বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


নলকূপে পানি উঠছে না, কুষ্টিয়ার মানুষ খাবে কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় পৌর এলাকায় দশ দিনের ব্যবধানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ১৩ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় ১০ হাজার নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত শহরের সব থেকে বড় এবং ভয়াবহ সমস্যায় রূপ নিয়েছে পানির তীব্র সংকট।

শহরের আশপাশের এলাকায়ও শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উঠছে না। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে সেচ সমস্যা। গত কয়েকদিন পানি নিয়ে এসকল অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও ভূ-গর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন হঠাৎ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় শহরের অর্ধেক নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে এবং পৌরসভার পানি সরবরাহ ৩০ শতাংশ কম হচ্ছে।

কুষ্টিয়া শহর ঘেঁষে বয়ে গেছে পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই নদী। শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই গড়াই শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াইয়ের পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যার প্রভাব পড়েছে এই অঞ্চলে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হস্ত চালিত নলকূপ থেকে শুরু করে সব ধরণের নলকূপগুলো অচল হয়ে পড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে জলাশয় ও পুকুরের পানি। যত দিন যাবে এ সংকট ততই প্রকট হবে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার পানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকার অধিকাংশই ওয়ার্ডই ঘনবসতি। প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস। পুরাতন পৌর এলাকায় প্রায় ৫ হাজার এবং বর্ধিত এলাকায় ৯ হাজার টিউবয়েল রয়েছে।

এই হিসাবের বাইরেও অনেক হস্ত চালিত নলকূপ আছে। যার মধ্যে অর্ধেকই বিকল। শুধু নলকূপ নয়, পৌরসভা তাদের সাফলায়ের পানি উত্তোলন করতে না পারায় নাগরিকদের চাহিদা মতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না।

কুষ্টিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) আবুল কাশেম জানান, কয়েক দিনের ব্যবধানে পানির স্তর ১৩ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ১৫ ফুট নিচে পানি পাওয়া গেলেও বর্তমানে ২৮ থেকে ৩০ ফুট নিচে পানির লেয়ার যাওয়া যাচ্ছে।

যার কারণে শহরের অর্ধেক নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। পৌরসভার পানি উত্তোলন ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় নাগরিকদের ঠিকমতো পানি দিতে পারছে না বলেও স্বীকার করেন এই পৌর কর্মকর্তা।

কুষ্টিয়া শহরের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা আড়ুয়াপাড়া, হরিশংকরপুর ও চৌড়হাস।

সরেজমিনে এসকল এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় দিনের বেলায় অধিকাংশ কল দিয়ে পানি উঠছে না। অধিকাংশ নলকূপই অকেজো হয়ে আছে।

রাত ১২টার পরে দু-একটি টিউবয়েলে পানি উঠছে। কিন্তু তা দিয়ে একটি কলশ ভরতে সময় লাগছে কমপক্ষে ২০ মিনিট। এমন অবস্থায় মধ্য রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করছে।

কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া মসজিদ বারী লেনের বাসিন্দ মিজানুর রহমান পরিবারে ৫ জন সদস্য নিয়ে চরম বিপাকে আছেন।

তিনি জানান, সাংসারিক কাজে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লিটার পানির প্রয়োজন। কিন্তু দিনের বেলায় কল দিয়ে কোন পানিই উঠছে না। তিনি বলেন, রাত ১২টার পরে কিছুটা পানি পাওয়া যায়। ওই পানিটুকু পেতে রাতে জেগে থাকতে হয় অথবা ভোর রাতে উঠতে হচ্ছে।

একই এলাকার এনামুল হক বলেন, কয়েক দিন ধরেই পানির তীব্র সংকটে আছি। সারা দিন অপেক্ষা করেও এক ফোঁটা পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে দুই দিন ধরে গোসল না করে আছি।

তালাক নিয়ে ভারতীয় মুসলিম নারীদের ব্যাপারে মিডিয়া যা বলছে তা কতটা সত্য?

পাশের এক আত্মীয় বাড়িতে পৌরসভার পানির লাইন আছে। ওই বাড়ি থেকে পানি এনে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে।

কুষ্টিয়া চৌড়হাস এলাকার উপজেলা রোডের বাসিন্দা সাহানা চৌধুরী বলেন, ৬ জনের সংসারে পানির চাহিদা মেটায় একটি মাত্র নলকূল। সেই নলকূপ দিয়ে প্রায় ১০ দিন ধরে পানি না উঠছে না। সারা রাত জেগে থেকেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক দিন ধরে এভাবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি।

কিন্তু পানি নিয়ে এমন সমস্যা সমাধানে আপাতত বিকল্প কোন পথ নেই কুষ্টিয়া পৌরসভা এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে।

কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি হাসানুজ্জামান বলেন, পৌর এলাকায় আমাদের কোন কার্যক্রম নেই। সবকিছু দেখভাল করেন পৌরসভা। পানির বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষই ভাল বলতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দিন যতই যাচ্ছে পানির স্তর ততই নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ থেকে প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে ২ থেকে ৩ ফুট পানি নিচে নেমে যায়। পরবর্তী মৌসুমে পানির স্তর এক থেকে দুই ফুট উপরে উঠলেও তা পূর্বের অবস্থানে আসে না। যে কারনে এক থেকে দুই ফুট পানির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

স্মার্টফোন পানিতে ভিজে গেলে কী করবেন ?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ