হাসান আল মাহমুদ
প্রতিবেদক, আওয়ার ইসলাম
শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারটি মূলত যে নামে বহুল প্রচলিত তিনি হচ্ছেন ব্যক্তি মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ। মুফতি মিযান সাহেবের মাদরাসা নামেই চিনে সারা বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীরা।
মুফতি মিযান আর ব্যক্তি থাকেননি, তিনি হয়ে উঠলেন একটি প্রতিষ্ঠান। একটি জামিয়া। একটি বিশ্ববিদ্যালয়। একটি উচ্চতর গবেষণামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিগর।
বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছ শিক্ষা চর্চা, প্রসারের অন্যতম স্বপ্নপুরুষ মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ বাংলাদেশে হেদায়া পর্যন্ত পড়ে মিশকাত (মারহালাতুল ফযীলত) থেকে উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি ধাপ অর্জনে ছুটে যান পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত জামিয়া করাচীতে।
তুখোর মেধা শক্তির আধিকারি মুফতি মিযান দাওরায়ে হাদিসের বার্ষিক পরীক্ষায় পাকিস্তানের বেফাকুল মাদারিসিল বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দারুল উলূম করাচী কেন্দ্রে ১ম এবং সমগ্র পাকিস্তানে ৩য় স্থান অধিকার লাভ করেন।
তাখাচ্ছুছ অর্জনে বিশ্বনন্দিত ফকীহ, যুগশ্রেষ্ঠ আলেম, জাস্টিস আল্লামা তাকী উসমানির প্রিয় ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। পাকিস্তানে বিশ্ববিখ্যাত মুফতি তাকী উসমানি’র স্নেহছায়ায় 'তাখাচ্ছুছ ফিল ফিকহীল ইসলামি'র উচ্চ শিক্ষার পাঠ চুকাতেই ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ আল ইসলামি ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে স্কলারশীপসহ ভর্তির সুযোগ পেয়ে মক্কা-মদিনার ইশারায় সেখানে ছুটে যান। সেখানে এক বছর আরবী ভাষার উপর ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে পরবর্তী বছর জামিয়াতুল ইমাম মদিনা শাখায় 'কুলিয়াতুদ্দাওয়া ওয়াল আলাম' সাবজেক্টে লিসান্স ডিগ্রি কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেন।
এ সময় তাকী উসমানির নির্দেশে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর স্নেহধন্য লাভ কওে অনেক ইস্তিফাদা অর্জন করেন। বিশ্ব নন্দিত মুহাক্কিক, গবেষক ইসলামিক স্কলার শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাযসহ মদিনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিশ্ববিখ্যাত মনীষীদের কাছে পাঠ গ্রহণ করে নিজের ভেতরে ইলমের ব্যাপক ভাণ্ডার গড়ে তুলেন।
উচ্চ শিক্ষা আর জ্ঞান-ভাণ্ডারে নিজেকে সমৃদ্ধির জন্য মদিনায় থাকাবস্থায় ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. এক সাক্ষাতে তাঁকে দেশে ফিরে এসে একটা উচ্চতর গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার তাগিদ দেন।
ফলে কিছুদিন পর দেশে ফিরে এলে মুফতি আব্দুর রহমান এর সাথে মিলে ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরায় মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী নামে একটি উচ্চতর গবেষণামূলক মারকায গড়ে তুলেন। যার প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা সচিব ও প্রধান মুফতির দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত।
তারপর তিনি তাঁর উস্তাদ আল্লামা তাকী উসমানি সাহেবের পরামর্শক্রমে কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন আল-হেরা টাওয়ারে 'শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার' নামে একটি উচ্চতর গবেষণামূলক ইসলামিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। যা ব্যক্তি ‘মুফতি মিযান সাবের’ মাদরাসা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
উচ্চতর বা তাখাচ্ছুছ শিক্ষা প্রসারের সাথে সাথে তিনি 'আহকামে যাকাত, আহকামে সালাত, আহকামে কুরবানী, আহকামে রমজান, আহকামে লেবাস, আহকামে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও ভ্রান্তমতবাদ, ছবি ও ভিডিও এর শরয়ী বিধান, কুরআন ও হাদিসের আলোকে শবেবরাত, কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১, আহলে হাদিসের জন্মকথা ও সীরাতে মুস্তাকীমসহ অনেক মূল্যবান গবেষণামূলক রচনা করেন।
বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছ শিক্ষার সাথে তিনি কর্ম জীবনের সূচণালগ্ন থেকে লেগে আছেন। আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের হয়ে কথা হয় তাখাচ্ছুছ শিক্ষার নানা প্রসঙ্গ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।
আওয়ার ইসলাম: আসসালামু আলাইকুম। আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন।
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: ওয়ালাইকুমুচ্ছালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। অনেক শুকরিয়া।
আওয়ার ইসলাম: আপনার সাথে তাখাচ্ছুছ বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: আলহামদুলিল্লাহ! জ্বি বলুন।
আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশে তাখাচ্ছুছের সাথে আপনি কত বছর ধরে আছেন এবং তার শুরুটা কি রকম?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: বাংলাদেশে উচ্চ ডিগ্রি, হাদিস, ফেকাহ, ইসলামি অর্থনীতি, তফসীর এবং বাংলা সাহিত্যের উপরে যেসমস্ত তাখাচ্ছুছাতের ব্যবস্থা আছে তাতে হিসাব করতে গেলে আমার সম্পর্ক ২৮ বছর আগে থেকে আমি এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছি।
এমন সময় আমরা তাখাচ্ছুছাত শুরু করেছি, তখন আমাদের জানামতে সারা বাংলাদেশে কোনো জায়গায়, কোনো মাদরাসায় শুধু তাখাচ্ছুছকে কেন্দ্র করে, তাখাচ্ছুছকে লক্ষ্য উদ্দেশ্য বানিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।
হজরত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. এর নেতৃত্বে বসুন্ধরায় আমরা তাখাচ্ছুছ থেকে মাদরাসা শুরু করি। তখন দাওরা-মেশকাতের কোনো জামাত (ক্লাস)ও ছিল না।
ফেকাহ থেকে শুরু করে ছিলাম। হাদিস থেকে তারপর শুরু করেছি। তখন সারা বাংলাদেশে কোথাও তাখাচ্ছুছের জন্য পৃথক, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে বরাবর ভিন্ন জামিয়ার আওতায় যেমন লালবাগ, পটিয়া ইত্যাদি মাদরাসাগুলোতে তাখাচ্ছুছের বিভিন্ন বিষয় ছিল; প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাখাচ্ছুছের সিলেবাস, শিক্ষা কারিকুলাম দেওবন্দ, পাকিস্তান, জামিয়াতুল ইমাম সৌদি আরব, জামে আজহার মিশর, ইত্যাদি দেশ-বিদেশের ভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগ থেকে সংগ্রহ করে করে এদেশে তাখাচ্ছুছের সিলেবাসের মৌল বিষয়গুলো দাঁড় করালাম।
ধীরে ধীরে এর সাথে আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে, কিন্তু মূল কাঠামোটা প্রথমে আমরা বসুন্ধরায় দাঁড় করিয়েছি।
আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছের মান নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: আসলে তাখাচ্ছুছের মূল্যায়নের আগে একটা প্রশ্ন হতে পারতো যে, তাখাচ্ছুছ কেন? কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সমাপনী হচ্ছে দাওরায়ে হাদিস। আগের যুগে -দারুল উলুম দেওবন্দের শুরুলগ্ন থেকে তাখাচ্ছুছ নামে আলাদা কিছু ছিল না। সেই যুগে দাওরা পর্যন্ত আমাদের আকাবিরদের সিলেবাসে পড়ে যে ছাত্ররা তৈরি হত, তারা ইসলামের মৌলিক সব বিষয়ে যথেষ্ঠ জ্ঞান-নলেজ অর্জন করতে পারতো।
তাদেকে ভিন্নভাবে স্পেশাল তাখাচ্ছুছ পড়িয়ে নতুন কিছু দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এই দাওরা পড়েই কিন্তু আশরাফ আলী থানভী থানভী হয়েছেন, হাকীমুল উম্মত হয়েছেন। হুসাইন আহমদ মাদানী শাইখুল আরব ওয়াল আজম হয়েছেন। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী তৈরি হয়েছেন। বড়রা কিন্তু এই দাওরা পর্যন্তই পড়েছিলেন।
প্রথম কথা হল, ধীরে ধীরে বিশ্বের অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে এবং তামাম বিশ্ব মিডিয়ার কারণে মানুষের যোগসূত্রটা এমন হয়েছে যে, ধরতে গেলে ধরা যায় হাতের ভেতরে চলে এসেছে পুরো বিশ্বটা। তখন এর ভেতরে নতুন নতুন বিশ্বকে চিন্তা করে কিছু কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রয়োজন উলামায়ে কেরাম অনুভব করেছেন।
দ্বিতীয় কথা হল, আর এটাই মেইন কথা। আজকাল দুনিয়াতে গোনাহ করানোর ব্যবস্থা অতীতের যুগ থেকে অনেক অনেক বেশি। তাই ছাত্র আলেমদের যখন পরিবেশের সঙ্গে চলতে গিয়ে কিছু গোনাহ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় হয়ে যায় তখন এগুলোর কারণে কলব অন্ধকার হয়ে যায়। তখন সিলেবাসের মাধ্যমে যা দেয়া সেটা পরিপূর্ণ ঢুকবে না। তাদের মধ্যে কিছু থেকে যায়।
এভাবে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, আগের যুগের দাওরা পড়া ছাত্রদের ইসলামের বিভিন্ন লাইনে যে জ্ঞান থাকতো, এখনকার যুগের দাওরা পড়া ছাত্রদের তা অনেক কমে গেছে। যার ফলে আমরা চিন্তা করলাম, বর্তমান যুগের দাওরা পড়া ছাত্রদের জ্ঞান-প্রজ্ঞাকে আরো মজবুত করতে হলে, ব্যাপকতর করতে হলে, আগের বুযুর্গদের সিলেবাসে পড়ে ছাত্ররা যা পেতো সেই পরিমাণ কিছু দিতে হলে আমাদের দাওরার পর স্পেশালভাবে দুই কি তিন বৎসর ছাত্রদের গবেষণায় বসিয়ে তাদের একেক লাইনে পারদর্শী করতে হবে। এই সিস্টেমটা জেনারেল লাইনেও হয়েছে।
একসময় একজন ডাক্তারই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা জানত। আর এখন তাতে উন্নত হয়ে একেকজন ডাক্তার ভিন্ন ভিন্ন স্পেশালিস্ট হিসেবে তৈরি হচ্ছে।
ঠিক একই ব্যবস্থা আমাদের কওমি মাদরাসাতেও শুরু হয়েছে। কাউকে ফিকহী লাইনে ভালো জ্ঞান দেয়া দরকার, তো তারা শুধু ফিকহের ভেতরে কয়েক বছর মেহনত করে ফেকাহ-ফতোয়াকে গবেষণা করে যুগের চাহিদা পূরণ করবে।
কাউকে হাদিসের লাইনে দিতে হবে। হাদিসের মতন-সনদ ইত্যাদির বিভিন্ন ইলম-জ্ঞান আছে এগুলো পৃথকভাবে তাখাচ্ছুছে পড়িয়ে তাদের স্পেশালিস্ট বানাতে হবে। তেমনিভাবে অন্যান্য বিভাগগুলো ঠিক এরকম।
আমাদের মুরব্বিরা তাখাচ্ছুছের নতুন সিস্টেমটার উপরে যে জোর দিয়েছেন এবং গুরুত্ব দিয়েছেন আমার ধারণা অনুযায়ী এখান থেকেই তাখাচ্ছুছের শুরু।
তো, আপনি প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশে যেসব তাখাচ্ছুছাতের মারকায আছে সেগুলোর মূল্যায়ন কী? এই মূল্যায়ন নিয়ে একটু আগে আমি তাখাচ্ছুছ আরম্ভ হওয়ার, সূচনা হওয়ার যে কারণটা বলেছি তার দিকে চিন্তা করলে আপনি দেখবেন যে, আমাদের বাংলাদেশে মান সম্পন্ন তাখাচ্ছুছের ব্যবস্থা খুবই কম।
ছাত্রদের আগ্রহকে পুঁজি করে তাখাচ্ছুছের নামে এখন বাসা ভাড়া নিয়ে হলেও তাখাচ্ছুছাত খোলার একটা হিড়িক লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু ধরতে গেলে হাতে গোনা পাঁচ অথবা যদি বেশি বলি সর্বোচ্চ দশটা পতিষ্ঠান ছাড়া আপনি বালাদেশে কয়টা পাবেন যাতে আমাদের মুরব্বিরা যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাখাচ্ছুছাত খুলেছেন তা হাছিল হচ্ছে!
বাংলাদেশে তাখাচ্ছুছের যেহেতু মান ও মানহীন অনেক প্রতিষ্ঠান, তাই সামগ্রিকভাবে বলতে হলে বলতে হবে মানসম্মত তাখাচ্ছুছের যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে।
আওয়ার ইসলাম: আপনি বলেছেন, বাংলাদেশে কম সংখ্যক মানসম্মত তাখাচ্ছুছ রয়েছে। বেশিরভাগ মানহীন। তো, এই মানহীন অধিক পরিমাণের তাখাচ্ছুছগুলোর ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হল, ফেকাহ ও হাদিস এ দুই বিষয়ে মানসম্মত তাখাচ্ছুছ করতে না পারলে তাতে তাদের হাত না দেয়া উচিত। বাকি অন্য সাবজেক্টগুলোতে কিছুটা অবকাশ দেয়া যায়।
যেমন তাফসীর বিভাগ আছে একটা। দাওয়া বিভাগ আছে। আদব বিভাগ আছে। তো, একটা দাওরা পাশ ছেলের যোগ্যতা তেমন না থাকলেও সে একটা বছর কোথাও তাফসির আর দাওয়া বিভাগে মেহনত করলে মোটামুটি যোগ্যতা তার হয়ে যাবে।
দাওয়া বিষয়টাতো আরো সহজ। আমি দাওয়াত কেমন দিবো, কিছু উসুলি দাওয়াত ইত্যাদি পড়া যেগুলো কোনো কঠিন বিষয় নয়। মোটামুটি যোগ্যতা সম্পন্ন ছাত্র মাত্রই তা পারবে। তাই ফেকাহ ও হাদিসের তাখাচ্ছুছ বিভাগ চালাতে এ দুই বিষয় সম্পর্কে গভীর যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া অন্য কারো দিয়ে যেন না চালায়।
যেমন তেমনভাবে চালালে কিন্তু এর মান খুবই নষ্ট হবে। এজন্য তাদের প্রতি আমার আহবান হল, যেই বিষয়গুলো তারা পারবে সেই বিষয়ে কাজ করুক।
এমন বিষয়ে হাত না দেক যেখানে মান নষ্ট হয়। পাশাপাশি আরেকটা কথা, তাখাচ্ছুছ পড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে সনদ দেয়া যাবে না। আমি বসুন্ধরায় থাকতেও প্রথম ১০ বছরে সনদ দিই নাই। ১০ বৎসর পর সনদ দিয়েছি, তাতেও লিখে দিয়েছি 'এই ছেলেটার ফেকাহের সাথে মোটমুটি সম্পৃক্ততা হয়েছে এ ব্যাপারে আমি সার্টিফাই করছি'।
এ কথা লিখিনি যে, সে মুফতি হয়ে গেছে। এ কথাটা এই কারণে, ছাত্রটার মোটামুটি সম্পৃক্ততা হয়েছে। এখন যেন সে আপন আপন জায়গায় থেকে মুতালা'আ, গবেষণা করে যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে তারপর মুফতি হয়। মুহাদ্দিস হয়। এ নিয়মটা এখানে এসেও পালন করছি। এখনো কাউকে সনদ দিই নাই।
আওয়ার ইসলাম: কোন মেধাস্তরের ছাত্র তাখাচ্ছুছ পড়ার যোগ্যতা রাখে?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: এটা আমাদের ভর্তির শর্তাবলীর ভেতরে দেয়াই আছে। আসলে তাখাচ্ছুছ বলতে যদি যদি ফেকাহ আর হাদিস হয় তাহলে এ দুই সাবজেক্টগুলোতে মুমতায মার্ক হতে হবে।
আর যদি তাফসীর, আদব বিষয়ে তাখাচ্ছুছ হয় তাহলে এতে জায়্যিদ জিদ্দান মার্ক থাকলেই চলে।
তাখাচ্ছুছ করতে ইচ্ছুক ছাত্রের মধ্যে কয়েকটা গুণ থাকবে। বাধ্যতামূলক গুণ হল, দাওরা পর্যন্ত পড়তে গিয়ে নাহু, সরফ, অলংকার, বালাগাত, ফেকাহ, হাদিস, উসুলে হাদিস ইত্যাদি যে বিষয়গুলো পড়েছে তাতে ভালো যোগ্যতা থাকতে হবে।
আবার এমন নয় যে, দাওরার পরীক্ষায় খুব ভালো করে ফেললো কিন্তু বিষয়গুলোতে তার এলেম পাকাপোক্ত না, তাহলে এরকম ছাত্রের তাখাচ্ছুছ পড়ে তেমন কিছু হবে না।
আওয়ার ইসলাম: আপনিতো দেশের বাইরে পাকিস্তানের জামিয়া করাচি ও সৌদিআরবের জামিয়া মদিনায় পড়েছেন। তাছাড়া বিশ্বের নানা দেশে যাওয়া ও জানার সুযোগ লাভ করেছেন। তো, বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছাতগুলো বহির্বিশ্বের তাখাচ্ছুছগুলোর সাথে কোনো পার্থক্য লক্ষ করছেন কি?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর প্রদানে আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিশেষ করে আমার দারুল উলূম করাচিতে আল্লাামা তাকী উসমানির কাছে ইফতা করার সুযোগ লাভ ও রিয়াদ ইউনিভার্সিটি, মদিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সযোগ লাভসহ অতিথি হিসেবে ভারতের শাহারানপুরের তাখাচ্ছুছ ও দারুল উলূম দেওবন্দের তাখাচ্ছুছগুলো দেখা-জানার এবং আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আমার যা মনে হয়, বাংলাদেশে মানসম্মত তাখাচ্ছুছের প্রতিষ্ঠানগুলো যেগুলো সত্যিকার অর্থেই তাখাচ্ছুছের ভালো কাজ করছে সেগুলো মেহনতের দিক দিয়ে বহির্বিশ্বের তাখাচ্ছুছের প্রতিষ্ঠানগুলোর খুবই কাছাকাছি পৌঁছতে পারছে।
একটু ভেঙ্গে বললে বলতে হবে, আমাদের এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে উপমাহাদেশের তাখাচ্ছুছগুলো আরব বিশ্বের তাখাচ্ছুছের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশীল। তার কারণ হল, আরবরা আমাদের মত সিলেবাসগতভাবে চৌদ্দ-পনেরো বছর পড়াশোনা করে, খুব যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে কিন্তু তারা তাখাচ্ছুছ পড়তে যায়নি।
আমি দেখেছি, আরবের ইউনিভার্সিটিগুলোতে একদম সাদামাটা, ভাসাভাসা উলূম দিয়ে তাখাচ্ছুছ পড়ানো হয়। সেই দিক বিবেচনায় উপমহাদেশের দেওবন্দি লাইনের তাখাচ্ছুছের প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক উন্নত।
হ্যাঁ, আরবরা ইলমের আসবাবের দিক দিয়ে আমাদের উপমাহাদেশের তুলনায় অগ্রগামী। কিন্তু মূল তাখাচ্ছুছের দিক দিয়ে উপমহাদেশের তাখাচ্ছুছগুলোই সবচে পরিপূর্ণ।
বাকি কথা হল, দেওবন্দ-পাকিস্তানের তাখাচ্ছুসগুলোর সাথে যদিবাংলাদেশের তাখাচ্ছুসগুলোর তুলনা করেন, একটা সময় ছিল বাংলাদেশে তাখাচ্ছুছের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্ররা উপায় নেই তাই ওই দুই দেশে তাখাচ্ছুছ পড়তে যেতেই হত।
যখন থেকে আমরা তাখাচ্ছুছ শুরু করেছি এবং আমাদের পরে আরো বড় বড় আলেমরা তাখাচ্ছুছাতের মধ্যে খুব মেহনত করতেছেন। তো, এসব নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের এই তাখাচ্ছুছগুলোর পড়াশোনার মান দেওবন্দের তাখাচ্ছুছের মান আর করাচির তাখাচ্ছুছের মান থেকে কোনো দিক দিয়ে কম নেই আল্লাহর রহমতে।
তবে একটা জিনিস একটু ব্যবধান আর সেটা হল, আমাদের দেশে যারা গবেষণা করবেন সেসব মেধাবী ছাত্র বিদেশে যাওয়ার জন ব্যস্ত হয়ে যান বা কোনো চাকরি-বাকরিতে চলে যান। তারা দেওবন্দ-পাকিস্তানে ভর্তি হবার চেষ্টা করেন। ওরা খুব মেধাবী ছেলে কিন্তু।
ওরকম মেধাবী ছেলে যদি বাইরে না গিয়ে তাখাচ্ছুছের জন্য আমাদের এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আসতো, তাহলে কিন্তু এখন যা আছে ভালো তার থেকে আরো ভালো মেধাবী ছাত্র পেয়ে আমাদের বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছেও আজকে একেবারে দেওবন্দ-পাকিস্তানের সমমানে কাজ করতে পারতাম। কারণ, এ কথা প্রসিদ্ধ যে, ভারত-পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী।
বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্ররা দেওবন্দ গেলেও ফার্স্ট হয়, পাকিস্তান গেলেও ফার্স্ট হয়। আমি নিজেও পাকিস্তানে মেশকাত, দাওরা এবং তাখাচ্ছুছের ক্লাসে ফার্স্ট ছিলাম এবং পাকিস্তানের অল বেফাক বোর্ডে তিন নাম্বার হয়েছি। এটা আমি অহংকার প্রকাশের জন্য বলিনি। এটা যা’লিকা ফাদলুল্লাহ, শুধুমাত্র উদাহরণ স্বরুপ।
আমার মত, আমার চেয়ে আরো কত কত বাঙ্গালী মেধাবী ছিলেন, আছেন এবং আল্লাহর রহমতে থাকবেন। এই মেধাবীরা বাংলাদেশের সম্পদ। এরা যদি বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছগুলোকে গুরুত্ব দিত, তাহলে বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছের মান ভারত-পাকিস্তানের সমমানে পৌঁছে যেত। এমনে বালাদেশের তাখাচ্ছুছগুলোর শিক্ষা কারিকুলাম, মেহনত, প্রজ্ঞা ইতাদি দিক দিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের তাখাচ্ছুছ কোনো অংশে কম নেই। অনেক কাছাকাছি।
এটা বাংলাদেশের জন্যে বাংলাদেশের ইলমি জগতের জন্যে একটা সুখবর। এটা একটা অভিনন্দনের বিষয় যে, তাখাচ্ছুছের উপর খুব মেহনত হচ্ছে। বাকি পাশাপাশি সমস্যা হচ্ছে ওই তাখাচ্ছুছগুলো নিয়ে, যেগুলোর মান নাই, না ছাত্রের মান না শিক্ষকের মান। না আছে নেসাবের মান।
অথচ এক বছরের জন তাখাচ্ছুছের সাইনবোর্ড দিয়ে তাখাচ্ছুছ করায় করায় সনদ দিচ্ছে, এদের কারণে কিন্তু মূল তাখাচ্ছুছ যারা করছেন, তাদের মানের ভেতরে একটু সমস্যা হচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: মূল তাখাচ্ছুছ বা তাখাচ্ছুছের জন্য আসলে কত বছর আপনি পারফেক্ট মনে করেন?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: এ বিষয়টা নিয়ে আমার আনেক গবেষকের সাথে কথা হয়েছে। ভারতের শাহি মুরাদাবাদের মুফতি সালমান মনসুরপুরীর সাথে আমার এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এবং এর উপর একটা সেমিনারও হয়েছে ঢাকার আল ইকরা ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে।
কথা হয়েছে আমার উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা তাকী উসমানি, রফী উসমানির সাথেও। আমি দুইটা মত দেখলাম এখানে, সালমান মনসুরপুরী বা দেওবন্দের নিয়ম হল, আমরা অল্প সময়ে ছাত্রদের মূল জিনিসগুলিকে ভালো করে পড়িয়ে, নীতিমালা ধরিয়ে দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া দরকার, তারা আপন আপন জায়গায় গিয়ে মেহনত করতে থাকবে। তাদের এলেম বাড়বে।
তাই তাঁদের দৃষ্টিতে তাখাচ্ছুছের জন্য এক বছর হলেও চলবে। এটা সালমান মনসুরপুরী এবং দেওবন্দের আরো কারো কারো মত।
আপরদিকে আমার উস্তাদে মুহতারামসহ বাকি যারা আছেন উনাদের মতে তাখাচ্ছুছের জন্য কম করে হলেও সর্বনিম্মে দুই বছর। তিন বছর হলে মাঝামাঝি হয়, আরো বেশি হলে আরো ভালো হয়। কারণ যে সমস্ত বিষয়ে তাখাচ্ছুছ করা হবে, এ বিষয়গুলোর উপরে শুধু আমার দেশ নয়; পুরো বিশ্বের মুসলিম গবেষকদের বই-পুস্তক, কিতাবাদি সামনে নিয়ে যদি কাজ করে তাহলে এক বছর খুবই কম। একেবারে আসম্ভব।
তাই যদি মানসম্মত তাখাচ্ছুছ করতে হয়, তাহলে কমপক্ষে দুই বছরের দরকার। যেমন আমার এই মারকাযুস শাইখ যাকারিয়ায় আমি দুই বছর বাধতামূলক করেছি এবং আরো এক বছর ঐচ্ছিক করেছি। তো, দেখা গেল যারা ভালো ছাত্র, তাদের আমরা কোথাও খেদমতে দিলে তারা যেতে চায় না। বলে, আমরা আরো এক বছর পড়বো।
এমন অনেক ছাত্র আমার এই মাদরাসার ভেতর আছে যারা ফেকাহ বিভাগে দুই বছর পড়েছেন, আবার তারা হাদিস বিভাগে দুই বছর পড়ছেন। চার বছর পড়ছেন এখানে। আবার কেউ হাদিসে দুই বছর পড়েছেন পরে আবার ফেকাহের মধ্যে এসে আরো দুই বছর পড়ছেন।
এই বছরও ফারেগ হচ্ছে কয়েকজন যারা চার বছর দুই বিভাগ পড়াশোনা করে বের হচ্ছে। পাশাপাশি ফেকাহের মধ্যে দুই বছর পড়ে ভালো পাঁচজন ছাত্র তৃতীয় বছরে ঐচ্ছিক সময় দিচ্ছে। এব তারা এক বছর মেহনত করে আজকে আমার এই প্রতিষ্ঠানেও কয়েকজন শিক্ষক হয়ে গেছে।
আওয়ার ইসলাম: ওদের আপনার পতিষ্ঠানে রেখেছেন আপনার ছাত্র হওয়ার ফলে নাকি যোগ্যতার বিচারে?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: না, তাদের যোগ্যতার বিচারে রেখেছি এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছি। তাদের এ যোগতা তো হয়েছে দুই বছর, তিন বছর মেহনত করার ফলে। এখানের আলহামদুলিল্লাহ এমনও ছাত্র আছে যারা কোনো এক জায়গায় বসে দারুল ইফতা চালাতে পারবে।
তো ওদেরে আরো পারদর্শী করার জন্য আমি সহযোগী শিক্ষক হিসেবে আরো এক বছর নিয়োগ দিয়েছি, মোট চার বছর। এ সিস্টেমটা যদি আমাদের দেশের বড় বড় দারুল ইফতাগুলো করতো তাহলে শিক্ষকের জন্য বাইরের থেকে লোক তালাশ করতে হত না। এ ছাত্রগুলো দিয়েই কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কাজ হতে পারতো।
আওয়ার ইসলাম: শুরুর দিকের প্রশ্নটা আবার করছি, তাখাচ্ছুছ কী এবং তা জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থার ডক্টরেট ডিগ্রির কাছাকাছি কিনা?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: তাখাচ্ছুছ শব্দটি আরবি খুছুছ থেকে এসেছে। এর অর্থ বিশেষজ্ঞ হওয়া। তো, মূল কথা হল গিয়ে, আমাদের মুরব্বিরা যখন তাখাচ্ছুছ আবিষ্কার করেছেন তখন জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থার পিএচডি, ডক্টোরেট ডিগ্রির চিন্তা মাথায় নিয়ে তা করেন নি।
এটা ছিল জাস্ট, একটা ছেলে কুরআন-হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর মুতালা'য়া-অধ্যয়ন,গবেষণা করে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন এবং বাস্তবিক পক্ষে যে ইলম খুব প্রয়োজন তাতে পারদর্শী লাভ করার নিমিত্তে তাখাচ্ছুছ নামের একটা ক্লাস বের করা।
আর তা এমন যে, এতোদিন ছাত্রটাকে দাওরা পর্যন্ত পড়ালাম, বিভিন্ন বিষয়ে তারা দাওরা পর্যন্ত পড়লো, এখন যে কোনো বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করবে। তাতে দুই কি তিন বছর যত বছরই লাগে।
আওয়ার ইসলাম: যুগের এই ক্রমোন্নতিতে তাখাচ্ছুছকে বর্তমানের ডক্টরেট-পিএইচডি ধরা যায় কি না?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: হ্যাঁ, এটার চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিশেষ করে সরকার যেহেতু স্বীকৃতি, প্রজ্ঞাপন জারি করে দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজ ও অ্যারাবিকে মাস্টার্সের সমমানে ঘোষণা করেছে, সে অনুযায়ী দাওরায়ে হাদিস পাশ করে কেউ যদি কোনো বিষয়ে দুই বছর, তিন বছর তাখাচ্ছুছ করে তাহলে তা আধুনিক পরিভাষার ডক্টরেট-পিএইচডি ধরা যেতে পারে।
আওয়ার ইসলাম: জেনারেল শিক্ষায় অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি আলাদা সাবজেক্ট আছে। এগুলোতে অনার্স, মাস্টার্স করে পিএইচডিও করে। অথচ ইসলামে এ সকল বিষয়ে কিন্তু সুস্পষ্ট আলোচনা আছে। যেগুলোকে আলাদা সাবজেক্টে পরিণত করে পড়ানো যায়।
তো, তাখাচ্ছুছকে পিএইচডি-ডক্টরেট ডিগ্রি ধরলে ইসলামের কী কী বিষয়ে তাখাচ্ছুছ করা যেতে পারে?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: এটা আসলে খুব জটিল প্রশ্ন। সবার চিন্তা-ভাবনার সম্মিলনে বলা ভালো। তবে উপস্থিত যেটা বলা যেতে পারে, মূলত আমাদের তাখাচ্ছুছগুলোতে একটা বিভাগের নাম হল 'তাখাচ্ছুছ ফিল ফিকহীল ইসলামী”।
তো, এই ফেকাহটা কী? আমাদের দেশের মানুষ মনে করে ফেকাহ মানে নামায-রোযার মাসয়ালা। এই ফেকাহ বলতে শুধু নামায-রোযার মাসয়ালা নয়। আসল কথা হল জীবন চলতে গিয়ে বক্তি জীবন পারিবারিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের নানা বিষয় ফেকাহের মধে সন্নিবেশিত আছে।
যেমন ফেকাহের মধ্যে একটা গ্রন্থের নাম হল 'হিদায়া'। এই হিদায়া গ্রন্থে নামায-রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত হতে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি জীবনের সব বিষয়ই আছে। তো, ফেকাহ বিষয়ে যারা তাখাচ্ছুছ পড়বে তারা সব বিষয়ে সুতরাং ফেকাহের মধ্যে আরো আরো বছর বৃদ্ধি করে আরো বিভাগ তৈরি করে যদি আমরা কাজ করি তাহলে এতে আরো অনেক উন্নতি হবে।
আওয়ার ইসলাম: তাখাচ্ছুছের কাজ করতে গিয়ে কখনো কোনো সমস্যা ফিল করেন কি না?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: আসলে তাখাচ্ছুছের কাজ বিশেষ করে ফেকাহ-ফতোয়ার কাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, মুফতি ফতোয়া দিতে দস্তখত করে একটা কাজ করে দেয়ার অর্থ হল মুয়া'ত্তিয়ুন আ'নিল্লাহ তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে তুমি আল্লাহর বিধান বর্ণনা করতেছো যে, এটা আল্লাহ পাকের বিধান। আমি তোমাকে দিলাম।
তো আল্লাহর পক্ষ থেকে দস্তখত করে আল্লাহর বিধান জাতিকে জানিয়ে দিচ্ছি এটা কত যে গুরুত্বপূর্ণ ও কত সেনসিটিভ তা বয়ান করে শেষ করা যাবে না। এই কারণে তাখাচ্ছুছ তা হাদিসের হোক, তাফসিরের হোক, ফেকাহের হোক বা অন্য কোনো বিষয়ের হোক এ জগতে কাজ করতে হলে একক কোনো মানুষের পক্ষে একক সিদ্ধান্তে কাজ করা সম্ভব না এই সমস্যাটা সবসময় ফিল করছি।
আমি এ ব্যাপারে একটা হাদিসের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। হজরত রাসূলে কারীম সা. হজরত আলী রা. কে বলেছেন ‘ইয়া আলী লাও হাদাসাবিকা আমরুন আও কযায়ুন’ হে আলী! কোনো জটিল বিষয় যদি তোমার সামনে উপস্থিত হয় আর নিজে সিদ্ধান্ত দিতে হিমশিম খাও ‘ফাজমায়ূ লাহুল ফুকাহায়াল আবিদীন’ তো আল্লাহওয়ালা আরো ফকীহ-গবেষকদের ডেকে পরামর্শ করে এই দ্বীনি ইসলামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবা।
এখন আমি দারুল ইফতার সমস্যাটা ফিল করছি যে, কোনো একটা জাতির প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় বড় বড় দারুল ইফতাগুলো থেকে একেক রকমের উত্তর আসছে। তো আমাদের মধ্যে যদি একটা সমন্নয় থাকতো। যে বিষয়ে একা সিদ্ধান্ত দিতে আমার হিমশিম খেতে হচ্ছে বা অন্য কোনো মুফতির সঙ্গে আমার সিদ্ধান্ত মিল খাচ্ছে কি খাচ্ছে না। আমিতো 'ফাওক্বা কুল্লি যী ইলমিন আ'লিম' আমিতো একজন গবেষণার ছাত্র, আমার উপরে তো আরো জ্ঞানী গবেষক আছেন।
তাহলে একসাথে কিছু জ্ঞানীরা বসে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যদি ফেকহী ইজতিমায়ি সেমিনার করে, তাহলে কিন্তু আমাদের এই দেশের তাখাচ্ছুছের শিক্ষার মানটা আরো অনেক উন্নতি হবে। এ জিনিসটা আমি করাচীতে দেখেছি, ভারতেও আছে। দুনিয়ার সব রাষ্ট্রে আছে।
আমাদের এখানে কিন্তু তা খুবই কম। ইদানিং জাতীয় পর্যায়ের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে যখন একত্রিত হয়েছি, তখন এটার উপলব্ধি আমার আরো কঠিনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আমার বন্ধুবর মুফতি আব্দুল মালেক সাব দা.বা.,মুফতি দেলোয়ার সাহেব,মুফতি মনসুরুল হক সাহেব,মুফতি মোহাম্মদ আলী সাহেব ও দেশের বিশেষ করে ঢাকার এ জাতীয় বড় মুফতিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি যে, আমরা একটা কাজ করতে পারি কি না, বড় বড় দারুল ইফতাগুলো সমন্নয় করে একটা বোর্ড করি- সেখানে পদ টদ কিছুই থাকবে না, সবাই সদস্য থাকবে।
আমরা যে কোনো বিষয়ে মাসে এক-দুইবার বা কমপক্ষে একবার হলেও একটা বিষয় নিয়ে বসি। আমি যা বুঝলাম-জানলাম তাতে আমার মত পেশ করলাম, আপনি আপনারটা পেশ করলেন, উনি উনারটা পেশ করুক। সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হই। যে কাজটা আলী রাযিঃ কে নবী কারীম সাঃ করতে বলেছিলেন।
করাচীতে মুফতী শফী সাহেব রহ. এর যুগ থেকে 'মজলিসে মাসায়িলে হাজরা' নামে একটা সংস্থা আছে। আমি যখন দারুল উলূমে মুফতী তাকী উসমানি সাবের কাছে ইফতা পড়েছি, তখন দেখতাম যে, সপ্তায় সপ্তায় পযন্ত মিটিং হত। মুফতি রশিদ আহমদ লুদিয়ানভী,সলিমুল্লাহ খান সাহেব,মুফতী তাকী উসমানি, রফী উসমানি সাহেব ও এরকম বড় বড় বুযুর্গগণ, ফকীহগণ বসে চার-পাঁচ ঘন্টা যাবত দলিল-প্রমাণ নিয়ে পর্যালোচনা করে তারপরে গিয়ে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন।
এ কাজটা পাকিস্তান-ভারতে থাকার কারণে তাদের দারুল ইফতার মান এদিক দিয়ে অনেক উন্নতমানের। আর আমাদের এ কাজটা নাই বিধায় আমরা এখানে বড় সমস্যা ফিল করতেছি। তো, আমি এখন আপনার হয়ে আওয়ার ইসলামের মাধ্যমে দেশের শীর্ষ মুরব্বি, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেম যারা আছেন তাঁদের প্রতি বিনিতভাবে আহবান জানাচ্ছি যে, সবাই যেন এ ব্যাপারটা নিয়ে ফিকির করেন।
কিভাবে আমরা একে অপরের সম্পূরক হয়ে ইসলামী-শরয়ী, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এককণ্ঠে, একবাক্যে কথা বলব। আমরা সেমিনার করব, ঐকক্যমত হব। আর ঐক্যমত হওয়া জরুরিও না। অনেক কিছু ইজতিহাদি বিষয় আছে যে, এর পক্ষে-বিপক্ষে দলিল আছে। কারো মতে এটা হবে, কারো মতে ওটা হবে। তাতেও কিন্তু ইলমী জগতে কোনো ইখতিলাফ এরকম হলে অসুবিধা নাই।
আমরা একসঙ্গে বসলাম, প্রত্যেকে নিজ নিজ মত পেশ করলাম। যতটুকু সম্ভব ঐক্য হলাম। আর যে পয়েন্টে ঐক্য হতে পারলাম না তাতে বলে দিলাম যে, এ বিষয়ে অমুক মুফতির মতে এটা, অমুক মুফতির মতে ওটা। এরকম দৃষ্টান্ত-নজির আমাদের আকাবিরদের মধ্যেও ছিল।
তো, যদি আমরা একটা ফতোয়া বোর্ড করতে পারি বা মুফতি বোর্ড, গবেষণা বোর্ড যে কোনো নামে হোক, যার মকসুদ হল, শুধু জাতীয় বা গুরুত্বপূর্ণ ইখতিলাফ ফি-মতভেদপূর্ণ যে কোনো বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা করে একটা ঐক্যমত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারলে আমাদের ছাত্ররাও গবেষণামূলক সিদ্ধান্ত পাবে।
আমরা ছাত্রদের সেভাবে গড়তে পারব এবং দেশের ভেতরে আলমদের মতভেদপূর্ণ ফতোয়া হবে না। সবচে বড় কথা হল, আমরা একে অপরের এলেম-জ্ঞান দিয়ে উপকৃত হতে পারব। এ কাজটা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। পুরো দেশে ব্যাপকহারে করতে না পারলেও ঢাকাতো রাজধানী, অন্তত রাজধানী ঢাকার বড় বড় দারুল ইফতাগুলোর একটা সমন্নয়ে একটা বোর্ড করতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
এটাই মিনিং যে আমি একক। শুধু আমি কেন, কোনো মুফতি এককভাবে ফতোয়া বোর্ড চালাতে পারে না। দারুল ইফতা চালাতে পারে না। বরং তাকে অবশ্যই অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করতেই হয়। তাছাড়া স্বয়ং আল্লাহর নবীর নির্দেশও তাই। যা হজরত আলী রাযি: কে নবীজি বলেছিলেন।
আর সব বিষয়গুলোতো কুরআন শরীফে স্পষ্ট নাই। তাইতো ফতোয়া, ফেকাহ। অস্পষ্ট বিষয়ের উপরেইতো গবেষণামূলক ফতোয়া আর ফেকাহ চলে। তো, এ ব্যাপারে তো প্রচুর গবেষণা দরকার। তাই একা একা গবেষণা না করে ইজতিমায়ি গবেষণা করব চার-পাঁচ, দশ-বিশজন মিলে। আমি মনে করি তাখাচ্ছুছের বিষয়গুলোকে প্রাণযুক্ত করার জন্য, পোক্ত করার জন্য যারা অত্র বিষয়ে বিজ্ঞ তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত।
আওয়ার ইসলাম: একটা জাতীয় মুফতি বোর্ড তো আছে, আপনিও তাতে রয়েছেন। তা কি যথেষ্ঠ না?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: মুফতি বোর্ড আছে ঠিক আছে, তবে কার্যকরীভাবে যথেষ্ঠ না এবং বলতে গেলে কার্যকরীভাবে আসলে কোনো বোর্ড নেই। হ্যাঁ, অনেক বোর্ডে আমি আছি। যেমন বেফাকুল মাদারিসিল উদ্যোগ নিয়েছিল। আমার সাথে মরহুম আবদুল জব্বার সাহেব পরামর্শ করেই এ উদ্যোগটা নিয়েছিলেন।
যেদিন কমিটি গঠন হয়েছিল সেদিন আমি ছিলাম না, তারপরও আমাকে তাঁরা রেখেছেন। কিন্তু যেদিন বোর্ডটা গঠিত হয়েছিল সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত একটা মিটিংও হয় নাই, কোনো বিষয়ে আলোচনা হয় নাই। অথচ ওই বোর্ডে সারা বাংলাদেশ থেকে আলেম উলামা নিয়েছিল। এরকম সবার সুযোগ সুবিধাতো আর হবে না।
প্রয়োজন ছিল ঢাকা ভিত্তিক, ঢাকার আশপাশ ভিত্তিক করা। আরো দুয়েকটা বোর্ড আছে হয়তো তা বছর দুই বছর পরে একটা বিষয়ে একটু বসা হয়। তো, আমি যেটা চাচ্ছিলাম সেটা হল তাখাচ্ছুছের কাজ করতে, ফেকাহ-ফতোয়ার কাজ করতে সব সময় যেটা ফিল করি, তার সমাধানের জন্য আমাদের একটা বোর্ড দরকার।
অনেক সময় সরকারিভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুফতিদের দাওয়াত করা হয়। তো, কওমি মাদরাসা থেকে যাদের ডাকা হয় তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিক মুফতি পরিচয়ের কারণে।
যেমন আমি ব্যক্তিক পর্যায়ের মুফতি, আব্দুল মালেক সাহেব, দেলায়ার সাহেব ব্যক্তিক পর্যায়ের মুফতি। এভাবে যারা স্বনামে মুফতি পরিচয়ে প্রসিদ্ধ তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমাদের যদি এমন একটা বোর্ড থাকতো যা কওমি মাদরাসার নির্ভরযোগ্য, আস্থাভাজন বোর্ড। তাহলে সরকার সমস্যা সমাধানে সে বোর্ডকেই আহবান করতো। বোর্ড থেকে বড় মুফতিগণ একটা দায়িত্ব নিয়ে তখন সেখানে উপস্থিত হত।
আওয়ার ইসলাম: এ নিয়ে কারো সাথে তেমন বসেছেন কি?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: আলোচনায় বসতেই তো পারছি না, কারণ বসার নিয়ম যে আমাদের আগে থেকেই নাই। হ্যাঁ, বাধ্য হয়ে একবার কি দুইবার আব্দুল মালেক সাহেব, দেলোয়ার সাহেবসহ আমরা সবাই বসেছিলাম।
তখন দেখা হেল অল্প সময়ের বৈঠকের ভিতরে আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, তাতে অনেক উপকার হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি উনাদের থেকে আবার উনারা জানতে পেরেছেন আমার থেকে। সেদিনও কিন্তু আমি আহবান করেছিলাম যে, যদি পারি আমরা এ ব্যাপারে একটু ফিকির করি।
তো, আশা করি ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাহে তো একটা বোর্ড হবে, যেখানে আমরা বড়রা বসে জাতীয় যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হোক, ইখতিলাফ ফী-মুখতালাফ ফী গবেষণামূলক বিষয়ে হোক আমরা আল্লাহর দ্বীনের স্বার্থে আল্লাহর সঠিক দ্বীনের বিধান জাতিকে জানানোর জন্যে ঐক্যমতে পৌঁছে একটা সঠিক সুন্দর সিদ্ধান্ত দেওয়ার বোর্ডের মাধমে দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।
আওয়ার ইসলাম: আপনার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি আপনি কী স্বপ্ন লালন করেন?
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: আমি যখন সৌদি আরবের রিয়াদে ছিলাম, তখন রাজধানী রিয়াদে গান্ড মুফতি শাইখ বিন বায মন্তণালয়ের মত বিশাল একটা দারুল ইফতা দেখতাম। তাঁর কাছে যেতাম। অনেক উপকারিতা নিতাম। সরকারি-বেসরকারি, আন্তর্জাতিক সারা বিশ্বেরে সব লেভেলের পশ্ন উনার বিশাল দারুল ইফতায় আসতো। ডেলিভারি তারিখ দেয়া হত। তাতে আফিসিয়াল সিস্টেমে গবেষকগণ থাকতো।
তারা একেক বিষয়ে গবেষণা করতেন। সে গবেষণার প্রেক্ষিতেতে উত্তর রেডি হত। এক দিক দিয়ে পশ্নগুলো ঢুকতো আরেক দিক দিয়ে তা বের হত। ডেলিভারি তারিখ আনুযায়ি যার যার হাতে চলে যেত। তখন থেকে আমার জল্পনা হায়!
বাংলাদেশে যদি এরকম বড় না হোক অন্তত এ ধরনের ছোটখাটো একটা হত, যেখানে ৩০-৪০ জন গবেষক থাকবেন,আফিস থাকবে, কিতাব থাকবে, পুরো জাতি- বিশ্ব থেকে প্রশ্ন আসবে, এগলো গবেষণা করবে, সিদ্ধান্ত বের হবে,অফিসিয়ালভাবে ফতোয়া রিলিজ হবে। যাকে ইদারা বা কেন্দ্রীয় দারুল ইফতা বলা হয় এরকম একটা কিছুর স্বপ্ন দেখি।
আরেক স্বপ্ন দেখি, আমি যেহেতু আল্লামা তাকী উসমানি সাবের খুব ঘনিষ্ট ছিলাম, পাঁচ বছর দারুল উলূম করাচীতে ছিলাম, তো উনার কাছে দেখতাম যে, টপ লেভেলের ববসায়ীরা তাকী উসমানি সাবের কাছে বসে থাকতেন। কি জন্য? সমস্যার সমাধানের জন্য। আর উনি সমাধান দিয়ে দিলে তাই মেনে নিত।
আরো দেখতাম ইনার কাছে দেশের কোনো বিভাগের লোক বাকি ছিল না । সবাই আসতো। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রের সব ধরনের বিষয় নিয়ে। আথচ আমাদের কাছে মানুষ আসে তালাকের একটা মাসয়ালা নিয়ে। মিরাস তবকার বণ্টন মাসয়ালা নিয়ে। এখানে শুধু তালাকের মাসয়ালা আর নামাযের মাসয়ালা কেন! ইসলাম তো ব্যাপক। সব বিষয়েই তো মাসয়ালা জানা দরকার।
সকল বিষয়ের মানুষকে আকৃষ্ট করে দ্বীনের বপারে ‘তোমারা উলামাদের কাছ থেকে পরামর্শ’ নাও এই একটা পরিবেশ দেশে সষ্টি করতে আমার স্বপ্ন। যাতে প্রতেকটি সেক্টরের লোক জীবন চলার সকল সমসার সমাধানের জন্য মুফতির শরণাপন্ন হয়। একটা দারুল ইফতার শরণাপন্ন হয়।
আল্লাহ যদি তা পুরা করতো! আমার এখানে হোক আর না হোক একটা দারুল ইফতা বাংলাদেশে যদি এরকম হত যেখান থেকে পুরো জাতি এই দারুল ইফতার দিকে মুখাপেবক্ষী হবে।
আরেকটা স্বপ্ন হল, আমাদের দেশে যে ফুড খাবার রয়েছে। মানুষ এটার প্রযোজনও মনে করে না যে, প্রতেক দেশে হালাল খাবার আর হারাম খাবারের মাঝে ব্যবধান আছে। মালোয়শিয়াতে আমি সেটা দেখেছি, সিাঙ্গাপুরেও আমি সেটা দেখেছি । করাচীতেও দেখেছি মুফতি রশীদ আহমাদ সাহেবের ফ্যাকাল্টিতে। যে কোনো ব্যবসায়ী খাদ্য উৎপাদন করবে সে আগে মুফতির কাছে এসে জিজ্ঞেস করবে, আমি এই উপকরণ দিয়ে এই খাবারটা তৈরি করতে চাচ্ছি, এটা হালাল হবে কি না?
তখন ওই দারুল ইফতা থেকে ফাতওয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে সরকারের কাছে তার আনুমোদন নিবে। সত্যিকারের দারুল ইফতা তো এগুলাকেই বলা হয়। আমরা আজকে কোথায়! আল্লাহ আমাকে দিয়ে এর একটা বাস্তবায়নও করিয়েছেন। ইয়ারপোর্টে প্লেনে যেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করা হয়, যেসব খাদ্য দেয়া হয় তাতে কোনো এক কোম্পানিকে নোটিশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা যে খাবারগুলো বানাও তা হালাল কি না? এ ব্যাপারে ইসলামি স্কলারদের সার্টিফিকেট লাগবে।
তখন তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শরণাপন্ন হলে ফাউন্ডেশন আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি তখন মুফতিদের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে মুরগি বিভাবে জবাই হয়, খানা কিভাবে তৈরি হয় ইত্যাদি সব সার্ভে করে আমার দারুল ইফতা থেকে তার ফাতওয়ার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম: আওয়ার ইসলামকে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া ও ধন্যবাদ।
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ: আপনাকে এবং আওয়ার ইসলামকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ। বিশেষ করে তাখাচ্ছুছ বিষয়ে এ ধরনের প্রশ্ন কেউ কোনোদিন করে নাই সেজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই দোয়াও রইলো আাপনাদের প্রতি যারা মিডিয়ায় মেহনত করছেন, আল্লাহ পাক যেন আপনাদের মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের সঠিক বিষয়গুলো তুলে ধরার তৈফিক দেন। আমিন।
উচ্চতর ইসলামি গবেষণার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ও একজন মনীষী
-আরআর