বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


আরজাবাদে আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী রহ.-এর হাতে গড়া তাফসির প্রশিক্ষণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : কুরআনুল কারিমের গবেষণা ও তাফসির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইসলামি সমাজে যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান। বৃটিশ কবলিত ভারতীয় উপমহাদেশে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ.-এর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান রহ.-এর প্রেরণায় আল্লামা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি রহ. তাফসিরুল কুরআন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

সেখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে শাইখুত তাফসির আহমদ আলী লাহোরী রহ. আরো কার্যকর ও উন্নত রূপরেখার আলোকে উলামায়ে কেরামকে পবিত্র কুরআনের তাফসির প্রশিক্ষণ দেন।

আল্লামা লাহোরী রহ. কর্তৃক পরিচালিত তাফসির প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সংক্ষিপ্ত তাফসির প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেন তাঁরই সুযোগ্য শাগরেদ আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ.৷

শাইখুত তাফসির আল্লামা কাসেমী রহ.-এর প্রশিক্ষণ কোর্স থেকে বহু উলামায়ে কেরাম প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রশিক্ষণ কোর্স সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য কাসেমী রহ. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তালিমুল কোরআন সমিতি।

মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ. সুস্থ থাকাবস্থায় তাফসির কোর্সে একাই প্রশিক্ষণ দিতেন।

পবিত্র মাহে রমজানে তাঁর রুটিন ছিল, সকাল ৮টা থেকে দুুপুর ১২টা পর্যন্ত তাফসিরের দরস দিতেন। জোহরের পর থেকে আসর পর্যন্ত দরস হত। ৎ

তারাবির পর শুরু করে সাহরি পর্যন্ত দরস দিতেন। রাতের দরসে তিনি ফেরাকে বাতেলার ওপর প্রশিক্ষণ দিতেন। সে সময় বিভিন্ন ফেরাকে বাতেলার ভ্রান্তির ওপর দালিলিক আলোচনা করতেন।

বাইবেল খুলে খ্রিস্টবাদের অসারতা তুলে ধরতেন। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ও তার অনুসারীদের লিখিত বই থেকেই কাদিয়ানি মতবাদের ভণ্ডামি সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতেন। মওদুদিবাদ ও শিয়াইজ্ম সম্পর্কে তাদের বই-পুস্তক থেকেই ভ্রান্তিসমূহ তুলে ধরতেন।

রাতের দরসে কখনো কখনো প্রশিক্ষণার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে উলামায়ে কেরাম উপস্থিত হতেন। সে সময়ের বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। ফেরাকে বাতেলা ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়সহ নানা বিষয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হতো প্রশ্নোত্তর পর্বে।

তিনি উত্থাপিত যৌক্তিক প্রশ্নের প্রমাণভিত্তিক উত্তর প্রদান করতেন। রাতে তাফসিরের দরস শেষে ব্যক্তিগত আমল থেকে ফারেগ হয়ে খাবার গ্রহণ করতেন। ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমাতেন।

অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কারো কাছ থেকে সহযোগিতা নেননি। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর মাওলানা ইমরান মাযহারী, মাওলানা তৈয়্যব ও মাওলানা আনোয়ার জামশেদ সাহেবের সহযোগিতা নিয়েছেন। তারা খাতা দেখে বলতেন আর প্রশিক্ষণার্থীরা লিখত।

উল্লেখ্য, সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো, প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর বাধ্যতামূলকভাবে তাকরির লিপিবদ্ধ করতে হতো।

আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ.-এর ইন্তিকালের পর এ কোর্সে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আল্লামা মুফতি তাজুল ইসলাম। তিনি ফেরাকে বাতেলার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। কুরআন মাজিদের তাফসির প্রশিক্ষণ দিতেন মাওলানা মোস্তফা আজাদ রহ.৷

এছাড়াও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন মাওলানা তৈয়্যব ও মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস৷ মাওলানা ইমরান মাযহারী যতদিন আরজাবাদে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তিনিও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সেখানেও একই নিয়মে পবিত্র কুরআনের তাফসির প্রশিক্ষণের কোর্স চালু করেছিলেন।

মুফতি তাজুল ইসলাম সাহেব ছাড়া বাকি সবাই আল্লামা কাসেমী রহ.-এর কাছ থেকে তাফসির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মুফতি সাহেব হাফেজুল হাদিস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ.-এর নিকট পবিত্র কুরআন তাফসিরের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

ইনশাআল্লাহ প্রতি বছরের মতো  এ রমজানেও জামিয়া আরজাবাদে পবিত্র কুরআনের তাফসির প্রশিক্ষণ পরিচালিত হবে।

তাফসির প্রশিক্ষণ কোর্সের বৈশিষ্ট্যাবলি  :

★ বর্তমান যুগে মানুষের সম্মুখে কুরআনের সার্বজনীন দাওয়াত উপস্থাপন।
★ কুরআনের আলোকে জীবন সমস্যার সমাধান পেশ।
★ প্রতিটি সুরার বিষয়বস্তু আলোচনা।
★ সুরা বাকারা ও সুরা আলে ইমরানের প্রতিটি আয়াতের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, শিক্ষা ও কুরআনের বৈপ্লবিক কর্মসূচিসমূহ বিশেষ যত্ন সহকারে পাঠদান।
★ কাদিয়ানি, বাহাই, শিয়া, মওদুদি, খৃস্ট ও ইয়াহুদিবাদের ওপর দালিলিক পর্যালোচনা ও তাদের যুক্তি খণ্ডনপূর্বক অসারতা প্রমাণ।

প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তির শর্তাবলি :

★ কমপক্ষে জামাতে জালালাইন বা ফাজিল পাশ হতে হবে।
★ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় বিশ্বাসী হতে হবে।
★ আকাবিরে দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শের অনুসারী হতে হবে।
★ ভর্তিচ্ছু প্রত্যেক ছাত্রের সনদ বা প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।

‘যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের কাছে দায়বদ্ধ নয় ইরান’
মহাকাশের বুকে স্বপ্নের স্বাক্ষর
দুই মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর লাগাম ধরবে বাংলাদেশ


সম্পর্কিত খবর