শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


মাদকাসক্ত নষ্ট করছে আমাদের মনূষত্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কায়সার হাফিজ: আমরা যারা সমাজের ভদ্র সভ্য ফেমিলির লোক, তারা যখন . মাদকদ্রব্য. নেশা করা. ইত্যাদি শব্দ গুলো শুনি . তখনি আথকে উঠতে হয় আমাদের। আমরা যারা মুসলমান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সব পবিএ খাদ্য ও খাবার পাণীয়কে হালাল করেছে।

মাদকাসক্তি বলতে মাদকের প্রতি আসক্তিকে বোঝায়। বিভিন্ন ধরণের মাদক হতে পারে। মাদক বা ড্রাগস হলো বিষধর সাপের বিষাক্ত ছোবলের মতো যা প্রতিনিয়ত একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে তার দংশনে নিঃশেষ করে দেয়। যার প্রভাব আমরা আমাদের যুব সমাজে বেশি দেখিতে পাই।

কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি? যুব সমাজের এই পরিণতির জন্য অনেকাংশে দায়ি শুধুমাত্র মাদক দ্রব্য এবং মাদকাসক্তি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকা !

মাদক দ্রব্য এবং মাদকাসক্তি কি?

মাদক দ্রব্য হলো একটি রাসায়নিক দ্রব্য যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে এবং যা আসক্তি সৃষ্টি করে।

মাদক দ্রব্যে বেদনানাশক কর্মের সাথে যুক্ত থাকে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, মেজাজ পরিবর্তন, মানসিক, আচ্ছন্নতা রক্তচাপ পরিবর্তন ইত্যাদি । মাদক দ্রব্য গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং দ্রব্যের উপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে ব্যক্তির এই অবস্থাকে বলে মাদকাসক্তি এবং যে গ্রহণ করে তাকে বলে মাদকাসক্ত।

বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য যদি সম্পাদনা করি তবে বলতে হবে মাদক দ্রব্য আসলে কি কি সেটার নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নাম বলা সম্ভব নয়। মানুষ নেশার জন্য যা ব্যবহার করে তাই মাদক দ্রব্য। সেটি হতে পারে ইনজেকশন , ধূমপান বা যে কোন মাধ্যম।

বিভিন্ন ধরণের মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হিরোইন , কোকেন , ইয়াবা, আফিম , মারিজুয়ানা , গাজা , ফেনসিডিল , বিয়ার , কেটামিন , স্পিড , বিভিন্ন রকমের ঘুমের ওষুধ থেকে শুরু করে জুতা লাগানোর আঠা পর্যন্ত।

অনেকে বিভিন্ন ধরণের এনার্জি ড্রিংকসের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে নেশা করে থাকে । বিভিন্ন ধরণের মাদক গ্রহণের ফলে মানুষের চোখের যে পরিবর্তন হয় তা আজ প্রমানিত।

অথচ দেখা যাই! ঈদ, বিবাহ বার্ষিকী, জন্মদিন পালন সহ বিভিন্ন অনূস্ঠান উৎযাপন করি. তখন কিন্তু আমরা হালাল হারামের বিচার না করেই বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে নানা রকম মাদকদ্রব্য বা নেশাকর পাণীয় পাণ করে তার উপর অব্যস্ত হয়ে পরি, আর তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনা, অবশেষে হতাশার জগতে ভবঘূরে বেরাতে হয়। অথচ তা ছিল কুরআন হাদিসের দৃষ্টিতে হারাম।

আর তা আমাদের আচার ব্যাবহার কৃষ্টিকালচার দৃষ্ঠিভঈীর উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব পরে, ফলে ছোট বড় কোন অপরাধই আর আমাদের কাছে অপরাধ মনে হয়না.তখন আমাদের দ্বারা সংঘঠিত হয় নানা ধরণের অপরাধ অপকর্ম ।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يا أيها الذين آمنوا إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجس من عم
الشيطان فاجتنبوه لعلكم تفلحون، إنما يريد الشيطان أن يوقع بينكم العداوة والبغضاء في الخمر والميسر ويصدكم عن ذكر الله وعن الصلاة فهل أنتم منتهون .

“হে ঈমান্দারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তী এবং লটারীর তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরুপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। শয়তান তো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্র“তা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামায হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে, সুতরাং এখনও কি তোমরা ফিরে আসবে?” (সূরাঃ মায়িদাহ/ ৯০-৯১)

তবে যদি বিয়ার নেশা মুক্ত হয় তবে তা পানে কোন অসুবিধা নেই। কিন্ত যদি তা কোন প্রকার নেশা যুক্ত হয় বা তার সাথে এমন বিষয় যুক্ত হয় যার অধিক সেবন মাদকতা নিয়ে আসে তবে তা পান করা জায়েয নয়। অনুরূপ হল বাকী নেশাকারী বস্তুর বিধান। চাই তা খাদ্য দ্রব্য হোক বা পানীয় হোক তা থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব। উহার কোন কিছু পান করা বা খাওয়া যাবেনা।

নবি কারিম সা. বলেন, كل مسكر خمر وكل مسكر حرام
অর্থঃ “সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম।” (মুসলিম হা/৩৭৩৩)

তিনি  আরো বলেন, كل شراب أسكر فهو حرام “যে সমস্ত পানীয় নেশাকারী তা হারাম।” (বুখারী হা/২৩৫, মুসলিম হা/৩৭২৭)

ماأسكر كثيره فقليله حرام

“যার অধিক সেবন নেশা নিয়ে আসে তার অল্পও হারাম।” (আবু দাউদ হা/৩১৯৬ তিরমিযী হা/

নবি কারিম সা. থেকে আরো প্রমাণিত, তিনি সমস্ত নেশাকারী ও মাতলামী সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন।

অতএব, সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হলঃ যাবতীয় নেশা জাতীয় বস্তু থেকে নিজে সতর্ক থাকা ও অপরকে তা থেকে সতর্ক করা।

এবং যে তাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তার কর্তব্য হল উহা পরিত্যাগ করতঃ অতি শীঘ্র আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা।

মহান আল্লাহ বলেন,

وتوبوا إلى الله جميعا أيها المؤمنون لعلكم تفلحون
অর্থঃ “হে মুমিনগণ আল্লাহর নিকট তোমরা তাওবাহ কর তবেই তোমরা সফলকাম হবে।” (সূরা নূরঃ ৩১)

তিনি আরো বলেনঃ ياأيهاالذين آمنوا توبوا إلى الله توبة نصوحا “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধভাবে তাওবা কর।” (সূরা তাহরীমঃ ৮)

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ