মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


‘কুরআনে হাফেজদের রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মেঝে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম

আফগানিস্তানের উত্তর প্রদেশের একটি মাদরাসায় দাশ্ত ই আর্চি এলাকায় সোমবার বিমান হামলার পর  আফগানিস্তানের সামরিক অভিযানের বিধ্বংসী ও বিভৎস দৃশ্যের বিবরণ দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের একটি মাদরাসায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ হামলার পর শিশুসহ অর্ধশতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেন একজন সরকারি কর্মকর্তা।

কুন্দুজ প্রদেশের দাশ্ত ই আর্চি জেলার একটি মাদরাসায় সোমবার সকালে আকাশপথে হামলা করে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। ফলে কমপক্ষে ৭০জন নিহত হয়। যার মধ্যে শীর্ষ তালেবান কমান্ডাররাও ছিলেন।

জেলা প্রশাসক আল জাজিরাকে গোপনীয়তার শর্তে এ স্বীকারোক্তি দেন। কারণ মিডিয়াতে কথা বলার অনুমতি ছিলো না তাদের।

দেশটির প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ রাদিমানিস আল জাজিরাকে জানান, যে বিমান হামলাটি শীর্ষ তালেবান কমান্ডারদের লক্ষ্য করেই করা হয়েছিলো।

এ হামলায় তালেবান নতুন কমান্ডারসহ যোদ্ধাদের ৩০জন নিহত হয়। ঠিক একই সময় তালেবান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ হয় । কোনো বেসামরিক লোক উপস্থিত না থাকায় হতহতের ঘটনা ঘটেনি।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী আল জাজিরাকে জানান, এ সমাবেশে অনেক বেসামরিক নাগরিক ও মাদরাসার ছাত্র, অনুষ্ঠানে আগত ছাত্রদের অভিভাবক নিহত হয়।

বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) হিজামার সুন্নাহ ডেইটের প্রথম দিন

প্রত্যক্ষদর্শী মুহাম্মদ আবদুল হক আল জাজিরাকে বলেন, মাদরসার এ  অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণী চলছিলো। অনুষ্ঠানের ১১ ও১২ বছর বয়সী শিশু বেশি ছিলো। তাদের থেকে  অল্প বয়সী শিশুও ছিলো।

তিনি বলেন আরো বলেন, ছোট ছোট শিশুদের মা সন্তানদের মৃত্যুতে হাসপাতালের বাইরে কাঁদছিলেন, তাদের সঙ্গে কাঁদছিলেন উপস্থিত লোকজন।

হাজি গোলাম নামের অন্য একজন  প্রত্যক্ষদর্শী আল জাজিরাকে বলেন, এ আক্রমণে ১০০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি আমার খামারে কাজ করছিলাম। যখন আমি হেলিকপ্টার জেট বিমানগুলোকে মাদরসায় বোমাবর্ষণ করতে দেখি তখন তালেবানরা নতুন হাফেজে কুরআনদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করছিলো।

হাজি বলেন, যখন মাদরাসার ভেতরে পৌঁছি অনেক শিশুই মারা গিয়েছিল ও আহত হয়ে চিৎকার করছিলো অনেক শিশু। আমি আমার জীবনে এমন বিভৎস্য দৃশ্য কখনোই দেখিনি।

তিনি বলেন, চারদিকে রক্ত আর রক্ত। কুরআনে হাফেজদের রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মেঝে। আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম।

জাতিসংঘের হামলার তদন্ত

আফগানিস্তানে ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন মিশন টুইটারে বলেছে একটি মানবাধিকার দল ঘটনার তদন্ত করছে।

ইউএনএএমএ সক্রিয়ভাবে গতকাল সন্ধ্যায় বেসামরিক নাগরিকদের সশস্ত্র সংঘাতের প্রভাব থেকে রক্ষা করার অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে সরকারী বাহিনীকে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের উপদেষ্টাদের সহায়তায় আফগানিস্তানের বিমানবাহিনী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তালেবানদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটিতে বিমান হামলা করেছে, তবে বেশ কয়েকটি ঘটনায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

আওয়ার ইসলাম টিভি, সাবস্ক্রাইব করেছেন তো?

এ মাসের শুরুতে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি ইউনিট নাংগাহার প্রদেশের চপারহর জেলায় দুটি গ্রামে একটি মারাত্মক হামলা চালায়, যার ফলে দুই কিশোরসহ সাত কৃষকের মৃত্যু ঘটে।

আফগান কর্মকর্তারা বলছেন, এ হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বেশিরভোগ তালেবান যোদ্ধা ছিল।

জানুয়ারি ৩১ তারিখে মার্কিন বিমান হামলা সমর্থিত আফগান বিশেষ বাহিনী হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্ট অনুযায়ী কান্দাহারে ময়মনবাদ জেলায় তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে একটি আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে এ অপারেশনে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

আরো পড়ুনদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবার আফগান আলেমদের অঙ্গীকার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ