বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক সৈয়দপুরে তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ, ‘হিটস্ট্রোকে’ ১ জনের মৃত্যু স্বর্ণের দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ইরান-পাকিস্তানের ঢাবিতে বৃষ্টির জন্য ‘সালাতুল ইসতিস্কা’র অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বৃষ্টির জন্যে সালাত আদায় করলেই অবশ্যম্ভাবী বৃষ্টি চলে আসবে—বিষয়টা তা নয়’

শিল্পের দুর্ভাগ্য : প্রসঙ্গ আল মাহমুদ ও আমাদের শিল্পমন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুলতান আবদুর রহমান : অামি হয়ত কোনোদিনও অাল মাহমুদের সোনালি কাবিন নিয়ে দু-কলম লিখব না। অামার মনে হয় কী, সোনালি কাবিন নিয়ে এতো-এতো লেখা/কথা/অালোচনা হয়েছে যে, অামাদের মতো সাধারণ পাঠকদের জন্য অার কিছুই বাকি নেই। তবে, নতুন-নতুন দিক তো উন্মোচনের অাজও ঢের বাকি, সেসব না-হয় অাজ ও অাগামীর গবেষক-শিল্পীদের জন্য তোলা থাকলো।

দিনযাপনের মতো অাল মাহমুদের অারেকটি বই অাছে যেটি (অামার সামান্য বিবেচনায়) পাঠকপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও অনালোচিত এবং হিশাবের বাইরে; দিনযাপনের থেকে এটি তুলনামূলক অনেক বেশি পরিচিত এবং পঠিত, কিন্তু দুর্ভাগ্য, দিনযাপনের মতোই এটিও অন্ধকারেই থাকল। এটা শিল্প ও শিল্পীসমাজের জন্য দুর্ভাগ্য। অন্ধকার কোন অর্থে, একটু পরেই বুঝতে পারব অামরা।

প্রবন্ধিক ও সাংবাদিক শরীফ মুহাম্মদ লেখেন : ‘দিনযাপন ও কবির আত্মবিশ্বাস কাছাকাছি সময় ও কাছাকাছি ধরনের গদ্য। কবির বিশ্বাসভুবনে প্রবেশ, পরবর্তী শত্রুতা-মিত্রতা, পথচলা এ দুটি বইয়ের গদ্য শরীর।’

শরীফ মুহাম্মদের এই বক্তব্য অামাকে একটি সুন্দর পথ দেখায়। কমুনিস্ট অাল মাহমুদ যতোটা অাদরের ছিলেন সাহিত্যের মূলধারার (এটা তো প্রতিষ্ঠিত সত্য) লেখক/কবিদের কাছে, বিশ্বাসী অাল মাহমুদ ঠিক ততটাই অচ্ছুৎ হবেন ৭২ এর পরে, তারা তাকে নিয়ে, ৭২ পরবর্তী তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে কথা বলবে না বা বললেও ঠেকায় পড়ে অল্পস্বল্প─না-বলারই মতো।

কিংবা জলের মতো ঘুরে-ঘুরে কবির পূর্বসাফল্যের বিবরণ রচনা মাত্র─এতে অবশ্য অবাক হওয়ার তেমন কোনো উপাদান নেই। উপরন্তু যখন কবির ৭২ পরবর্তী অধিকাংশ রচনা হয়ে ওঠে 'শিল্পের অঙ্গনের প্রকৃত কালসাপ'দের কূটচালাচালি অার গোমর-ফাঁসের বিশ্বস্থ সাহিত্যিক দলিল।

তাহলে বিশ্বাসী কবি/শিল্পীদের চুপ থাকার কারণটা কী? যখন তিনি সর্বাধিক চর্চিত বিশ্বাসী-পাড়ায়, সেখানেও তাঁর কবিতা/নানান রকম গদ্য নিয়ে কথা হয়; অাড্ডায়, ম্যাগাজিনে, পত্রিকার কলামে, ফেসবুকে, প্রবন্ধ বইয়ের পাতার পর পাতায়, কিন্তু কোথাও 'কবির অাত্মবিশ্বাস' নেই, অন্তত অামি তো এমনটা দেখি নি এখনো।

যখন অামি ভেবেছি কবির অাত্মবিশ্বাস নিয়ে লিখবো, অামি অনেক সময় নিয়ে স্মরণ করতে চেষ্ঠা করেছি, কোথাও কবির অাত্মবিশ্বাস নিয়ে কিছু বলা হয়েছে কিনা।

ধর্ম এবং দল নির্বিশেষে রচিত অামার প্রিয় প্রবন্ধের বই─পটিয়া চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত─যেখানে কাব্য-সমালোচনায় রসূলুল্লাহ স. থেকে নিয়ে ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ হয়ে অালী মিয়া নদবি রহ., মৌলানা অাবুল কালাম অাজাদ পেরিয়ে ফররুখ, ড. কাজী দীন মুহম্মদকে পরে অাবদুল মান্নান সৈয়দ হয়ে অাজকের মুফতী তকী উসমানী, সবার কথাই অাছে;─কম অার বেশ, কিন্তু অাল মাহমুদ নেই; তাঁর কবির অাত্মবিশ্বাস নেই, দিনযাপন নেই, মায়াবি পর্দা দুলে ওঠো─থাকতে পারতো কিন্তু─নেই।

অাল মাহমুদকে ছাড়া যেকোনো উৎকৃষ্ট সাহিত্যিক-ইতিহাসই (সমালোচনাও) যে শেষ-পর্যন্ত অসম্পূর্ণ, সেটা কাব্যের হোক বা গদ্যের, এটা তো অাজ অার রকেট-সায়েন্টিস্ট হয়ে বুঝতে হবে না।

অামার মনে হয়, অামরা (শিল্পী সমাজ, তিনি যে সিন্ডিকেটেরই অন্তর্ভুক্ত হন বা না-হন না কেন) অাল মাহমুদকে নিয়ে অস্বস্থিতে ভুগি। সেটা অবশ্যই তাঁর রাজনৈতিক পক্ষপাত ও একদা তাঁর জামাত-সংশ্লিষ্টার কারণে।

(যদিও অামার এ-ব্যাপারে ডাউট অাছে, তিনি কতটা জামাত ছিলেন, কিংবা সত্যি ছিলেন কিনা, [অার থাকলেই বা কী?] কিংবা তাঁকে জামাত বানানো হয়েছে কিনা, অবশ্য অাল মাহমুদেরও দাবি তাই, তাঁকে জামাতি বানানো [তৈরি অর্থে নয়] হয়েছে।)

(এটা তো অার ঐতিহাসিক ব্যাপার নয় শুধু, অাজকেও হচ্ছে, পান থেকে চুন খসলেই নাস্তিক; নৈতিক অান্দোলনে গেলেও রাজাকার, রাজনীতিতে ধর্মের কথা বললেই জামাত। তো, অাল মাহমুদ যে এমন অারোপিত নোংরামির শিকার নন, সে কথা কে বললো? অামরা অপেক্ষা করছি, একদিন সত্য অালোতে অাসবেই, এটা ইতিহাসের প্রতিশ্রতি।)

একটা সময়, এবং সেটা খুব নিকটেই অামার মনে হয়, অামরা অাল মাহমুদকে সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করতে শিখব এবং পারব। তবে অাক্ষেপ থাকবে এতোটুকু, কবি সেদিন কিছুই অার জানার জন্য থাকবেন না। তিনি জানবেন না, একদল তরুণ তাঁকে কতোটা ভালোবেসে, তাঁকে খুঁজতে অার তাঁর খোঁজ জানান দিতে, তাঁর বই অার বলপয়েন্ট হাতে তুলে নিয়েছে। তাঁকে শকুনের থাবা থেকে বের করে এনেছে।

যদিও এটা অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য কাজ, ফররুখ কবি তো অাজও শকুনদের থাবার তলেই অাছেন। কিন্তু স্বপ্নের অার সাধের অার সাধনার তো কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই, টপকানোর ইচ্ছা অার শক্তিটা কেবল দরকার। নতুন সময়ের শিল্পসাধকরা সে শক্তিটুকু অর্জন করবেন, এতোটুকুই যা চাওয়া মাত্র।

এসএস

আরো পড়ুন : কবিতার ভবিষ্যত; একটি সিদ্ধান্তহীন বোঝাপড়া


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ