শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


যেসব খাবার পুনরায় গরম করে খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আপনি কি দিনের যেকোনো সময়ে যা কিছুই খেতে মন চায় তা-ই চট করে খেয়ে ফেলার দলে? আধুনিকতার এই যুগে ওভেনে একেক সময়ে খাবার গরম করে খাওয়াটা কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু এই চর্চাটি কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? আর এভাবে খেলেও তা শরীরে কতটা ক্ষতি করতে পারে তা জানা দরকার।

রান্না করার পর পুনরায় খাবার গরম করে খেলে অনেক সময় খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও এতে খাবারের প্রোটিন ও নাইট্রেট ভেঙে যায়, যাতে করে খাবার বিষাক্ত হয়ে যায় এবং তা মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

বিশেষ কিছু খাবার যা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা হয় এবং পরবর্তীতে তা গরম দিলে বিভিন্ন ধরনের হজমজনিত অসুখ যেমন- পেট খারাপ, বমি, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। যদিও এর মধ্যে কিছু কিছু খাবার পুনরায় গরম করলে অল্প সমস্যা হলেও কোনো কোনো খাবারে এর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া খুব গুরুতর হতে পারে।

মুরগির মাংস
যেভাবেই বা যত সুস্বাদু করেই মুরগির মাংসের কোনো আইটেম বানানো হোক না কেন, রান্নার পর তা পুনরায় গরম করা হলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। রেফ্রিজারেটারে রাখা রান্না করা মুরগির মাংসের আইটেম পুনরায় গরম করে খেলে তা মুরগির মাংসে থাকা প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দেয়। আর এর ফলে হজমশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটে।

প্রোটিনের পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য অ্যামাইনো ও মাংসে থাকা নাইট্রেটকে একত্রিত করে নাইট্রোসেমিন তৈরি করে যা ক্যান্সার হওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত। খাওয়ার পর যদি কিছুটা রয়ে যায়, তবে তা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। যদি গরম করে খেতেই হবে তবে চুলায় অল্প আঁচে একটু বেশি সময়ের জন্য গরম করে নিন।

বিশ্বসেরা হাফেজরা তারাবি পড়াচ্ছেন কোথায়?

ভাত
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, কাঁচা চালে ব্যাকিলাস সেরাস নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শরীর খারাপ করার কারণ। যখন ভাত রান্না করা হয় তখন এই স্পোরগুলো অঙ্কুর করার জন্য জায়গা করে দেয়। যখন ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তা রাখা হয়, তখন সেই স্পোরগুলো এন্টেরোটক্সিন উৎপন্ন করতে পারে যা পেট খারাপ বা খাবারে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।

পুনরায় এই ভাত গরম করলে তা ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর এর ফলে বমি ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

পালং শাক
পালং শাক হলো অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও নাইট্রেট। রান্নার পর এটি পুনরায় গরম করে খেলে পুষ্টিকর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং বিষাক্তও হয়ে যায়। এছাড়াও এর ফলে পালং শাকে থাকা নাইট্রেট ভেঙে নাইট্রাইট ও অন্যান্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থের জন্ম দেয়।

এই যৌগগুলো মেথেমোগলোবিনেমিয়ার উপস্থিতি ঘটায়, যা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রায় প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে পেট খারাপ হয়। এই নাইট্রাইটগুলো নাইট্রোসেমিনে রূপান্তরিত হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাওয়ার পর কিছুটা রয়ে গেলে তা ফেলে দেয়াই ভালো। দ্বিতীয়বার পুনরায় গরম করে খাওয়ার অভ্যাসটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

আর যদিও পুনরায় গরম করে খেতে হয়, তবে রান্নার পরপরই ঠাণ্ডা করে নিতে হবে এবং ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রায় একে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে করে নাইট্রেটকে নাইট্রোসেমিনে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়টি প্রতিরোধ করা যাবে।

ডিম
প্রোটিনে ভরপুর এই খাবারটি পুনরায় গরম করে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসলে ডিমে থাকা প্রোটিনগুলো ভেঙে যায় এবং খাবারটি বিষাক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে সেদ্ধ বা ভাজা ডিম পুনরায় গরম করে খেলে তা হজম প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ডিমে থাকা এই প্রোটিনের ভেঙে যাওয়ার ফলে স্যামোনিলা নামের ব্যাকটেরিয়া জন্মানো শুরু করে, যা জ্বর, ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথার জন্য দায়ী। আর যদি ডিম দিয়ে রান্না করা কোনো আইটেম ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা হয়, তাহলে এই ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা আরও বেড়ে যায় এবং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের অসুখবিসুখ করতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

কাতারে সামরিক হামলার হুমকি সৌদি আরবের!

মাশরুম
রান্না করার পর পুনরায় মাশরুম গরম করে খেলে তা হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়াও হৃদরোগজনিত সমস্যাও হতে পারে এর কারণে। মাশরুমের জটিল প্রোটিন যৌগ এদের পুষ্টিগুণ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তবে পুনরায় গরম করে খেলে মাশরুমে থাকা প্রোটিনগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং পুষ্টিগুলো এর গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে। তাই রান্নার পরপরই মাশরুম খেয়ে নেয়া ভালো।

রান্নার সময় তা যতটুকু খেতে পারবেন বা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই নিন। আর যদি রেফ্রিজারেটরে রাখাও হয়, তবে অনেকক্ষণ আগে বের করে রেখে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসলে তখন খান। তবে মনে রাখবেন যে, মাশরুম পুনরায় গরম করে খেলে আপনার হজমে ও হৃদরোগজনিত সমস্যা হতে পারে।

আলু
যদিও আলু খুব পুষ্টিকর ও সুস্বাদু, তবুও বেশি সময় ধরে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা হলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। আলু পুনরায় গরম করে খেলে এর স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও তাপ সংবেদনশীল ভিটামিন, যেমন- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি।

তাই পুনরায় গরম করার কারণে আলুতে থাকা ভিটামিনগুলোর মাত্রা কমে যায়। এছাড়াও এতে করে মাথা ঘোরানো, অসুস্থতা ও পেট খারাপ করতে পারে। উপরন্তু, এর ফলে বটলিজম (বিরল একধরনের ব্যাকটেরিয়া) উৎপন্ন হতে পারে, যা হজমশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যদি দুই ঘোঁটার চেয়ে বেশি সময় ধরে রান্না করা আলু ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা হয়, তবে ব্যাকটেরিয়ার প্রজননস্থল কার্যকরী হয়ে যায়।

আর এর ফলে খাবারে বিষক্রিয়া হতে শুরু করে। এতে বটুলিনাম নামে একটি ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয়, যার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ এবং পেশীবহুল পক্ষাঘাতও হতে পারে।

সেলরি
স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই সবজিটি পুনরায় গরম করে খেলে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। সেলরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট, যা পুনরায় গরম করার ফলে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। পুনরায় গরম করার ফলে এতে থাকা নাইট্রেটগুলো নাইট্রিটে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং ক্যান্সারজনিত পদার্থ উৎপন্ন করে যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।


সম্পর্কিত খবর