সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রস্তুতি যেমন হবে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম

দেশের ১৪ হাজারেরও অধিক কওমি মাদরাসায় ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন করে নেবে, তাদের মুতাআলা পদ্ধতি কেমন হবে, পরীক্ষার হলে ছাত্রদের আচরণ কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়ে মতামত দিয়েছেন রাজধানী ঢাকার শীর্ষ তিন কওমি মাদরাসার শিক্ষা সচিব।

মাওলানা আশরাফুজ্জামান 
শিক্ষা সচিব, জামিয়া রাহমানিয়া মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই গ্রহণ করতে হয়। মেহমান আসলে তো কেউ তরকারি কুটাকুটি করে না। এমন পরিবেশ করে রাখতে হয় যে মেহমান আসলে তাদের খাবার পরিবেশনে কোনোরকম বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে না।

আমি ছাত্রদের উদ্দেশ্যেও তাই বলব- তারা যেন পরীক্ষার আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাত জেগে পড়া লেখা করার বিরোধী। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তো একদমই রাতজাগা যাবে না। এই সময়টাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, নিজের মন ও মেজাজকে শান্ত রাখা। পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে যেন পাগলের মতো আচরণ না করতে হয়, সে কারণে নিজের শরীরের প্রতি যত্মবান হওয়া।

পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে খাতা পাওয়ার পর তা পূরণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রশ্নপত্র ভালো করে বোঝা এবং উত্তর প্রদানের জন্য সময়কে ভাগ করে নেওয়া। এতে করে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশে বলব, আমাদের বেফাক বোর্ড থেকে কিছু নীতিমালা দেওযা হয়, সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। মোবাইল চালানো ও গাফলতি বর্জন করতে হবে। শিক্ষক যদি তৎপর থাকেন তবে ছাত্রদের ওপর তার েইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের অতিরিক্ত শাসন করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

ড. হুসাইনুল বান্না
শিক্ষা সচিব ইকরা বাংলাদেশ ঢাকা ও প্রভাষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাধারণত কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আমানতদারীতার সাথেই পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকেন। পৃথিবীর এই একমাত্র প্রতিষ্ঠানেই পরীক্ষার সময়ও নূরানী পরিবেশ বিরাজ করে। কারণ, তাদের মধ্যে থাকে লিল্লাহিয়াত ও ইখলাস।

আমাদের আকাবিরগণ এমন ছিলেন- তারা বছরের প্রত্যেকটা দিনই এমনভাবে প্রস্তুত থাকতেন যেন আজ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তার কোন মাথাব্যথা নেই। অর্থাৎ, আমি বলতে চাচ্ছি, তারা সবসময় কিতাবের মধ্যে ডুবে থাকতেন।

আমি মনে কজরি, সর্বপ্রথম কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীকে আকাবিরদের এই পথ অবলম্বন করা উচিৎ।

তবে পরীক্ষাকেন্দ্রিক কিছু পড়ালেখা থেকেই যায়। আমি বলব, কওমি মাদরাসাগুলোতে পরীক্ষার সপ্তাহ খানেক আগে পেছনের পড়া ইয়াদ ও মুতায়ালা করার জন্য যে সময়টা দেওয়া হয় সেই সময়টাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

ওই সময়ে তাকরারে বসে কঠিন ও ইখতেলাফি বিষয়গুলো নোট করে নেওয়া এবং তা পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ইয়াদ করে নেওয়া উচিৎ।

আমি ছাত্রদের উদ্দেশে বলব, তারা যেন পরীক্ষার আগের রাত্রে বেশি পড়াশোনা না করেন। এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। বরং অন্যসব দিনের মতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া এবং শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করে পড়তে বসলে বেশি ফায়দা হবে।

‘আমরা ক্ষমতায় গেলে কেবল মানুষ নয়, পশু পাখি সবাই অধিকার পাবে’

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, আত্মবিশ্বাসী হওয়া এবং মনোবল হারিয়ে না ফেলা।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশে বলব, তারা যেন পরীক্ষার হলে মোবাইল ব্যবহার না করে। বর্তমানে মোবাইল-ইন্টারনেটের রোগ ব্যাপকভাবে আলেম সমাজকেও গ্রাস করেছে।

দেখা যায়, পরীক্ষার হলে শিক্ষক মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত অন্যদিকে ছাত্র নকল নিয়ে। তবে কওমি মাদরাসায় নকল করার সংস্কৃতি এখনো চালু হয়নি। তবে সবসময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

আর একটা কথা বলব, পরীক্ষার হলে সামনের দিকে বসে উস্তাদরা আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে করে ছাত্রদের অনেক কষ্ট হয়। আমি নিজেও অনেক সময় খেয়াল করেছি এ বিষয়টা।

অনেকে পারিবারিক বা মাদরাসা সংক্রান্ত আলাপ জুড়ে দেন, এতে করে সামনে বসে থাকা ছাত্ররা মনযোগ হারিয়ে ফেলেন।  এ বিষয়গুলো বর্জন করা উচিৎ।

মাওলানা আবু বকর সোহাইল 
শিক্ষাসচিব, জামিয়া ইসলামিয়া বায়তুন নুর, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা। 

কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার পূর্বে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খেয়ারের (ছুটি) সময়ে প্রস্তুতি নেবেন। ছাত্রদের পরীক্ষার ২০ থেকে ২৫ দিনে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিৎ। পরে খেয়ারের সময়টাতে সেটাকে আরো মজবুত করার প্রতি যত্মবান হওয়া।

এ ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সাময়িক রুটিন করে মুতাআলা করলে ছাত্রদের ব্যাপক ফায়দা হবে বলে মনে করি।

বিশেষ করে পরীক্ষার আগের রাতের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর সাব্যস্ত হয়। আমি ছাত্রদের উদ্দেশে বলব, তারা যেন পরীক্ষার রাতে দীর্ঘক্ষণ পড়ালেখা না করা এবং কিছু পড়া বাকি থাকলে সকালে সম্পন্ন করা।

খেয়ারের মধ্যে কোনো ছাত্র যদি ভালো করে পড়ালেখা করে তবে পরীক্ষার আগের রাতে পুরো কিতাব সে একবার খতম দিতে পারবে অত:পর সকালে একবার। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে নাস্তা করে হলে যাবে এবং খুব শ্বান্ত মেজাজে যাবে। কোনোরকম তাড়াহুড়া পরীক্ষার জন্য উপকারী নয়। ওজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে এবং হলে প্রবেশ করবে।

পরীক্ষার ঘন্টা পরার পর সম্পূর্ণ মনযোগ প্রশ্ন ও উত্তরপত্রে দেওয়া ছাত্রদের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে বলে মনে করি।

পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশে বলব, তারা যেন হলে কোনোরকম খাওয়া-দাওয়া না করেন। এটা যেমন দৃষ্টিকটু তেমন ছাত্রদের মনযোগ নষ্ট করে। পাশাপাশি তারা যেন হলে খোশগল্প এড়িয়ে চলেন এবং ছাত্রদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখেন।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য মানতিক কতটা জরুরী?

আপনার মাদরাসা হিসাব রাখতে এসে গেল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ