শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


শবেবরাতে রাসুল সা. যেভাবে কবর যিয়ারত করতেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী মুহাম্মদ আবু সাঈদ: প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে পবিত্র শবে বরাতে কবর যিয়ারত করেছেন, আমরা সেভাবে কবর যিয়ারত করলে তা হবে ইত্তেবায়ে রাসূল ও ইবাদত এবং সওয়াবের কাজ।

আর নিজ থেকে কোন নিয়ম ও সময় বা অন্য কিছু সংযোজন করলে তা হবে ইত্তেবায়ে নফ্স, যা গুনাহের কাজ।

তাই আসুন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে শবেবরাতে কবর যিয়ারত করেছেন, হাদিস শরীফ থেকে জেনে নেই।

হযরত আয়েশা রাযি: বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে রাতগুলোতে আমার নিকট অবস্থান করতেন- কখনো কখনো রাতের শেষাংশে “জান্নাতুল বাকী” নামক কবরস্থান যিয়ারতে বের হতেন।(মুসলিম শরীফসূত্রে মিশকাত১৫৪ পৃষ্ঠা)

হযরত ইব্নে মাসউদ (রাযি) বলেন-আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আব্দুল্লাহ জুল-বাজাদীন রাযি. এর কবরে দেখেছি, তিঁনি তার দাফন শেষে কিবলামুখী হয়ে দু’আয় দু’হাত তুলেছেন। (ফাতহুল বারী-১১/১৪৮পৃ)

(শবে বরাতে কবর যিয়ারত সম্পর্কে) হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন- একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট তাশরীফ আনলেন এবং স্বীয় (অতিরিক্ত) পোষাক খুললেন, একটু পরে পূনরায় পোষাক পরিধান করে বের হয়ে গেলেন।

এতে আমার আত্বমর্যাদাবোধ হয়। এ ধারনায় যে, হয়ত তিনি আমার কোন সতীনের নিকট গিয়েছেন। তাই আমি তাঁকে খুজতে বের হলাম। অবশেষে “জান্নাতুলবাকী” নামক কবরস্থানে পেলাম- তিনি মুমিন নারী-পুরুষ ও শহীদদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। (শুআবুল ইমানলিল বাইহাকী ৩/৩৮৪ পৃঃ)

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন- একরাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হারিয়ে খুজতে বের হলাম। হঠাৎ তাকে “জান্নাতুলবাকী” নামক কবরস্থানে পেলাম। তিনি এরশাদ করলেন- নিশ্চই আলাহ্ তা’আলা শাবানের পনেরতম রজনীতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বনী কাল্ব এর বকরীগুলোর পশম অধিক মানুষকে ক্ষমা করেন। (তিরমিজি ১/১৫৬ পৃঃ ইবনে মাজা-১০০ পৃঃ, বায়হাকী-৩/৩৭৯ পৃঃ ইত্যাদি)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণবৎসর-ই মাঝে মাঝে শেষ রাতে অনির্দিষ্ট কোন এক সময়ে কবর যিয়ারত করতেন।

সে ধারাবাহিকতায় দু’একবার শবেবরাতেও একান্তই একা কবর যিয়ারত করেছেন। এতে প্রতি শবেবরাতে কবর যিয়ারত করা প্রমান হয় না। আর কবর যিয়ারত শেষে দু’হাত তুলে দু’আ করতে হলে কিবলামুখী হয়ে দু’আ করবে বলে প্রমান হয় ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর যিয়ারতের জন্য কখনো সময় নির্ধারণ করে প্রচার ও ডাকাডাকি করেননি।

পক্ষান্তরে ,হযরত আয়েশা (রাঃ) কতৃক প্রকাশ হওয়ার পরও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবী রা. ও তাবেয়ী এমনকি পরবর্তী আইম্মায়ে মুজতাহেদীন কর্তৃক সময় নির্ধারন করে প্রচার করা ও এন্তেজাম করার প্রমান কোথাও পাওয়া যায়না ।

সুতরাং বর্তমানে আমাদের কবর যিয়ারতও নিজ সময়মত ঘোষণা বিহীন একাকী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মত হলেই তা হবে ইত্তেবায়ে রাসূল, ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। অন্যথায় তা হবে ইত্তেবায়ে নফ্ছ বা গুনাহের কাজ। অবশ্য এন্তেজাম ছাড়া এমনিতেই কিছু লোক সমবেত হয়ে গেলে তাতে নিষেধাজ্ঞা নেই।

উল্লেখিত দলিল-প্রমাণ পাওয়ার পরেও যদি কেহ ভিন্নমত পোষণ করেন, তাকে শরীআতের বিধান ও উসুল “আল-বায়্যিনাতু আলাল্ মুদ্দা’য়ী ” অনুসারে স্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা উচিৎ ।

যেমন, কেহ কোন সম্পত্তির মালিকানা দাবী করলে ইহার মৌজা, দাগ, খতিয়ান ইত্যাদি নাম ও নাম্বার মিলিয়ে দলিল পেশ করতে হয় । মৌখিক টানা-হেছড়া যুক্তি যেমন দলিল হয় না , তেমনি ইবাদতের ক্ষেত্রেও দলিল হতে পারে না ।

আরো পড়ুন- শবে বরাতের ৬ কাজ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ