বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা ও কিছু প্রত্যাশা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, প্রাবন্ধিক সাংবাদিক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্রজয়ের পর এবার অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়-এর পর্ব। মহাকাশে স্থাপন করতে যাচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’। এটি একটি জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট । এটির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় যুক্ত হবে।এমন খবর নিশ্চয়ই আনন্দের।

প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে ৪ মে, ২০১৮ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ উদ্বোধন করবেন। আহ, এদিন যদি দেশ থেকে সব ধরনের অনাচারও আকাশে উড়ে যেত!

যতদূর জানি, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূউপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মহাকাশজয়ের সূচনা করে গেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর ওই যাত্রা থেমে যায়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ৪২ বছর পর লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে কক্ষপথে স্থাপিত হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেট স্যাটেলাইটটি ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভাল থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করবে। এটি নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস।আচ্ছা, মানুষকে নৈতিকতা শেখানোর কোনো যন্ত্র কি ফ্রান্স নির্মাণ বা আবিষ্কার করতে পারে না?

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৭ সালে মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ নিয়েছিল। বিষয়টি তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নেওয়া হলে তিনি এতে খুব আগ্রহী হয়ে ওঠেন। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে চলতে থাকে ওই মন্ত্রণালয়ের জোর তৎপরতা।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ‘বঙ্গবন্ধু’ নাম থাকার কারণে মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনের প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। যে কারণে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশকে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য কক্ষপথ বা অরবিটাল প্লট ক্রয় করতে হয়েছে।

বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের যে, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া দেশের বাইরে সম্পন্ন হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। আর এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি অন্যান্য দেশকে ভাড়া দেওয়া হবে। দেশের ৩৭টি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে বছরে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার আয় হবে। এসব চ্যানেল এখন বিদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে ফ্রিকোয়েন্সি কিনে অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

তাছাড়া উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ স্থাপনের মাধ্যমে। বলা যায়, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে স্থাপনের মধ্য দিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ-প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ত্বরান্বিত ও টেকসই হতে যাচ্ছে।

তবে এমন শুভ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আমি এটুকু বলতে চাই, দেশে যারা দুর্নীতি করবে, সন্ত্রাস করবে, জঙ্গিবাদের সাথে যারা জড়িত- তাদের যেন বিচার হয়। কারণ বাংলাদেশটাকে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেখতে চাই।সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত হোক সেটাই চাই। সেটা সম্ভব যখন দেশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।আর এমনটি আমরা পারব নিশ্চয়ই?

soyedfaizul@gmail.com
২৩ এপ্রিল ২০১৮


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ