শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


আত্মরক্ষাও কি অপরাধ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উমর ফারূক আত তাসলিম

গত ১৮ জুলাই জি হিন্দুস্তান চ্যানেলের তিন তালাক ইস্যুতে বিতর্ক অনুষ্ঠানে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মেম্বার মাওলানা ইজায আরশাদ কাসেমির সাথে সুপ্রিম কোর্টের উকিল লক্ষ্মি শর্মা (ফারাহ ফাইয়াজ) এর হাতাহাতি হয়। এতে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ মাওলানা কাসেমিকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়।

তার নামে ৩৫৪ ধারায় নারী সুরক্ষা আইনে মামলা হয়েছে। কোর্টে উঠানো হলে কোর্ট তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়।

এ ঘটনায় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, এতে মাওলানা কাসেমির দোষ প্রমাণিত হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।

ঘটনা যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দু:খজনক। তবে একে ইস্যু করে ভারতীয় মিডিয়াগুলো মাওলানাকে দোষারোপ করে যেভাবে একতরফা নিউজ করছে, তা সাংবাদিকতার জন্য লজ্জাজনক।

নারীরা মায়ের জাতি, তারা শ্রদ্ধার পাত্র। তাই বলে একজন সম্মানিত মানুষের গায়ে তো হাত তুলতে পারে না। মাওলানা থাপ্পড় খাওয়ার পর আত্মরক্ষামূলক আক্রমণ করেছেন, যদিও মহিলার শরীরে তা লাগেনি। অথচ গ্রেফতার হতে হলো মাওলানাকেই।

আত্মরক্ষার অধিকার সবার আছে, মাওলানারও আছে, নাকি বলে বসে বসে মার খাওয়াই তার কাজ।

মিডিয়া তো আছেই, অনেক আলেমও মাওলানা কাসেমির সমালোচনায় মুখর। তাদের যুক্তি, মাওলানা সাহেবের প্রতিবাদ করা ঠিক হয়নি। ইসলাম সহনশীলতা শিক্ষা দেয়। তাই মাওলানা সাহেব মাফও করে দিতে পারতো।

হ্যাঁ, মাওলানা সাহেব মাফ করে দিতে পারতেন। কিন্তু এতে করে মিডিয়া তাকে আরো নেগেটিভভাবে তুলে ধরত। চ্যানেলগুলো এভাবে নিউজ করত মহিলার হাতে থাপ্পড় খেলো মাওলানা, ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে বারবার দেখাতো। এতে করে আলেমদের আরো বেশি সম্মানহানি হত। আর ওদেরও সাহস বেড়ে যেত, কারণ আলেমদের অসম্মান করলে তারা তো কোনো প্রতিবাদ করে না। তাই টকশোতে তাদের যত ইচ্ছা লাঞ্চিত করো।

কিন্তু মাওলানা ইজায কাসেমির প্রতিবাদে ভবিষ্যতে ওরা সাবধান হয়ে যাবে যে, উলামায়ে কেরাম প্রতিবাদ করতে জানে। আর সহনশীলতা কিংবা ক্ষমা ব্যাক্তিগত ব্যাপারে হতে পারে। থাপ্পড়টা যদি মাওলানা ঘরে গিয়ে মারত, তখন ক্ষমা করে দেয়া যেত।

কারণ এক্ষেত্রে কেউ জানতো না। কিন্তু ব্যাপারটা ঘটেছে পুরো পৃথিবীর সামনে। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন জালিমকে ক্ষমা করাটাও জুলুম।

মাওলানা আসআদ নামে প্রভাবশালী একজন আলেম টুইট করে বলেছে মাওলানা ইজায কাসেমিকে কোনো তদন্ত ছাড়াই তাৎক্ষনিক বহিষ্কার করা হোক। আরো অনেকেই আছেন মাওলানার সমালোচক। তাদের যদি পুরো জাতির সামনে থাপ্পড় খাওয়ানো হত তাহলে তাদের অভিমত হয়ত পালটে যেত।

কে এই গ্রেফতারকৃত মাওলানা অারশাদ কাসেমী?

তবে অধিকাংশ আলেম মাওলানার পক্ষে আছেন, ভারতে বিতর্ক অনুষ্ঠানের নিয়মিত মুখ মাওলানা আনসার রেজা, মাওলানা আব্দুর রহমান আবেদ, মাওলানা আতহার দেহলভী, ড: ফাহিম বেগ, মাওলানা আসআদ ফালাহি ও মাওলানা আরিফ প্রমুখ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা জি হিন্দুস্তানের কোনো প্রগ্রামে আর যাবেন না এবং মাওলানা আরশাদ কাসেমিকে সব ধরনের সহায়তা করবেন।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে আলেমদের এ ধরনের বিতর্কানুষ্ঠানে যাওয়া উচিত কিনা? কারণ অপজিটে থাকা ব্যাক্তিরা অধিকাংশ সময় ইসলামবিদ্বেষী হয়ে থাকে, তারা বুঝেও বুঝতে চায় না। আর সর্বদা আলেমদের হেয় করে কথা বলে।

আমি বলবো, টিভি ছেড়ে দেয়াই সমাধান নয়। তবে আরো ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। বিরোধীরা ক্ষেপানোর চেষ্টা করলেও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এরপরেও শর্ত দিতে হবে যে অনুষ্ঠানে ধর্ম নিয়ে, আলেমদের নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করা যাবে না, কথা বলার পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে।

যাইহোক, ব্যাপারটা যেহেতু আদালতে উঠেছে, আশা করবো, ভারতীয় বিচারব্যবস্থা তার ওপর বেইনসাফি করবে না এবং বিচারিক কাজে সততা বজায় রাখবে।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, মাসিক আদর্শ নারী

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ