শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


আসছে রমজান; তারাবির হাফেজরা প্রস্তুতি নিবেন কীভাবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম

চলছে হিজরি বর্ষের রজব মাস। রাসুল সা. রজবের চাঁদ উঠলেই রমজান পর্যন্ত পৌঁছানোর দোয়া করতেন।

প্রস্তুত হতেন রমজান মাসের জন্য। রজব মাসে রমজানের প্রস্তুতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আমাদের সমাজে শুরু হয়েছে রমজানকে বরণ করার নানান প্রস্তুতি।

মুসলিম সমাজে রমজানের সবচেয়ে বড় আয়োজন তারাবির নামাজ। রমজানে মুসলিম বিশ্বের মসজিদে মসজিদে হয় তারাবি এবং কুরআনের খতম। হাফেজগণ দীর্ঘ এক মাস মানুষকে কুরআনের তেলাওয়াত শোনান।

সারা বছর যারা কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ পান না, যারা কুরআনকে সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন না কুরআনের পাখিরা তাদের কুরআনের তেলাওয়াত শোনান। তাই সাধারণ মানুষেরও উৎসাহের শেষ নেই রমজান নিয়ে।

আসন্ন রমজান সামনে রেখে হাফেজ নিয়োগ ও বাছাই চলছে সারা দেশের মসজিদগুলোয়।

হাফেজরাও চেষ্টা করছেন সারা বছরের তেলাওয়াতের ঘাটতি পূরণ করে নিতে এবং কাঙ্ক্ষিত মসজিদে সুযোগ করে নিতে।

কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে হাফেজগণ কিভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন? শুধু সুর আর তাজবিদ বিশুদ্ধ করে নেয়াই কি যথেষ্ট? নাকি আরও কিছু বিষয়ে প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে?

উস্তুাদুল হুফফাজ হাফেজ মাওলানা আবু তাহের গুলজারির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, হাফেজগণ কিভাবে তারাবির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে?

তিনি বলেন, ‘তারাবিতে ভালো করতে হলে সারা বছর তেলাওয়াত করার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত ৩ পারা তেলাওয়াত করা উচিৎ। যারা সারা বছর তেলাওয়াত করতে পারেন নি, তারা রমজানের আগে অন্তত ২ থেকে ৩ খতম তেলাওয়াত করা আবশ্যক। আর অভিজ্ঞ হাফেজের কাছে এক খতম তেলাওয়াত শোনানো।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারা বছর তেলাওয়াত না থাকলে অনেক সময় মাখরাজ, তাজবিদ ঠিক থাকে তাই প্রয়োজনে একটু মশক করে নেয়া।’

বিশেষত এখন যেহেতু ভালো মসজিদগুলোয় তেলাওয়াতের স্টাইলও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাই দেশি ও বিদেশি আন্তর্জাতিক কারিদের তেলাওয়াতের স্টাইল রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে।

আরব কারিদের তেলাওয়াতের স্টাইল এখন খুবই জনপ্রিয় তাই তাদের তেলাওয়াতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

আপনি যখন বিচারক হন তখন কোন কোন বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দেখি তাজবিদ, তারপর পড়া কতোটা সুন্দর এবং সবশেষে ইয়াদ (মুখস্থ) কেমন আছে তা দেখি। কারণ, তারাবি পড়ানোর জন্য মাঝারি ধরনের ইয়াদই যথেষ্ট।’

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান মনে করেন তাজবিদ ও সুরের কারুকাজ ঠিক করলেই একজন হাফেজের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যায় না।

বরং তার উচিৎ তাকওয়া (খোদাভীতি) ও তাহারাত (পবিত্র) এর পূর্ণতা অর্জন করবেন। আমলের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি থাকলে তাও ঠিক করে নিবেন। কুরআনের ইয়াদের সমস্যা থাকলে তা ঠিক করবেন।

তিনি হাফেজদের অনুরোধ করেন তারা যেনো আন্তরিকতার সাথে কুরআনের হক আদায় করে তেলাওয়াত করেন। যাতে মুসল্লিরা কুরআনের স্বাদ ও মর্ম বুঝতে পারে।

দেশের শীর্ষ আলেম মুফতি দেলোয়ার হুসাইনের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, তারাবিতে কুরআনের তেলাওয়াত কেমন হওয়া উচিৎ এবং আমাদের দেশে যেভাবে তেলাওয়াত করা হয় তাতে শরিয়তের প্রত্যাশা পূরণ হয় কি না?

তিনি বলেন, আমাদের দেশের সব মসজিদের তেলাওয়াত এক রকম হয় না। কোথাও কোথাও খুব সুন্দর তেলাওয়াত হয়। কুরআন তেলাওয়াতের নিয়ম হলো তাজবিদের সাথে এমনভাবে তেলাওয়াত করা যাতে প্রতিটি অক্ষরের উচ্চারণ বোঝা যায়। যাকে হদর বলে।

তবে এমন ধীরস্থিরভাবে পড়াও শরিয়তের নির্দেশ নয় যাতে মুসল্লিদের কষ্ট হয় এবং তারা বিরক্ত হয়।

এতো তাড়াতাড়ি পড়াও ঠিক নয় যাতে কিছুই বোঝা যায় না। যেমনটি অনেক মসজিদে হয়। মনে রাখতে হবে, নামাজ শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য নয়। নামাজ এমনভাবে পড়তে হবে যাতে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

তিনি হাফেজদের অনুরোধ করেন তারা যেনো টাকার বিনিময়ে নামাজ না পড়ান। বিশেষত মসজিদে যদি চাঁদা তুলে বা ধার্য করে তাকে টাকা প্রদান করে তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

তবে হ্যা, যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনো মুসল্লি তাকে কিছু দেন তবে তা নেয়া যাবে।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ