শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য হলে বড় কিছু ঘটবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ইসলামবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস। মাদরাসা ও ওয়াজের মাঠে খিদমতের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে সম্পৃক্ত বাংলাদশের অন্যতম ইসলামি রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে।

বর্তমানে তিনি দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি। এছাড়াওজাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি তিনি। নির্বাচনি রাজনীতিতে সরব মাওলানা আফেন্দী। সব ঠিক থাকলে ২০ দলীয় জোটের হয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নীলফামারী থেকে অংশ নেবেন।

জমিয়ত ও আলেমদের রাজনীতি ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান। 

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যত কী?

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী: বাংলাদেশে আমরা যারা ইসলামি রাজনীতি করি, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যই ইসলামি রাজনীতি করে থাকি।

ভবিষ্যতের সফলতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দান করবেন। আমরা আশা করি আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দেশে ইসলামি নেজাম প্রতিষ্ঠিত করবেন। এ দেশের মানুষ ইসলামি শাসন ব্যবস্থা ও আল্লাহর নেজামের সুফল ভোগ করবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সেটি মন থেকে বিশ্বাস করি।

আওয়ার ইসলাম: আলেম রাজনীতিকদের এ সম্মিলন তো আসলে থাকছে না। কিছুদিন আগেও জমিয়ত ভাঙনের মুখে পড়েছে...

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী: বাংলাদেশের একটি বড় দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এরকম একটি দলে ভাঙন বা ফাঁটল অস্বাভাবিক কিছু না।

নানান ঘাত-প্রতিঘাত আসবে, সবকিছু মোকাবিলা করেই লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য সামনে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। মূল বিষয়ে বলতে গেলে আমাদের দলের নির্বাহী পদটি নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিলো।

আমরা নিরাশ নই। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাহে তো এসব সমাধান হয়ে যাবে।

আওয়ার ইসলাম: আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন কিনা?

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী: হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ আগামী নির্বাচনের জন্য বেশ ভালো প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। আমাদের কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে নিজেদের এলাকায়।

যেহেতু ইসলামি রাজনীতির বৃহত্তম একটি দল জমিয়ত এবং সবচেয়ে প্রচীন ও পুরোনো একটি দল, সে হিসেবে বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেম উলামা এতে সম্পৃক্ত। সে সুবাদে বাংলাদেশের সবগুলো জেলায় আমাদের অবস্থান ভালো। সারাদেশে প্রায় শক্তিশালী ৫০টি আসন টার্গেট করে আমাদের নির্বাচন প্রস্তুতি চলছে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি দীর্ঘ দিন ধরে ইসলামি রাজনীতিতে সক্রিয়। তো ইসলামি রাজনীতির ক্ষেত্রে আপনি কাকে আদর্শ মানেন? কার চিন্তা চেতনায় অগ্রসর হচ্ছেন?

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী: আমাদের আকাবির আসলাফদের আমরা রাজনীতির আদর্শ হিসেবে মনে করি।

তবে আমরা বিশেষ করে ইসলামি রাজনীতির সিপাহ সালার শায়খুল আরব ওয়াল আজম শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. কে আমাদের আদর্শ হিসেবে মনে করি। তার ত্যাগ ও কুরবানিকে আমরা আমাদের রাজনীতির পাথেয় মনে করি।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শীর্ষস্থানে রয়েছে। কিছু মানুষ মনে করে দল দুটি ইসলামি রাজনীতিকে সময়ে সময়ে অপব্যবহার করে থাকে। বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি: বাংলাদেশের বড় দলগুলো ছোট দলগুলোকে কাছে টানতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কাছে টেনে তাদের যদি মিসগাইড করে তাহলে এর থেকে বাঁচার দায়িত্ব নিজেদের।

এ ক্ষেত্রে সতর্কাতা জরুরি। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে কেউ মিসগাইড করার চেষ্টা করতে পারবে না। অতীতে জমিয়তকে কোনো বড়দল মিসগাইড করছে বলেও আমি মনে করি না।

আবার কোনো বড় দল আমাদের দলে এমন কোনো প্রভাবও বিস্তার করেনি যে আমরা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলে যাবো বা আমাদের আদর্শ থেকে পিছু হঠবো।

আমরা আমাদের স্বকিয়তা কোনোভাবেই হারাবো না ইনশাআল্লাহ। আমরা কারো লেজুরভিত্তিক রাজনীতি করি না। আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই রাজনীতি করি।

ভিজিট ও সাবস্ক্রাইব করুন আওয়ার ইসলাম টিভি

কোনো মানুষকে খুশি করার জন্যও রাজনীতি করি না। আমরা আমাদের চেষ্টা করে যাবো আর সফলতা দিবেন আল্লাহ তায়ালা।

রাজনীতির কারণে নয় বরং কৌশলগত কিছু কারণে আমরা কারো সঙ্গে সম্পর্ক রাখি এটা অবশ্য দলের স্বার্থে।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলো অধিকাংশ দেখা যায় মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্ভর, এ গুটিকতক মানুষের দ্বারা দেশ ও সামাজের পরিবর্তন কী আশা করা যায়?

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী: দেখেন নীতিগত দিক থেকে আমি এ প্রশ্নটির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। কারণ প্রশ্নটি ঠিক নয়। ইসলামি দলগুলো এমন আমি মনে করি না।

আমি আমার দলের ব্যাপারে বলি, দেখেন আমার দল এমন কোনো রাজনীতি করে না যা শুধু মাদরাসা নির্ভর। বরং আমি ২০০১ থেকে আমার এলাকায় নির্বাচন করে আসছি সেখানে কয়টা মাদরাসা আছে। কিন্তু আমাকে মানুষ ভোট দিয়ে আসছে।

আমরা কোনো নির্ভরতার রাজনীতি করি না। আমি ইতোপূর্বে নির্বাচন করেছি নীলফমারীর ডোমার ডিমলা আসনে। সেখানকার সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।

আওয়ার ইসলাম: নির্বাচনের স্বার্থে যদি ইসলামি দলগুলো একত্রিত হয় তাহলে সংসদে বেশ কিছু আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও কেনো ইসলামি দলগুলো একত্রিত হচ্ছে না?

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি: চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। বাংলাদেশে এমনটাই হওয়া উচিৎ। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলো যদি এক হয়, একতাবদ্ধ হয়, এক প্ল্যাটফর্মে এসে একত্রিত হয় তাহলে এদেশে অনেক কিছুই ঘটবে।

বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আলেম উলামা ও ইসলামি রাজনৈতিক শক্তি সকল মহলের কাছে একটা বড় ফ্যাক্ট। এ জায়গাটাতে যদি সংসদে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে আমরা এক হতে পারি তাহলে ভিন্ন কিছু ঘটবে।

কিন্তু এমনটা ঘটছে না। এজন্য আমরা হতাশ নই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ একদিন সেটি বাস্তবায়ন হবে।

(সাক্ষাৎকারটি গত রমজানে নেয়া। শ্রুতি লিখন আবদুল্লাহ তামিম) -আরআর

বিসফটি – বিস্তারিত জানুন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ