আওয়ার ইসলাম: বাসচাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর পর টানা পাঁচ দিন সড়কে বিক্ষোভ করে নিজেদের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে শিক্ষার্থীরা।
গত ২৯ জুলাই জাবালে নূরের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একদল শিক্ষার্থীর উপর উঠে যায়।
তাতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়া তাদের সহপাঠিরা সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি বাস ভাংচুর করে।
নৌমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের এক বক্তব্যের পর ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও পরদিন সড়কে নামে, তাদের অবরোধে আটকা পড়েন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ নানা কর্মকর্তাও। এরপর বিভিন্ন জেলায়ও শুরু হয় বিক্ষোভ।
যে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা সেগুলো হচ্ছে–
১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
২. নৌপরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না।
৪. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।
৫. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. প্রত্যেক সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে।
৭. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের নিতে হবে।
৯. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
লাগাতার বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) পরিবহন সংশ্লিষ্টদের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ডেকে এনে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেয়ার পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ডেকে নেন নিহত দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের পরিবারকে। তাদের ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি সড়কে নিরাপত্তায় নানা নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে দিয়ার বাবা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান।
পরে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে ৫টি বাস দেয়াসহ নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে ও দূর্ঘটনা রোধে রমিজ উদ্দিন স্কুল সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডার পাস নির্মাণ, দেশের প্রতিটি স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় স্পিড ব্রেকার বসানো এবং শুধু স্কুলের জন্য প্ল্যাকার্ড সম্বলিত বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেয়ার ঘোষণা দেন।
সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থাও দ্রুত মামলা শেষ করার বিধান রেখে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে কঠোর ট্রাফিক আইন দ্রুত পাশ করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
এ বিষয়ে বুধবার (০১ আগস্ট) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাফিক আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং করতে (সংবিধান বা চলমান কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না যাচাই-বাছাই করে) সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগামী সোমবার (০৬ আগস্ট) আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে আগামী মন্ত্রিসভায় আইনটি অনুমোদন হতে পারে। মন্ত্রি সভায় আইনটি অনুমোদন হলে আগামী সংসদ অধিবেশনে এটিকে পাশ করা হবে।
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সড়ক দূর্ঘটনা রোধে গণপরিবহনের ফিটনেস যাচাইয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন।
‘হাসি’র জন্য নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান দূর্ঘটনায় নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়ে ক্ষমা চান এবং সমবেদনা জানান। দূর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত জাবালে নূরের ২টি বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।
জাবালে নূর পরিবহন বাস মালিকদের একজন মো. শাহাদাৎ হোসেন এবং গাড়ির চালক মো. মাসুম বিল্লাহ সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
এছাড়া এ মামলায় গ্রেফতার মো. এনায়েত হোসেন, মো. সোহাগ আলী, মো. রিপন হোসেন এবং মো. জোবায়ের কারাগারে রয়েছেন। আগামী ৬ আগস্ট এদের রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে।
মহাসড়কগুলোতেও চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। সর্বশেষ সরকারি গাড়ির চালকদেরও গাড়ির সঙ্গে মূল কাগজপত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পর আন্দোলন অযৌক্তিক হবে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের ৯ দফা সমর্থনে ইশা ছাত্র আন্দোলনের মানববন্ধন
আরএম/