শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রাজনীতিতে তৃতীয় বলে কিছু নেই, আমাদের লক্ষ্য প্রথম: গাজী আতাউর রহমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পরপর পাঁচ সিটি নির্বাচনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ভোটের রাজনীতিতে চমক সৃষ্টি করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি নির্বাচনেও সে আশা জিইয়ে রেখেছিল দলটির নেতাকর্মীরা। কিন্তু সুষ্ঠু ভোটের অভাবে তিন সিটিতেই নির্বাচন বর্জন করেছে দলটি।

তবে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও ইসলামী আন্দোলন ভোট বর্জন করায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কোথাও কোথাও। হতাশা, ক্ষোভ ও ক্রোধ দেখা যাচ্ছে নেতা-কর্মীদের মাঝেও।

এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচন পরিচালনা বিষয়ক সেলের সদস্য মাওলানা গাজী আতাউর রহমান

অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বলেছেন তিনি। ‘লেখাপড়া ও খেলাধুলায় তৃতীয় স্থান থাকলেও রাজনীতিতে নেই, আমাদের লক্ষ্য প্রথম’, ‘আমরা কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবো না’, ‘জামায়াত আমাদের প্রতিপক্ষ নয়’, খেলায় লড়াই করতে হলে রেফারিকে নিরপেক্ষ থাকতে হয় আমরা তা পাইনি’।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তার সঙ্গে কথা বলে তুলে এনেছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

গাজী আতাউর রহমান : বর্তমান সরকারের সময়ে হওয়া নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সর্বশেষ তিন সিটির নির্বাচন। নির্বাচনের নামে হওয়া প্রহসন দেশবাসী দেখেছে। দেশি ও বিদেশি মিডিয়ায় এসেছে।

আওয়ার ইসলাম : সিলেটে তো বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হলো?

গাজী আতাউর রহমান : আমি মনে করি, এটাও সরকারের পরিকল্পনার একটি অংশ। তাদের ছক অনুযায়ী বিএনপির প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়েছে। আসলে রংপুর সিটি নির্বাচনের পর আর সব সিটি নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : গত পাঁচ সিটি নির্বাচনে আপনাদের প্রার্থী তুলনামূলক ভালো ফলাফল করায় কর্মীরা বিপুল উৎসাহে সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো। কিন্তু এখানে তো ব্যতিক্রম দেখলাম আমরা। কিছুটা হতাশাও এসেছে কর্মীদের মধ্যে।

গাজী আতাউর রহমান : হতাশ কেনো হবে? নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হতো, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতো তাহলে আমাদের মন খারাপের বিষয় ছিলো। তাছাড়া সিটি নির্বাচনের লক্ষ্য ছিলো সিটিগুলোতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করা। আলহামদুলিল্লাহ! তা হয়েছে।

আমি সংকোচ ছাড়াই বলছি, সারাদেশের মধ্যে সিলেট ও রাজশাহীতে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পুরো সিলেট বিভাগ থেকে আমরা মাত্র একটি আসনে (হবিগঞ্জ সদর) প্রার্থী দিয়েছিলাম।

২০০৮ সালে রাজশাহীতেও আমরা প্রার্থী দিতে পারি নি। আল হামদুলিল্লাহ! সেই সঙ্কট আমরা কাটিয়ে উঠেছি। সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সবগুলোতে এবং রাজশাহীর সব ওয়ার্ডে এখন আমাদের কমিটি আছে।

আমাদের বড় টার্গেট ছিলো রাজশাহী ও সিলেটের সব ভোটারের কাছে হাতপাখার পরিচিতি তুলে ধরা। আমার মনে হয়, আমরা তা পেরেছি।

আওয়ার ইসলাম : আর বরিশাল?

গাজী আতাউর রহমান : বরিশালে আমরা ১১টার পরপর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। সব কেন্দ্র থেকে এজেন্ট ও কর্মীদের ক্লোজ করে নিয়েছি। অবশ্য থাকার পরিবেশও ছিলো না। আমরা মাঠে থাকলে রক্ত ক্ষয় হতো।

বলা যায়, আমরা মাঠে ছিলাম দুই ঘণ্টা। দুই ঘণ্টায় আমাদের প্রার্থী ভোট পেয়েছে ৬ হাজার। সুতরাং কর্মীদের হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই।

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের দলীয় প্রধানের ঘোষণা ছিলো নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। আপনারা বলছেন, সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় নি; এখন কি জাতীয় নির্বাচনে যাবেন?

গাজী আতাউর রহমান : আমরা পূর্বে ঘোষণা থেকে সরে আসি নি। আমাদের কথা সব সময় এক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আমরা এখনও করছি। তবে আমরা কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দিবো না।

নির্বাচন হলো জনগণের কাছে পৌঁছানের একটা সুযোগ আমরা এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। তাছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলেই প্রমাণ হবে এ সরকার নির্বাচনের নামে কেমন প্রহসন করছে।

আওয়ার ইসলাম : তার মানে আপনারা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে পজেটিভ?

গাজী আতাউর রহমান : আমরা নির্বাচন করতে চাই। অবশ্যই নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে। সেজন্য আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি চলছে। তবুও বলতে হবে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসে নি।

আওয়ার ইসলাম : দলীয় সরকারের অধীনে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানের সুষ্ঠু নির্বাচন কি সম্ভব?

গাজী আতাউর রহমান : নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমাদের প্রধান দাবি দু’টো। এক. নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, দুই. দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়া।

কারণ, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে একটি নির্ধারিত দলের প্রতিনিধিত্ব করছে তা প্রমাণিত। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মূল সমস্যা হলো প্রশাসন ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় তাদের পক্ষে কাজ করে। ক্ষেত্র বিশেষ নির্বাচন কমিশনও অসহায় হয়ে যায়।

আওয়ার ইসলাম : কেউ কেউ বলছে, ইসলামি দল হিসেবে আপনাদের অবস্থানের বিপরীতে সিলেটে জামায়াতে ইসলামী পৃথক প্রার্থী দিয়েছি। আপনিও বিষয়টি তেমন মনে করেন?

গাজী আতাউর রহমান : আমাদের প্রতিযোগিতা জামায়াতের সাথে না। তারা আমাদের প্রতিপক্ষও না। আমাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

আর তৃতীয় স্থানের বিষয়টি অতি উৎসাহীরা বলে। লেখাপড়া ও খেলাধুলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের পুরস্কার আছে। কিন্তু রাজনীতিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের কোনো মূল্য নেই। চেয়ার একটা। দেখার বিষয় হলো ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে কি না? আমাদের লক্ষ্য প্রথম স্থান।

জামায়াতে ইসলামী আমাদের প্রতিপক্ষ না। তাদের আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখাতেও চাই না।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বললেন, খালি মাঠে ছেড়ে দিবেন না। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের একাংশও নির্বাচনী প্রহসন প্রতিরোধের কথা বলছে …!

গাজী আতাউর রহমান : প্রতিরোধের মানসিকতা আমাদের আছে এবং বরিশালে অন্তত তা আমাদের ছিলো। কিন্তু খেলায় লড়াই করতে হলে রেফারিকে নিরপেক্ষ হতে হয়। না হলে লড়াই করে লাভ কী?

আমরা লড়াই করতে পারি সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের সাথে। প্রশাসন ও সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াই করবো কিভাবে? তারা যখন একটি দলের হয়ে কাজ করে, দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন লজ্জায় আমাদের মাথা নত হয়ে যায়।

তাদের সাথে তো আমি লড়াই করবো না। অসম এ সংঘাত অর্থহীন রক্তক্ষয়কেই উৎসাহিত করবে।

আওয়ার ইসলাম : তাহলে কি ছেড়ে দেয়াই হলো না?

গাজী আতাউর রহমান : না। নির্বাচনে অংশগ্রহণই তাদেরকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ করা। তাছাড়া তিন সিটি নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছি।

এমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি সামনে আরও দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের আগামীর পরিকল্পনা কী?

গাজী আতাউর রহমান : জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি চলছে। সিটি নির্বাচনের জন্য এতো দিন পূর্ণ মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় নি। এখন আমাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিই একমাত্র মনোযোগ কেন্দ্র হবে।

আওয়ার ইসলাম : জাতীয় নির্বাচনের আগে সমমনা দলগুলোর সাথে নির্বাচনী জোট করার কোনো সম্ভাবনা আছে?

গাজী আতাউর রহমান : ঐক্য সব সময় ভালো। আমরা ঐক্য প্রয়াসী। কিন্তু আমাদের তিনশো আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত। তারা মাঠে নেমে গেছে। তাই আপাতত নির্বাচনী ঐক্যের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

আওয়ার ইসলাম : আওয়ার ইসলামকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

গাজী আতাউর রহমান : আওয়ার ইসলাম পরিবার ও তার পাঠকদেরও আন্তরিক মোবারকবাদ।

আগের সাক্ষাৎকার: সড়কে মৃত্যুর ‍মিছিল থামবে কীভাবে?

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ