শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রসঙ্গ শহিদুল্লাহ; আটটি প্রশ্নের জবাব চাই...

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ
আলেম, লেখক ও ওয়ায়েজ

আমি প্রায় প্রত্যেক বয়ানে মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করে থাকি। এটি আমার শ্রোতারা ভালো করেই জানেন। সমস্ত ওলামায়ে কেরাম মাদকবিরোধী মানসিকতা লালন করেন।

মাদরাসা-মসজিদ পবিত্র স্থান। মসজিদে অনেক সময় চুরি হয়। তার মানে এই নয় ‘মসজিদ চোরের আখড়া’ বা ‘মসজিদে চলছে রমরমা চুরি ব্যবসা’।

হাফেজ শহিদুল্লাহ ইয়াবা-সহ গ্রেফতার। সে আসলে অপরাধী কি না, নাকি নাটকের শিকার, এগুলো তদন্ত করা সরকারের কাজ। শহিদুল্লাহ’র স্বজনরা যদি মনে করে ঘটনাটি স্রেফ একটি নাটক, তাহলে তারা সংবাদ সম্মেলন কিংবা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। টেকনাফের একরাম হত্যার মতো যদি এটিও নাটক প্রমাণ হয়, তখন না হয় প্রতিবাদ করবো। কিন্তু আমার প্রশ্ন ভিন্ন জায়গায়-

এক. সময় টিভির প্রতিবেদক বললো, শহিদুল্লাহ পটিয়া মাদরাসার ছাত্র, অথচ সে পটিয়া মাদরাসার ছাত্র নয়। প্রতিবেদকের এই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য কী? নাকি গোপন ক্যামেরার পাশাপাশি গোপন কোনো উদ্দেশ্য আছে?

৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পটিয়া মাদরাসা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের একটি মজবুত ঘাঁটি। সেই ঘাঁটিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় কেনো?

দুই. তাকে মাদরাসার ছাত্র বলে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম তথাকথিত কোনো হুজুরকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হলো। এটিকে নিশ্চিত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে হবে।

কিন্তু সেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় এতো তোলপার কেনো? অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের কি তাদের শিক্ষা জীবনের উদ্বৃতি দেয়া হয়েছিলো? বলা হয়েছিলো কে কোন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র? তাহলে শহিদুল্লাহ’র ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান টেনে আনার মানে কী?

তিন. শহিদুল্লাহ’র সাথে যেই যুবককে ধরা হলো, সেই যুবক শিরোনামে নেই কেনো? তাকে নিয়ে হচ্ছে না কোনো টকশোও। ইয়াবা-সহ শুধু শহিদুল্লাহকে নয়, ধরা হয়েছিলো সেই যুবককেও। ১৫ হাজার পিস ইয়াবা যেই সেই কথা!

তাহলে শহিদুল্লাহ ও সেই যুবককে ক্রসফায়ার দেয়া হলো না কেনো? যদিও আমি ক্রসফায়ারের পক্ষে নই।

চার. শহিদুল্লাহকে ধরতে পুলিশ তাদের সঙ্গে মিডিয়ার গোপন ক্যামেরাগ্রুপ নিয়ে গেলে, টেকনাফের একরামসহ অন্যান্য মাদকবিরোধী অভিযানের সময় নিলো না কেনো?

পাঁচ. শহিদুল্লাহকে দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করানো হয়েছে। একজন অপরাধীকে দিয়ে তেলাওয়াত করানোর মানে কী হতে পারে! নাকি পাবলিককে এই বিশ্বাস জন্মানোর জন্য, সে হুজুর ও মাদরাসার লোক? এটি কুরআনের সাথে মশকারা নয়! অন্য কোনো অপরাধীর থেকে কি এমন কোনো ছড়া-কবিতা কিংবা গান শোনা হয়েছিলো?

যে ব্যক্তি সুরা মায়েদা জিজ্ঞেস করেছিলো, সে নিজ কি ওই সুরা জানে? পবিত্র কুরআন নিয়ে এতোবড় ফাজলামোর সাহস কোথায় পেলো সে?

ছয়. প্রতিবেদনে একজন অফিসারকে বলতে শোনলাম, আগে মসজিদে জঙ্গি ছিলো এখন ইয়াবা শুরু হয়েছে। আগে মসজিদে জঙ্গি ট্রেনিং হতো এর প্রমাণ কি উনি দিতে পারবেন?

ওই অফিসার এমন ভিত্তিহীন কথা কী করে বললেন? নাকি তারা মানুষকে মসজিদবিমুখ করতে চায়? তাদের স্মরণ রাখা উচিত, বাংলাদেশে সবচেয়ে তাদের সেক্টরে অন্যায় ও দুর্নীতি বেশী।

মাদক সাপ্লাই, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, নির্দোষকে দোষী বানানো, খুন, জুলুম, নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে এমন কেনো অন্যায় নেই যা তারা করে না। মিডিয়া প্রমাণ।

ইউটিউবে সার্চ দিলে এমন হাজার অপকর্ম বেড়িয়ে আসবে। মানুষ তাদেরকে তাদের কর্মকান্ডে চোর-ডাকাতের চেয়ে ভালো জানে না। কিছু কিছু ভালো অফিসার থাকলেও তাদের অপরাধের তলে তাঁরা চাপা পড়ে আছেন।

সে যদি পেছনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতো, আমার মনে হয় লজ্জায় মুখ খুলতে পারতো না। কোনো কাজের সমাধান করে দিলেও অন্যায়ের মাধ্যমেই করে তারা। অর্থাৎ 'ঘুষ'! ঘুষ ছাড়া যারা এক মুহূর্তও চলে না, তাদের মুখে নীতির কথা মানায় না।

সাত. টিভি চ্যানেলগুলি পাগল হবার অবস্থা। শহিদুল্লাহকে নিয়ে এমনভাবে পড়েছে, মনে হয় যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে! এটির আশায়ই যেনো তারা ক্যামেরায় শান দিচ্ছিলো বহুদিন যাবত? কিন্তু কেনো?

একজন শহিদুল্লাহ তাদের কাছে এতো গুরুত্ব পাবার কারণ কী? টুপি জুব্বা আর হাফেজ বলে? একাত্তর টিভি তো আধাজল খেয়ে নেমেছে! বারবার বলতে চাচ্ছে ‘মাদরাসা মাদকের আস্তানা’। উপস্থাপিকা মহিলা বললো- একসময় তারা মাদরাসা মানেই জঙ্গি বলে প্রচার করতো, কিন্তু হলি আর্টিজানের পর সে বিশ্বাস ভেঙ্গেছে! হাউ ফানি!! তাহলে কোন সূত্রে মাদরাসা মানেই জঙ্গি বলেছিলো তারা?

আসল সন্ত্রাস যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে লালন-পালন হচ্ছে, কই তাদের নিয়ে তো মিডিয়ার তেমন লম্ফঝম্ফ দেখি না? মাদক! সেও একই কথা! যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মাদক ধরা পড়ে, তাদের কেনো লাইমলাইটে আনছে না? জেলখানায় কিংবা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ক'জন হুজুর আছে শুনি? ক্রসফায়ারেই বা ক'জন পড়েছে?

আট. টুয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার পোর্টালের শিরোনাম- ‘মসজিদে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা’। ভাবতে পারেন কতোবড় জালিয়তি! আচ্ছা রমরমা কাকে বলে? আর ‘মসজিদে’ শব্দটি কেনো আনলো? বুঝতেছি না! ওরা কি মুসলমার না? নাকি মরবে না? ওরা কি মসজিদে যায় না? মসজিদ মাদরাসায় ওদের এতো এলার্জি কেনো?

মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট- ওদের টার্গেট ইসলাম। দেশ গোল্লায় যাক! ইসলাম ধ্বংস করতে পারলেই পশ্চিমাদের মতো রাস্তা-ঘাটে পেটে বাচ্চা দেয়া যাবে।

শহিদুল্লাহ আলেম নয়, সন্দেহ ভিডিও ফুটেজ নিয়েও

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ