পলাশ রহমান
ইতালি থেকে
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার একটা বড় পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, চট্রগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জামায়াত নেতারা গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এই খবরে বেশ খুশি খুশি মনে হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের। তাদের অনেকেই খবরের লিংকসহ বিভিন্ন মন্তব্য ছড়িয়েছেন সোস্যাল মিডিয়ায়। কেউ কেউ জামায়াত বিরোধী বড় বড় রচনা লিখে ফেলেছেন। যে যেভাবে পেরেছেন জামায়াতকে একহাত নিতে চেষ্টা করেছেন।
কোনো সন্দেহ নেই একহাত নেয়ার মতোই খবর এটি। কারণ জামায়াত বাংলাদেশে ইসলামের রাজনীতি করে। দেশের ইসলামপন্থীদের মধ্যে তারা সব চেয়ে বড় এবং পোড় খাওয়া সংগঠন। তারা আদর্শের রাজনীতি করে। সুসংগঠিত রাজনীতি করে। তাদের নেতারা যদি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীতে জড়ায়, জনগণের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তা যে কোনো বিবেচনায় সর্বোচ্চ সমালোচনার দাবি রাখে।
জামায়াতের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীর এ জাতীয় খবরে দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। ইসলামপন্থীদের সম্পর্কে বিরুপ ধারণা সৃষ্টি হয়। সার্বিক বিবেচনায় ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যেমন জামায়াতের স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার কারণে আমাদের দেশে ইসলামপন্থী রাজনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধর্মের রাজনীতি, ইসলামের রাজনীতি সম্পর্কে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে। ইসলামপন্থী রাজনীতির পথ বন্ধুর হয়েছে।
সুতরাং জামায়াত নেতাদের ইসলাম বিরোধী এবং নৈতিকতা বিরোধী এসব কর্মকাণ্ড থেকে অন্যান্য ইসলামি দলগুলোকে শিক্ষা নিতে হবে। তাদের নেতাকর্মীরা যাতে এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে- অন্যের ভুল বা অন্যায়ের সমালোচনায় কোনো স্বার্থকতা নেই, যদি তা থেকে শিক্ষা নেয়া না যায়।
আমার জানা মতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা ব্যাপক হারে তাদের সংগঠন কে পুঁজি করে জামায়াত নেতাদের মতো বিভিন্ন নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তোলার চেষ্টা করছেন। আমি খুব স্পষ্টভাবে একটা জেলা শহরের নাম উল্লেখ করতে পারি- সেখানে ইসলামী আন্দোলন এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কমপক্ষে এক ডজন নেতা সরাসরী এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত।
তারা সংগঠনের পদ পদবী ব্যবহার করে, সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতাদের সাথে সখ্যতা দেখিয়ে সংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মী সমর্থকদের আকৃষ্ট করেন। তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেন। মোদ্দা কথা হলো তারা সংগঠনকে পুঁজি করে ব্যবসা করেন। এ নিয়ে তাদের ভেতরে চাপা কোন্দল সৃষ্টি হয়। নিজেদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলে, কে কতো নেতাকর্মীকে তার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ভেড়াতে পারে।
যেমনটা জামায়াত শিবির শুরু করেছিল অনেক বছর আগে থেকে। ফলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছে, কিন্তু তাদের সংগঠন দূর্বল হয়েছে। নানা কিছিমের আর্থিক কেলেঙ্কারীর খবর এখন তাদের জন্য ‘গোদের উপর বিষ ফোড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে।
আমি দাবি করছি না- গোটা দেশে ইসলামী আন্দোলনের চিত্র অভিন্ন। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো সংগঠনকে পুঁজি করে এ জাতীয় ব্যবসা অতি দ্রুত সংক্রমিত হয়। মহামারি আকারে শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এক সময় নেতাকর্মীরা ফেপে ফুলে কলাগাছ হয়, কিন্তু রুগ্ন হয় সংগঠন। পাশাপাশি নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ে নানা রকমের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীতে।
[যারা ব্যবসা ও ব্যবসার হিসাব নিয়ে জটিলতায় রয়েছেন তাদের জন্য এলো বিসফটি। ব্যবসাকে সহজ ও হাতের মুঠোয় নিন বিসফটির সাহায্যে- রেজিস্ট্রেশন করুন বিসফটিতে।]
পৃথিবীর কোথাও কোনো ইতিহাস নেই- আর্থিক অতি স্বচ্ছলতার মধ্যে দিয়ে কোনো বিপ্লব বা সংগ্রাম সফল হয়েছে। বরং অসংখ্য প্রমান দেখানো যাবে- যে সংগঠনের নেতাকর্মীরা যতো বেশি আর্থিকভাবে সফলতা অর্জন করেছে, তাদের হাত ধরেই সংগঠন তত বেশি দূর্বল হয়েছে। সংগ্রাম, বিপ্লব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে আদর্শিক সংগঠন বা সংগ্রাম, বিপ্লবের বেলায় এ উদাহরণ শতভাগ সঠিক।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উচিৎ এসব বিষয়ে এখনই সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা। সংগঠনকে পুঁজি করে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করা। সংগঠনের সরাসরী নেতাকর্মীদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা তৈরি করা এবং তা শক্তভাবে কার্যকর করা।
নয়তো সেদিন খুব দূরে নয়, জামায়াত নেতাদের মতো ইসলামী আন্দোলনের নেতারাও আর্থিক কেলেঙ্কারীর কারণে পত্রিকার শিরনামে হবে। যা দেশের ইসলামপন্থীদের জন্য হবে সর্বোচ্চ দুর্ভাগ্যজনক।
লেখক: ইসলামি রাজনীতি বিশ্লেষক
এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
রোহিঙ্গা পরিণতির দিকে যাচ্ছে কি আসামের ৪০ লাখ মুসলিম?
-আরআর