শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


সৈয়দ ফয়জুল করীম, আপনাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

বাংলাদেশের যুবক আলেমদের মধ্যে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির। একজন প্রখ্যাত আলেম, বক্তা এবং শায়খুল হাদিস। দেশ, ইসলাম এবং সমসাময়িক বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তর, যা তিনি ইতোমধ্যেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইতিহাসের অনেক খুটিনাটি বিষয়ে তার বিচরণ ঝরঝরে। দিন তারিখ ক্ষণসহ তিনি বলে দিতে পারেন চোখ বন্ধ করে। তার জ্ঞান গরিমায় বিমুগ্ধ দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ। বর্তমান বাংলাদেশের যে কজন যুবক নেতাকে মানুষ অনুরসরণ করে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথা শোনে, বক্তব্য শোনে তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

তিনি একজন বংশীয় ঘরের ছেলে। তার দাদা বাবারাও বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিলেন। লাখ লাখ মানুষ তাদের ভক্তি করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষ।

আল্লাহ পাক তার মধ্যে ঈর্ষা করার মতো আলো দিয়েছেন, মেধা দিয়েছেন। তিনি গোটা দেশ জুড়ে সে আলো ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।

প্রিয় এই মানুষটাকে নিয়েই আজ আমাকে লিখতে হচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই তার মতো বিখ্যাত, শ্রদ্ধেয় মানুষকে নিয়ে লিখতে পারা যে কোনো বিবেচনায় সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আজ আমাকে লিখতে হচ্ছে বেশ কিছু অপ্রিয় প্রসঙ্গে। যা লিখতে না পারলে হয়তো আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। তবু আমাকেই লিখতে হচ্ছে।

কেউ কেউ বলতে পারেন তার মতো বড় মানুষকে নিয়ে লেখার দুঃসাহস আমি কোথায় পেলাম? উত্তরে শুধু এতটুকুই বলবো, এ সাহস আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছি।

কিছু দিন আগে তিনি ইসলামী যুব আন্দোলনের মজলিসে শুরার এক অধিবেশনে তার নিজস্ব দর্শন সম্পর্কে বলেন, কেউ যদি আমার সমালোচনা করে আমি ক্ষেপে যাই না। প্রথমে দেখি আমার মধ্যে সেই ভুল আছে কি না? যদি থাকে আমি সংশোধন হয়ে যাই এবং যে সমালোচনা করেছে তার প্রশংসা করি। আর যদি দেখি আমার মধ্যে ওই ভুল নেই তবে তার শুকরিয়া আদায় করি। কারণ এর দ্বারা সমালোচক আমার পাপ মোচন করেছে।

মুফতি ফয়জুল করীমের এই বক্তব্য শোনার পরে আমি অভিভুত হয়েছি। একজন মানুষের মনের উদারতা কতো বড় হলে, এলেমে, আমলে, এখলাসে কতো উচ্চস্তরের মানুষ হলে ব্যক্তিগত জীবনে এমন দর্শন ধারণ করতে পারেন তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

তিনি সত্যিই একজন বড় মাপের মানুষ। বড় মানের ইসলামি স্কলার। তার এমন অসংখ্য বক্তব্য আছে যা সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষকে বিমুগ্ধ করেছে।

কিন্তু মানুষটার মধ্যে কিছু সাধারণ মানবিক ত্রুটি আছে যা সংশোধন হওয়া খুব বেশি দরকার। ইসলামের স্বার্থেই তার মানবিক ত্রুটিগুলোর খোলামলো সমালোচনা হওয়া দরকার। কারণ তিনি একজন দ্বীনের দায়ী। একজন জননেতা। একজন ইসলামি স্কলার। তার অসতর্কমূলক মানবিক ত্রুটিগুলোর কারণে ইসলামের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আমি জানি না- যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখছি এগুলো এর আগে কেউ লিখেছে কি না? কেউ তাকে বলেছে কি না? যদি না বলে, না লেখে তবে তার কাছের মানুষরা তার সাথে মোসাহেবি করেছে। তারা তার ভালো চায়নি। তারা তাকে একটা মোসাহেবি বেষ্টনির মধ্যে রেখে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চেয়েছে। যা কোনো ভাবেই সার্বিক কল্যাণকর নয়।

তবে কেউ যে কোনো দিন বলেনি বা বলতে চেষ্টা করেনি এ কথা আমি বিশ্বাস কারি না। কারণ বাংলাদেশের লাখো মানুষ তাকে ভালোবাসে, তার কল্যাণ কামনা করে।

প্রতি রমজানের মতো চলতি রমজান মাসেও চরমোনাইর মাদরাসায় ১৫ দিনের তালিম তরবিয়তের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে মুফতি ফয়জুল করীম কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কমিটি গঠন নিয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। তার ওই বক্তব্যের অংশ বিশেষ সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। জনমনে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

তিনি সেখানে অবশ্যই যৌক্তিক এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তার কথার মর্মকথা হলো- ‘আপনি যদি যোগ্য কাউকে সম্মান না করেন সেটা আপনার বিষয়। আপনার রুচি, আপনার শিক্ষা, আপনার মানষিকতার বিষয়। কিন্তু কাউকে অসম্মান করার অধিকার অাপনার নেই। বিশেষ করে সমাজের সম্মানিত মানুষদের আপনি অসম্মান করতে পারেন না। সব জায়গায় আপনার বা আপনাদের 'খেয়াল-খুশি' প্রজয্য হয় না।’

কিন্তু মুফতি সাহেবের গুরুত্বপূর্ণ এসব কথার যুক্তি এবং গুরুত্ব হারিয়েছে তার উপস্থাপন ভঙ্গির কারণে।

এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বহু জায়গায়, বহু বক্তব্যে মুফতি সাহেব অভিন্ন কাজ করেছেন। তাবলিগ জামায়াত সম্পর্কীত এক আলোচনায় তিনি একই কাজ করেছেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তব সম্মত, তথ্য ভিত্তিক আলোচনা করেছেন, কিন্তু তার উপস্থাপনা ছিল ভয়ানক আপত্তিকর।

কথা বলার সময় তার চোখ মুখ দিয়ে আগুন ঝরছিল। মনে হচ্ছিল তিনি ঝগড়া করছেন। আক্রশ প্রকাশ করছেন। মনের খেদ ঝাড়ছেন। তার হাত পা ছোড়া, অর্থাৎ বডিল্যাঙ্গুয়েজ, বাচন ভঙ্গি, শব্দ চয়ন খুবই নিম্নমানের। যা কোনোভাবেই একজন দ্বীনের দায়ী বা ইসলামি স্কলারের সাথে মানানসই হয় না।

মুফতি সাহেব ‘ইল্লালাহ’ জিকির সম্পর্কে বলতে গিয়ে একই কাজ করেছেন। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। নিজের অহমিকা প্রকাশ করেছেন। বেফাকের কমিটি বিষয়ক আলোচনায় তিনি খুবই অরুচিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার ভাষার ব্যবহার, শব্দের ব্যবহার, বাচন ভঙ্গি, উচ্চারণ ভঙ্গি এবং বিষয় ভিত্তিক উদাহরণ খুবই নিম্ন মানের হয়। যা কোনো ভাবেই তার মতো একজন শিক্ষিত, জ্ঞানী এবং রুচিসম্মত বংশীয় মানুষের সাথে মানানসই হয় না।

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি- বেফাক বিষয়ক তার বক্তব্যের ভিডিও যদি তাকে দেখানো হয় তিনি নিজেই লজ্জিত হবেন।

তিনি প্রায় সময় এর গুষ্টি, ওর গুষ্টি, ছাতা-মাতা, ইত্যাদি জাতীয় অরুচিকর ভাষায় বয়ান করেন। সাধু চলিত মিশিয়ে কথা বলেন। ভুল উচ্চারণে কথা বলেন। যেমন, মূর্খ কে বলেন ‘মুরুক্ষ’। আঞ্চলিকতা মিশিয়ে কথা বলেন। মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। টেনে টেনে ব্যাঙ্গ করে কথা বলেন। স্থান কাল পাত্র বিবেচনা না করে কথা বলেন। মঞ্চ পেলেই ইতিহাসের পাঠ দিতে শুরু করেন।

কোনটা কর্মী সভা, কোনটা জনসভা এর পার্থক্য করেন না। যা তার কথার ওজন এবং গুরুত্ব বিনষ্ট করে। সত্যিকারের সুশীল সমাজের কাছে তিনি অবমূল্যায়িত হন। যা খুবই দুঃখজনক।

গত চরমোনাইর মাহফিলে জুমার নামাজের আগের বয়ানে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা কোনোভাবেই ওই সময়ের কথা ছিল না। তিনি এত লম্বা ভূমিকা টেনেছেন যে তার মূল কথার গুরুত্ব ভূমিকায় বিলিন হয়ে গিয়েছে।

প্রচণ্ড গরমে, ক্ষুধায় মানুষ তার এত লম্বা এবং গুরু বয়ানে বিরক্ত হয়েছে। মানুষ তার কথার গভীরে যেতে পারেনি, মানুষের ধর্যচ্যুতি হয়েছে। তার বোঝা উচিৎ ছিল মানুষ জুমার খুৎবা শুনতে বসেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে বসেনি।

একইভাবে চরমোনাইর তালিম তরবিয়ত অনুষ্ঠানে তিনি যে ভাষায়, যে অঙ্গভঙ্গিতে বেফাক বিষয়ে কথা বলেছেন তা কোনোভাবেই মানানসই হয়নি। ওই অনুষ্ঠানের সাথে ওই বক্তব্য যায় না। এর দ্বারা শ্রতারা ভালো কোনো বার্তা পায়নি।

আমি বিশ্বাস করি- তিনি দ্বীনের জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করেন। সময়ের অভাবে নিজের দেয়া বক্তব্যগুলো নিজে শুনতে, দেখতে এবং পর্যালোচনা করতে পারেন না। কোনো স্টেজে বক্তব্য করতে যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত চিন্ত ভাবনা করার সময় বের করতে পারেন না।

আশপাশ থেকে তাকে খেই ধরিয়ে দেয়ার মতো ভালো কেউ থাকে না, বিধায় তিনি এলোমেলো করে ফেলেন। বিভ্রান্তিকর কথা বলে ফেলেন। যা কোনোভাবেই তিনি ইচ্ছা করে বলেন না এবং অধিকাংশ সময়ে মোসাহেবদের কারনে নিজে বুঝতেও পারেন না। কেউ হয়তো সাহস করে বুঝতে সহযোগিতাও করে না। যা খুবই আশঙ্কার বিষয়।

তিনি অধিকাংশ বয়ানে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক উদাহরণ দিতে গিয়ে শালীনতার বেড়া অতিক্রম করেন। ‘রহিমের বউ কমিমের সাথে এক রাত থাকবে’ এ জাতীয় অনেক হালকা এবং নিম্ন মানের উদাহরণ দেন, নিম্ন মানের ভাষার ব্যবহার করেন যা শ্রুতি মধুর হয় না। ড্রইং রুমে বসে ওসব বয়ান শোনা যায় না। যদিও তার কথার বিষয় বস্তু থাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যৌক্তিক।

একজন দীনের দায়ী বা নেতা বা ইসলামি স্কলারের আরো নরম, কোমল এবং মাধুর্যপূর্ণ হওয়া উচিৎ। সব জায়গায় প্রতিক্রিয়া দেখানো বা অনলবর্ষণ ভালো কিছু না। সব কথা নিজে বলতে হয় না। সব জায়গায় সব কথা বলতে হয় না। মনে রাখা দরকার যে নদীর গভীরতা যতো বেশি তার স্রোতের শব্দ ততো কম।

এখন সময় বদলেছে। মানুষের চিন্তা নেতনা, অভিরুচি আর আগের জায়গায় নেই। এখন মিডিয়ার স্বর্ণযুগ। আপনাদের প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়। মানুষ বিচার বিশ্লেষণ করে। আপনারা শুধুমাত্র একজন পীর বা একজন নেতা নন, একজন নায়কও বটে। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষ আপনাদের অনুসরণ অনুকরণ করে।

আপনারা পান খেতে খেতে ঠোট মুখ লাল করে জনসম্মুখে আসতে পারেন না। স্টেজে বসতে পারেন না। আপনাদের ওসব ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে ভালো দেখায় না। টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে ভালো লাগে না। বরং লাখো যুবকের মনোকষ্ট বৃদ্ধি করে। সমালোচকরা সুযোগ পায়।

আপনাদের পোশাক আশাক, প্রতিটি পদক্ষেপ আরো বেশি সতর্ক এবং রুচিশীল হওয়া দরকার। নিজেকে পরিপাটি রাখা খুব জরুরি। অধিকাংশ সময় আপনার মাথার টুপি পেছন দিকে সরে যেতে দেখা যায়। সামনে থেকে এলো চুল বেরিয়ে যায়। আপনি অসতর্ক অবস্থায় বসে কথা বলেন, আড্ডা করেন। যা আপনার অজান্তেই জনসম্মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

কিছু দিন আগে আপনি শরসিনা মাদরাসায় যাওয়ার সময় গাড়িতে একান্ত কিছু কথা বলছিলেন যা আপনার সফর সঙ্গী কেউ একজন ফেসবুক লাইভে প্রচার করে দিয়েছে।

ভাবতে অবাক লাগে কাদের নিয়ে আপনারা চলাফেরা করেন? কারা থাকে আপনাদের গাড়িতে? কোথায় কী বলতে হবে, কী করতে হবে, এসব বাতলে দেয়ার জন্য আপনাদের একান্ত সচীব/উপদেষ্টা নেই কেনো, যারা আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি দায়িত্বশীল নজর রাখবে?

মনে রাখা দরকার আপনারা এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন যেখানে একমাত্র বেডরুম ছাড়া অন্য কোথাও আপনাদের একান্ত বলে কিছু নেই। সুতরাং নিজেদের প্রাইভেসি নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে।

বর্তমান সময়ের অন্যান্য যুবক নেতাদের দিকে তাকান, তাদের কথা বলার ঢং, শব্দের ব্যবহার, রুচি, স্টাইল খেয়াল করুন। আনদালিব পার্থ, গোলাম মওলা রনি, মাহি বি চৌধুরী, তারেক রহমান, ঢাকার প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকদের দিকে তাকান।

তাদের কথা বলার স্টাইল, শব্দ চয়ন, ভাষার ব্যবহার খেয়াল করুন। এখন আর কেউ চিল্লাপাল্লা করে বক্তৃতা করেন না। চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলে না। সময় বদলে গেছে। তারা রেগে-মেগে কথা বলে না। কথা বলার সময় তাদের চোখ ঠিকরে বেরিয়ে যায় না। অরুচিকরভাবে হাত ছোড়ে না, কিন্তু তাদের কথাও ভাইরাল হয়। মানুষ মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনে। আমলে নেয়, গুরুত্ব দেয়।

বর্তমান বিশ্বে অনেক বড় বড় ইসলামি স্কলার আছে যাদের অনুসরণ করতে পারেন। এতে কেউ ছোট হয়ে যায় না, আপনারাও হবেন না। সত্যিকারের আকাবীরদের অনুসরণ করতে পারেন। বড় মানুষদের, বড় মনিষীদের জীবনী তো আপনি জানেন, পড়েছেন। তাদের সম্পর্কে কথাও বলেন। তারা কিন্তু প্রায় সবাই এক এক টুকরা ‘পাউরুটি’ ছিলেন। নরম, কোমল, মোলায়েম এবং মাধুর্যপূর্ণ ছিলেন।

ঝগড়া করার মতো করে আপনি যে কথাগুলো বলেন সেই কথাগুলোই ধীর ঠাণ্ডা, শান্ত মেজাজে বলা যায়। নরম কোমল করে বলা যায়। মাধুর্য মিশিয়ে বলা যায়। রুচিশীল শব্দে, ভাষায় বলা যায়। হয়তো আঞ্চলিকতায় বিশেষ কোনো দোষ নেই, কিন্তু ভুল উচ্চারণ, সাধু চলিতের মিশ্রণে কথা বলা অত্যান্ত দোষণীয়, যা পরিহার করা দরকার।

আমি জানি আপনি চেষ্টা করলেই পারবেন। একবার চেষ্টা করে দেখুন, আল্লাহ আপনার সম্মান মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিবেন। মানুষের ভালোবাসায়, দোয়ায় অনেক বেশি সিক্ত হবেন।

আমি মনে করি এসব বিষয়ে মুফতি ফয়জুল করীমদের যতোটা দায় তার চেয়ে অনেক বেশি দায় তাদের কাছের মানুষদের। তারা তাদের ভুল ধরিয়ে দেয় না, সুধরে দেয় না। মানবিক ত্রুটিগুলো দেখিয়ে দেয় না। বরং তাকে 'বাংলার বাঘ' এটা সেটা বলে বিভ্রান্ত করে। তেলবাজি করে। যা তাদের দুই ভাইর জন্য এবং দীনের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

মনে রাখা দরকার- তারা দুই ভাই এখনো ফুলের কড়ি। তাদের সঠিক ভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া দরকার। তাদের এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। অঙ্কুরেই তারা যদি ঝরে যায়, বিভ্রান্ত হয় তা হবে আমাদের জন্য, ইসলামের জন্য খুবই হতাশা জনক।

পৃথিবীর কোনো মানুষই নিজের ত্রুটি নিজে দেখতে পায় না। সব জায়গায়, সব ক্ষেত্রে সঠিক কথা বলতে বা সঠিক কাজ করতে পারে না। যে কারনে সব বড় বড় মানুষদের একান্ত সচিব থাকে। উপদেষ্টা থাকে। বিশেষ করে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের জন্য বিষয়টি ‘ফরজের’ পর্যায়ে পড়ে। আমার জানা মতে ফয়জুল করীমদের তেমন কোনো সচিব নেই, উপদেষ্টা নেই।

তাদের ঘিরে রাখে একদল অর্ধশিক্ষিত মোসাহেব। যারা সব কিছুতে তোতা পাখির মতো ঠিক ঠিক বলে কোরাস গায়। সমাজের সঠিক চিত্র, সংগঠনের সঠিক চিত্র, গণমানুষের প্রতিক্রিয়া তাদের সামনে তুলে ধরে না। যা খুবই আশঙ্কার, খুবই উদ্বেগের।

পৃথিবীর কোনো বড় লেখকের বই'ই সম্পাদনা ছাড়া প্রকাশ হয় না। তার মানে এই নয় যে লেখকের জ্ঞান কম বা সম্পাদক লেখক থেকে বড়। ইসলামী আন্দোলনের আমিরের একজন রাজনৈতিক উপদেষ্ট ছিলেন, এতে নাকি আমির ছোট হয়ে যাচ্ছেন, তাই ওই উপদেষ্টার পদ পালটে তাকে আন্দোলনের উপদেষ্টা করা হয়েছে।

এই বুদ্ধি যদি আপনাদের হয় বা আপনাদের আশপাশের অর্ধশিক্ষিত মানুষদের হয় তবে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না।

শুধু এতটুকু বলতে পারি- এই বয়সে আল্লাহ আপনাদের হাতে অনেক বড় ক্ষমতা দিয়েছেন। অনেক মেধা, জ্ঞান, যোগ্যতা দিয়েছেন। এর অপব্যবহার করবেন না। ফখর করবেন না। অবহেলায় নষ্ট করবেন না। আশপাশের মোসাহেবদের বেষ্টনি ভেঙ্গে বেরিয়ে আসুন।

সত্যিকারের সমালোচকদের কদর করুন। পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত বিশ্ব বিখ্যাত স্কলারদের/নেতাদের বক্তব্য শুনুন। তাদের বক্তব্যের ভিডিও দেখুন। ভিন্নমত মূল্যায়ন করুন। সমালোচনা বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হোন। একান্তে নিজেদের বক্তব্যের ভিডিওগুলো দেখুন। নিজেদের সাথে বোঝাপড়া করুন।

সমসাময়িক অন্য নেতাদের কথার সাথে নিজের কথা, অঙ্গভঙ্গি মিলিয়ে দেখুন। আমি নিশ্চিত নিজেদের ভুল নিজেরাই বুঝতে পারবেন। সে মেধা, যোগ্যতা আপনাদের আছে।

শুনেছি এই অল্প বয়সে আপনার শরীরে কঠিন রোগ বাসা বেঁধেছে। নিজের প্রতি আরো বেশি যন্তশীল হোন। নিয়মিত হাঁটাচলা করুন। ব্যায়াম করুন। খাওয়া দাওয়ায় অধিক সতর্ক হোন। মনে রাখবেন, আপনাকে যেতে হবে অনেক দূর। অঙ্কুরেই ঝরে গেলে চলবে না।

গন্তব্য এখনো অনেক দূরে। আপনি বা আপনারা মাত্র যাত্রা শুরু করেছেন। এখনি বিভ্রান্ত হলে চলবে না। স্টেজের সামনে লাখ লাখ মানুষ দেখে বিভ্রান্ত হলে হবে না। অনেক বেশি ধর্যশীল হতে হবে। গায়ের চামড়া মোটা করতে হবে। সব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না।

এখনি যদি সতর্ক না হন এক সময় সত্যিই আপনারা একা হয়ে যাবেন। রুচিশীল, চিন্তাশীল, সত্যিকারের সুশীল কাউকে পাশে পাবেন না। যা হবে দেশ এবং ইসলামের জন্য সত্যিই দূর্ভাগ্য জনক।

যারা আপনাদের ঘিরে মোসাহেবি করে ওরা সুদ্ধ মানুষ না। ওরা সমাজের, সংগঠনের সঠিক চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরে না। আপনারা এখন যে চেয়ারে বসে আছেন ওই চেয়ারে বসে এগুলো দেখা, বোঝা এত সহজ হয় না।

সুতরাং শিক্ষিত যোগ্য একান্ত সচিব/উপদেষ্টা নিয়োগ দিন। খাদেম, গাড়ির ড্রাইভার, তেলবাজদের থেকে সতর্ক থাকুন। আপনাদের দলেই অনেক যোগ্য মানুষ আছেন যারা আপনাদের কোনো তেলবাজি করবে না, সঠিক ভাবে গাইড করবে, তাদের মূল্যায়ন করুন।

এ ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্র নেতাদের অগ্রাধিকার দিতে পারেন। যেমন, মাওলানা নেয়ামতুল্লা ফরিদি, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, শাহ ইফতেখার তারিক, সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, ফজলে বারি মাসউদ প্রমুখদের অগ্রাধিকার দিতে পারেন। (নিশ্চই আরো অনেকে আছেন যাদের নাম আমি জানি না) পালাক্রমে তাদের সাথে রাখুন।

ব্যক্তিগত প্রেস সচিবসহ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক সচিব/উপদেষ্টা নিয়োগ করুন। মনে রাখবেন, আপনারা বিভ্রান্ত হলে, মিসগাইড হলে দেশ এবং ইসলামের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

বেফাকের পদ স্থগিত নিয়ে মুফতি ফয়জুল করীমের তীব্র প্রতিক্রিয়া

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ