রকিব মহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
ওয়াজ মাহফিল মানুষকে সদুপোদেশ দেয়া ও তাদের কল্যাণের পথে ডাকার পথ। নবী-রাসুল আ. সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে যে আহবান জানাতেন তারই প্রচলিত রূপ। আলেমগণ সে পদ্ধতিকে অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে অপরাধমুক্ত রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ।
বাংলাদেশে শীতের মৌসুমে ওয়াজ মাহফিলের প্রচলন বহুদিনের। নতুন ধান কাটার সাথে সাথে কৃষকের ঘরে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মাদরাসা-মসজিদে বছরে একবার ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন এখন অনেকটাই বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে।
বর্তমানে ওয়াজ শুধু শীতকাল বা বছরে একবার বার্ষিকীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সারা বছরই শহর কিংবা মফস্বলে ওয়াজ মাহফিল আযোজন করছে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
এদিকে, আধুনিক বিশ্বের কল্যাণে মাঠের ওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে। প্রতিটি ভিডিও ক্লিপ দেখছে লক্ষ লক্ষ ভিউয়ার। এর ফলে হাজারও মানুষ ধর্মীয় জ্ঞান পাচ্ছেন পাশাপাশি নিজেকে পবিত্র ও অপরাধমুক্ত রাখতে পারছেন।
তবে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ওয়াজের নামে ওলামায়ে কেরাম রাজনীতি এজেন্ডা বাস্তাবায়ন, ভিন্নধর্মীয় স্বাধীনতাহরণ, নারী বিদ্বেষ, স্বাধীনতা দিবস, বৈশাখ পালন সম্পর্কে ভুল মতবাদ প্রচার করছে।
এছাড়াও কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্য, অশালীন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আলোচনা করা সমাজে ওলামায়ে কেরাম সম্পর্কে বিরুপ ধারণা সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
তবে বেসরকারি টিভির ভিডিও প্রতিবেদনটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় আলেমদের মধ্যে। প্রতিবেদনকে একপেশে ও ইসলামের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক ও ইসলামিক স্কলার ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বুকে ইসলামকে লালন করেন। দেশে বাকস্বাধীনতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। ইসলামের প্রচারার্থে ওয়াজ মাহফিল করলে সেখানে বাধা প্রদান বা শরিয়তসম্মত কোনো কথাকে বয়কটের ইঙ্গিত দেওয়া এক অর্থে ইসলামেরই বিরোধিতা করা।
নারী অধিকার কিংবা রাজনৈতিক আলোচনা সবকিছুই যদি কুরআনের আলোকে হয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে কথা বলা ইসলামের ওপরে নগ্ন হস্তক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘তবে প্রকৃত অর্থে কেউ যদি কুরআনের অপব্যাখ্যা করে থাকে, শরিয়তের গণ্ডির বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলে থাকে আমাদের উচিৎ তাদের কথাকে গুরুত্ব না দেওযা। অন্যথায় হক্কানী ওলামায়ে কেরাম তাদের প্রপাগান্ডার শিকার হবে। ইসলাম সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হবে।’
ইখলাসহীন আলোচনা, শুধুমাত্র পেশাদারিত্ব, মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনী, জ্ঞানহীন সুর ও গান, হাসি-কৌতুক, বিব্রতকর অঙ্গভঙ্গি, কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা ইসলাম ও ওলামায়ে কেরামের অনেক বড়ক্ষতি করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত ওয়ায়েজ ও উত্তরা গাউসুল আজম জামে মসজিদের খতিব মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের উদ্দেশে ওয়াজের মাঠে দরকষাকষি কিংবা অভিনয় করে ওয়াজ করা শরিয়ত সমর্থন করে না। ওয়াজ মাহফিল থেকে নসিহত আসতে হবে এবং এটাই ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, রসিকতা করা ইসলামে অবৈধ নয়, নবী কারিম সা. নিজেও রসিকতা করেছেন তবে ওয়াজকে রসিকতার বস্তু বানানো ইসলামের জন্য ক্ষতিকারক।
এর মাধ্যমে জণসাধারণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও মনে করেন তিনি।
খালেদ সাইফুল্লা আইয়ুবী মনে করেন, হক্কানী ওলামায়ে কেরামের জন্য বাজারি বক্তাদের সাথে ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণ না করা উচিৎ। যারা ফেসবুকের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে রাতারাতি বক্তা বনে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন তাদের নিয়ে আলোচনায় বসা উচিৎ।
তিনি নিজেও অনেক ওয়াজীনদের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন বলে জানান।
ওয়াজের মাঠে সংস্কার আনেতে হলে এবং বাজারি বক্তাদের দৌরাত্ম থেকে উত্তরণ করতে হলে ওলামায়ে কেরামকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন মাওলানা আইয়ূবী।
তবে কোনো কোনো বক্তার বিব্রতকর বিষয় নিয়ে পুরো ওয়াজের মাঠকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকার মিডিয়াকে পরামর্শ দেন তিনি।
‘মাদরাসা পড়ুয়ারা ইঞ্জিনিয়ার হলে রডের পরিবর্তে বাঁশ দেবে না’
-আরআর
বিসফটি – বিস্তারিত জানুন