শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


কামেল মোর্শেদের নয়টি গুণ থাকা আবশ্যক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা এসএম আরিফুল কাদের

সব পদার্থের বস্তুই ময়লা হয়। এই ময়লা দূর করার জন্য প্রয়োজন স্ব-স্ব জিনিসের প্রতিষেধক। তাই মানবদেহের বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে একটি গোস্তের টুকরা আছে, যার নাম কলব বা হার্ট।

বালেগ হওয়ার পর থেকে বান্দা যদি কোন গোনাহ করে, তখনই কলবে কালো দাগ পড়ে।

হাদিসের ভাষায়- “মানুষের শরীরে এমন একটি গোস্তের টুকরা আছে, যেটি ভাল থাকলে সমস্ত শরীর ভাল থাকে এবং নষ্ট হলে সমস্ত শরীর নষ্ট হয়ে যায়।  সাবধান! জেনে রাখ, ঐ টুকরাটির নাম হল কলব।(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈ)।

আর কলবকে পরিষ্কার করতে প্রয়োজন একজন কামেল রূহানী ডাক্তার বা মোর্শেদ। তাই কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর”। [সূরা মায়িদা : ৩৫]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বায়ান ১ম খণ্ডে উল্লেখ আছে- ‘আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভে উপযুক্ত মোর্শেদের আনুগত্য করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য’। সে অনুযায়ী একজন কামেল মোর্শেদের অবশ্য কিছু গুণ থাকা আবশ্যক।

যা না থাকলে নিজে আত্মশুদ্ধি না করে অপরকে কিভাবে আত্মশুদ্ধি বা নৈকট্য লাভের পথ দেখাবেন। সে জন্য কামেল মোর্শেদের ৯টি গুণ নিচে উল্লেখ করা হল।

১ম গুণ: কামেল মোর্শেদ সত্য অথবা মিথ্যা এবং ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় আল্লাহর নামে কসম করা থেকে বিরত থাকবেন।

কারণ স্বীয় স্বভাব-চরিত্রকে এই জাতীয় শপথের সংস্পর্শ থেকে পবিত্র রেখে নির্বিকার চিত্তে সাধনা করলে অবশ্যই তা দূর হয় এবং পরিশেষে শপথ করার অভ্যাস ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় বিলীন হয়ে যায়।

এটি মজ্জাগত হলে তার জন্য আল্লাহর নূরের রশ্মীদ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে সে তার উপকারিতা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন।

২য় গুণ: কামেল মোর্শেদ সেচ্ছায় কিংবা পরিহাসচ্ছলে মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। মিথ্যা পরিহারের প্রভৃত্তি স্বভাবে পরিণত হলে তার রসনা সংযত হবে এবং আল্লাহ তার বক্ষদেশ প্রসারিত করে দিবেন এবং মিথ্যা একেবারে বিস্মৃত হয়ে যাবে।

৩য় গুণ: কামেল মোর্শদ অঙ্গীকার প্রতিপালনে দৃঢ় থাকবেন। মূলতঃ অঙ্গীকার করা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্চনীয়। কেননা প্রতিশ্রুতির খেলাপ না করা প্রায়শ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অঙ্গীকার ভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দেয়।

৪র্থ গুণ: কামেল মোর্শেদ কাউকে অভিশম্পাত করবেন না এবং কাউকে কষ্ট দিবেন না। এটি আবরার ও সিদ্দিকগণের স্বভাব। তার জন্য রয়েছে দুনিয়াতে হেফাযত ও আখেরাতে মঙ্গল।

আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদা দান এবং পার্থিব বিপদাপদ হতে রক্ষা করবেন। আর তাকে নৈকট্য দান ও বান্দাদের প্রিয় করবেন।

৫ম গুণ: কামেল মোর্শেদ অত্যাচারীর প্রতি কুঠুক্তি ও দুষ্কৃতির প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন না। আল্লাহর মহব্বতে তা সহ্য করবেন এবং প্রতিশোধ গ্রহণে বিরত থাকবেন। এ অভ্যাসের ফলে সে উচ্চপদে সমাসীন হবেন। তাতে অভ্যস্ত ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান এবং সমগ্র সৃষ্টির ভালোবাসার অধিকারী হন।

৬ষ্ঠ গুণ: কামেল মোর্শেদ জাহেরী সমুদয় পাপ থেকে নিজের দৃষ্টি এবং ইন্দ্রিয়গুলোকে সংযত রাখবেন। কারণ এই অভ্যাসের দরূন মন ও ইন্দ্রিয়ের দ্বারা দ্রুত নেককাজ সাধিত হয় এবং পার্থিব জগতে সুফল লাভ করা যায়।

আর পরকালের জন্য মঙ্গলময় ফল জমা হয়। এ অভ্যাসের দ্বারা এই সকল প্রতিদানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং অন্তরকে ভোগ লিপ্সা মুক্ত করার জন্য প্রার্থনা করা চাই।

৭ম গুণ: কামেল মোর্শেদ পার্থিব ক্ষুদ্র-বৃহৎ যে কোনো প্রকার বোঝা অন্যের উপর চাপাবেন না। এই অভ্যাসের ফলে বান্দাদের ইজ্জত বৃদ্ধি এবং মুত্তাক্বীগণের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। যার দ্বারা সার্বজনীন মঙ্গল কাজের আদেশ ও সার্বজনীন গর্হিত কাজের শক্তি অর্জিত হয়। ফলে সংসারের ছোট বড় সকলেই সমপর্যায়ভুক্ত হয়।

এতমাবস্থায় মোর্শেদকে আল্লাহ তা’য়ালা দৃঢ়তা, বিশ্বস্ততা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রদান করেন। তখন সত্যের ব্যাপারে সকলেই তার কাছে সমান বিবেচিত হবে।

৮ম গুণ: কামেল মোর্শেদ নিকটস্থ জিনিসের প্রতি অন্তরকে প্রসারিত করবেন না। কারণ এই অভ্যাসেই হল প্রকৃত আত্মনির্ভরশীলতা, মহা গৌরব, অসীম রাজত্ব, নির্মল বিশ্বস্ততা এবং নিষ্কলুষ ও সুস্পষ্ট খোদাভীরুতার লক্ষণ।

এটাও তাওয়াক্কুলের অন্যতম দ্বার। যা জেহাদের প্রধান ফটক। ফলে ‘অরা’ এর মর্যাদা লাভ হয় এবং ইবাদতে পরিপূর্ণতা লাভ হয়।

৯ম গুণ: কামেল মোর্শেদের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা পাওয়া একান্ত আবশ্যক। বিনয় হল এই, মোর্শেদ কারো সাথে সাক্ষাত হলে তাকে নিজের চেয়ে উৎকৃষ্ট মনে করা এবং মনে মনে ধারণা করা যে, এই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার চেয়ে উত্তম।

যার দ্বারা মোর্শেদের আধ্যাত্মিক শক্তি মজবুত হয়, রুহানী শক্তির উন্নতি ঘটে, দুনিয়া এবং আখেরাতের স্বাধিকার অর্জিত হয়। উহা তাকওয়ার চরম পর্যায় এবং আধ্যাত্মিক মহাত্মাগণের মর্যাদা। যার দ্বারা অহংকার দূরীভূত হয়।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।


সম্পর্কিত খবর