মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারী কিশোর শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত ২৯ জুলাই শুরু হওয়া আন্দোলনের পরিস্থিতি সরকারের আশ্বাসে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে। রাজধানীর বিমান বন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজিব ও দিয়া খানম মিমের মৃত্যুর ঘটনায় স্কুল-কলেজের কিশোর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢাকা শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকা শহরের সড়কে নেমে আন্দোলন করে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও।
জীবনের নিরাপত্তা একজন মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এ অধিকার নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র যখন এ দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করে তখনই মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে মিছিল, সমাবেশ, আন্দোলন করতে বাধ্য হয়। গত এক সপ্তাহ যাবত বাংলাদেশে চলমান শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন এরই বহিঃপ্রকাশ।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে গত কয়েকদিনে আমাদেরকে আলোর দিশা দেখিয়েছে। এরা দেশের মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সাংবাদিক, বিচারপতি, সরকারি দল, বিরোধী দল, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনী এবং পুলিশ-বিজিবিসহ সর্বস্তরের মানুষকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ৪৭ বছরের রাষ্ট্রটির ভীত কতো নাজুক।
এর মেরামত কতো প্রয়োজন, দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা কতোটা দুর্বল তা প্রমাণ করে দিয়েছে এ শিক্ষার্থীরা। এদেশের পরিবহন ব্যবস্থা যে পুরোপুরি অনিয়মের মধ্যে ডুবে আছে, তার বহু প্রমাণ দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী-আমলারা পর্যন্ত ট্রাফিক আইন মানেন না।
লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন নিয়ে চলাচল করছেন মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিক ও বিচারপতিরা। যে পুলিশ এসবের দেখাশোনা করবে, তাদেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যে নজির স্থাপন করেছে, তা মেনে নিলে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নতি হতে বাধ্য। রাস্তায় কিভাবে যাত্রী ও পথচারীদের সেবা দিতে হয়, তারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ মেনে নেয়া।
ইতিমধ্যে সরকারও তাদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া ও করিমের পরিবারকে অনুদান হিসেবে ২০ লাখ টাকা করে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র প্রদান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে ৫ টি বাস দেওয়া হয়েছে। অনেক দিন ধরে আটকে থাকা সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রীসভায় উঠেছে।
প্রতিটি আন্দোলনের যেমন শুরু আছে, তেমনি শেষও আছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, ৪৭ বছরের অব্যবস্থাপনাকে একদিনে মেরামত করা যাবে না।
আলোচনা করে তা বাস্তবায়নে সরকারকে সময় দিতে হবে। কেননা সব কিছুতেই নিয়মতান্ত্রিকতা রয়েছে। সরকারকেও আরো সহনশীল আচরণ করতে হবে। একথা আমরা যতো তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবো ততোই দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে।
hashemy1984@gmail.com
এটি/আওয়ার ইসলাম
সৌদির সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা বন্ধের ঘোষণা মাহাথির সরকারের