শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


‘দাওয়াতে-তাবলিগে ফাঁটল সৃষ্টির মৌলিক ৩ কারণ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শুক্রবার (৩১ আগস্ট) অনুষ্টিত হলো কক্সবাজার জেলা মারকাযে তাবলিগি সাথীদের ত্রৈমাসিক জোড়। এতে প্রায় ১০০ টির বেশি দেশ সফরকারী, কাকরাইলের মুরব্বী মাওলানা নজরুল ইসলাম কাসেমী গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন।

আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সে বয়ানটি অনুলিখন করেছেন হাফেজ মাওলানা রিদওয়ানুল কাদির

হামদ এবং সালাতের পর! মাওলানা ইলিয়াছ রহ. দাওয়াতের মকসাদ হিসেবে উল্লেখ করতেন, রাসুল সা. এর ওফাতের দিন উম্মত যে অবস্থায় ছিলো, সে অবস্থায় উম্মতকে নিয়ে যাওয়া।

ইলিয়াছ রহ. এর দরদ আর ব্যথা এমন ছিলো, তা দুনিয়া থেকে আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

তিনি উম্মতকে এমন একটা প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, পুরো উম্মত এক শরীর, এক দেহ, এক কলবে পরিণত হয়েছিলো। যেখানে ছিলোনা কোন ধনী-গরিব, কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ, আরব-আজম, মালিক-শ্রমিক, উঁচু-নীচু, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গাঁয়ের পার্থক্য।

পুরো উম্মত বসে যতো এক দস্তরখানে। আজকে এই উম্মত দুই ভাগে বিভক্ত হলো কেন?

আগে আলেমরা তাবলিগের কাজে সময় দিতেন, তাবলিগি ভাইদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন। যারা ব্যস্ততার দরুন সময় দিতে পারতেন না, তারা সম্ভাব্য সব উপায়ে দাওয়াতের সাহায্য -সহযোগিতা করতেন।

কিন্তু আজ কী হলো, আলেমরা জায়গায় জায়গায় গিয়ে ওজাহাতি জোড় করছেন? আমাদের ভুল ধরছেন?

ভাই! এই কাজ শুরু হলো কার মাধ্যমে? মাওলানা ইলিয়াছ রহ. এর মাধ্যমে। তিনি তো একজন আলেম ছিলেন।

হিন্দুস্তানে উম্মতের গোমরাহি দেখে তিনি যারপরনাই পেরেশান হয়ে চলে গেলেন মক্কা শরীফ। সেখানে স্বপ্নযোগে রাসুল সা. তাকে এই কাজের তারতিব বলে দেন।

সাথে সাথে তিনি এই কাজ শুরু করেননি, বরং এই কাজের তারতিব তিনি তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ আলেমদের সামনে উপস্থাপন করেন। তন্মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুফতী কিফায়তুল্লাহ রহ., মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ., মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী রহ., মাওলানা রায়পুরী রহ., শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহ. প্রমুখ।

হাকীমুল উম্মত মাওলানা থানভী রহ. এর সামনে কাজের তারতিব উপস্থাপন করলে তিনি বলেছিলেন, কাজ তো বহুত উঁচা! কিন্তু কাজটা করবে কে?

কিন্তু পরবর্তীতে থানভী রহ. জামাতের কাজকর্ম দেখে খুশি প্রকাশ করে বলেছিলেন, আমার ইলিয়াছ তো নিরাশাকে আশায় পরিণত করে দিয়েছে!

আর বাংলাদেশে যিনি এই কাজ নিয়ে এসেছেন, তিনিও একজন আলেম। তিনি হলেন বড় হুজুর মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ.। আল্লামা শমসুল হক ফরিদপুরী (সদর সাহেব রহ.) এর নির্দেশে তিনি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুস্তান গিয়ে গিয়ে কাজের তারতিব শিখে তা বাংলাদেশে চালু করেন। তিনিও তো আলেম ছিলেন!

তো মেরে মুহতরম দোস্ত বুজুর্গ! বলতে চেয়েছিলাম, এই কাজের প্রচার-প্রসারে ওলামায়ে কেরামের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কিন্তু আজ কেন ওলামায়ে কেরামের সাথে আমাদের সাথীরা বিদ্বেষ পোষণ করেন?

আগে যাদের দেখলে আপনারা সালাম-মুসাফাহা, হাদিয়া-তোহফা দেয়ার জন্য সিরিয়াল ধরতেন, আজকে কেন তাদের আপনারা সহ্য করতে পারেন না? তাদেরকে নিজেদের দুশমন কেন মনে করা শুরু করলেন? কী হয়ে গেলো ভাই?

আহ! বলতে অন্তরটা ফেটে যায়, আজ আমরা তো নিজেদের জান হাতে নিয়েই চলাফেরা করি! ওয়াল্লাহ! আমারও হযরত মারয়াম আ. এর মতো বলতে ইচ্ছা করে, হায়! আমি যদি এ দৃশ্য দেখার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করতাম! আহ! এ দৃশ্য যে কলিজাটা বিদীর্ণ করে দিচ্ছে!

অনেকেই বলে, বাংলাদেশের আলেমরাই তাবলিগকে দুভাগ করে দিয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও তাবলিগ দুভাগ হয়নি!

আহ! ভাইরে! এতো মিথ্যাচারের কী প্রয়োজন! আমি তো আগস্টের ৪ তারিখ আমেরিকায় ইজতিমা শেষ করে আসলাম! সেখানেও তো তাবলিগ দুভাগে বিভক্ত! অস্ট্রিয়া, লণ্ডন, জাপান, মালয়েশিয়াসহ অসংখ্য দেশে তাবলিগের নিসবতে সফর হয়েছে! সর্বত্রই তো ভাঙনের সুর!

গত মাসের আমেরিকার শরয়ী কাউন্সিলের (যেটা আবার সরকার অনুমোদিত) ৫০ জন সদস্য স্বাক্ষর করেছে, যে তারা এই ব্যাপারে দেওবন্দের সাথে একমত।

তারা তুখোড় ইংরেজি, আরবি, উর্দু জানার পরও দেওবন্দকে অনুসরণ করার কথা ঘোষণা দিলো, আর আপনি দেওবন্দকে স্বীকারই করতে চাচ্ছেন না!

তো ভাই! আসল কথা বলতে চাচ্ছিলাম! তাবলিগ জামাতের এই কোন্দল, ফাটল, গ্রুপিং, ভাঙনের কারণ কী? আমার ক্ষুদ্র গবেষণা মতে, এই বিভক্তির মূল কারণ হলো মাত্র ৩ টি।

১. এক নাম্বার কারণ হলো, তাবলিগের এই মেহনত ৩ হজরতজী (মাওলানা ইলিয়াছ রহ., মাওলানা ইউসুফ রহ., মাওলানা এনামুল হাসান রহ.)'র উসুল থেকে সরে যাওয়ায় ফিতনার মূল কারণ।

হজরতজীর ৭৫ বছরের তাবলিগে কারো দ্বিমত ছিলো না। যত গণ্ডগোল, তা শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর পূর্ব থেকে।

২. দুই নাম্বার কারণ হলো, পূর্বে এই মেহনতেরর মিম্বার থেকে শুধুমাত্র ৬ নাম্বারের বয়ান হতো।
থানভী রহ. একবার ইলিয়াছ রহ. কে জিজ্ঞেস করলেন, মৌলভী ইলিয়াছ! এখন তো তোমার জামাতের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত!

চার মাজহাবের লোক, ভিন্ন ভাষার লোক, ভিন্ন তরিকার লোক সবাই এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে! পরবর্তীতে না আবার বিশাল সমস্যা হয়ে যায়!

আপনার ব্যবসা সহজ করবে বিসফটি – বিস্তারিত জানুন

প্রত্যুত্তরে হজরতজী ইলিয়াছ রহ. বলেন, হযরত! আমি তাবলিগের জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করেছি। সবাইকে এই সীমার ভেতরেই তাবলিগ করতে হবে। এখানে শুধুমাত্র ৬ উসুলের আলোচনা হবে। চাই তিনি মুফতি, মুহাদ্দিস হোক, চাই তিনি যে মাজহাবের হোকনা কেন, তিনি যে ভাষার, যে গোত্রেরই হোকনা কেন, ৬ নাম্বার থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

এই মিম্বার থেকে শুধু ফাজায়েলের আলোচনা হবে, মাসায়েলের আলোচনা ওলামায়ে কেরামের খেদমতে সোপর্দ করা হবে।

মেরে মুহতরম দোস্ত বুজুর্গ! যখন থেকেই ৬ নাম্বারের বাইরের আলোচনা শুরু হলো, তখন থেকেই যত গণ্ডগোল আরম্ভ হয়ে গেলো!

এখন তো ৬ নাম্বারের বাইরে যেতে যেতে নবীদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। আম্বিয়ায়ে কেরামের দোষত্রুটি বের করা হচ্ছে। আরে ভাই! হেদায়েতের মালিক আল্লাহ নয়, এই কথা বলে আল্লাহকে পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে না!

মাদরাসায় যাকাত দেয়া যাবে না, ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল নিয়ে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না ভাইরে! এগুলোর সাথে ৬ নাম্বারের কী সম্পর্ক, আপনারাই বলুন?

৩. তিন নম্বর কারণ হলো, নিজেকে একক আমিরের দাবি করা। সারাদুনিয়ার আললি শুরাকে প্রত্যাখ্যান করা।

অনেকেই বিভ্রান্তি প্রচার করেন, যে মাওলানা সাআদ সাহেব নাকি রুজু করেছেন! আমি তো বলি, রুজু করতে হবে কেন? তিনি যদি মাত্র কয়েক লাইনের একটি চিঠি কাকরাইলসহ সারা দুনিয়ার মারকাযগুলোতে পাঠান যে, আমার যেসব কথা সম্পর্কে আহলে ইলমরা আপত্তি তুলেছেন, সেগুলো আপনারা আর চালাবেন না! হজরতজীর আমলে তাবলীগের মেহনত যেভাবে চলমান ছিলো, এখনও সেভাবে চালাতে থাকুন!

ব্যস! মাত্র এতটুকু হলেই যথেষ্ট! কিন্তু তিনি কি এতটুকু কাজও করেছেন? করেননি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ওলামা হযরাতদের নেগরানিতে দাওয়াতের এই মুবারক মেহনতে জুড়ে থাকার তাওফিক দান করুন।

আমাদের সে বাড়ির নাম ছিলো ‘কিংস কোর্ট’: আল্লামা তাকি উসমানি

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ