরুণদের উচ্চশিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং বহির্বিশ্বে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কওমি সনদের স্বীকৃতি কতটা ভূমিকা রাখতে পারে?
মাওলানা মাসউদুল করিম: এখন আমাদের রাস্তা খোলা। আমাদের গত মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব (আল্লামা শাহ আহমদ শফি) মহাসচিবকে এ বিষয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আর এটা খুব সহজ হবে আমাদের জন্য। আমাদের এখন কাজ হলো বাইরের দেশের ভার্সিটিগুলোর সাথে মুআদালা (চুক্তি) করা। এর জন্য সরকারকেও আন্তরিক হতে হব।
আওয়ার ইসলাম: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মাওলানা মাসউদুল করিম: আপনাদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন: ‘কওমি মাদরাসার মাধ্যমে ব্যয় ছাড়াই রাষ্ট্র বিশাল শিক্ষিত গোষ্ঠী পাচ্ছে’