বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


কবর খননের কাজে দ্রুত যেতে ঘোড়া কিনলেন স্বেচ্ছাসেবী মনু মিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহমুদুল হাসান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

দুর্গম হাওর এলাকার মানুষের অন্তিম যাত্রায় শেষ ভরসার নাম মনু মিয়া। শেষ ঠিকানার অন্যতম কারিগর তিনি। জীবনের অন্তিম যাত্রায় মাটির ঘরের নিবেদিত শিল্পী। কারো মৃত্যু সংবাদ পেলেই খন্তি-কোদাল, দা, করাতসহ যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র নিয়ে তিনি ছুটে যান গোরস্তানে।

অপার দরদ আর যত্নে অন্তিম ঘরটি যে তাকেই তৈরি করে দিতে হবে। এলাকায় মৃত ব্যক্তিদের শেষ শয্যার ব্যবস্থা করে দিতে দিতে তিনি অতিবাহিত করেছেন জীবনের ৪২টি বছর।

কোনোরকম পারিশ্রমিক গ্রহণ ছাড়াই পঁয়ষট্টি বছর বয়সী মনু মিয়া এ পর্যন্ত খনন করেছেন ২ হাজার ৫৯২টি কবর।

দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানিজমি বিক্রি করে কিনেছেন একটি ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে তুলে নেন তার যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই শেষ ঠিকানা সাজাতে মনু মিয়া এখন ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রামে।

ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্ম মনু মিয়ার।

তিনি ছোটবেলায় স্থানীয় গোরখোদকদের সঙ্গে প্রথম প্রথম আত্মীয়স্বজনের কবর খননের কাজে অংশ নিতেন। ক্রমশ দক্ষতা বাড়তে বাড়তে এক সময় এ কাজটিকেই তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর থেকে টানা ৪২বছর ধরে অকৃত্রিম আবেগে তিনি নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন কবর খননের কাজে।

একজন নিখুঁত সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে দুর্গম হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে। কবর খনন করার জন্য নিজের খরচায় তিনি খন্তি কোদাল, দা, করাতসহ সমস্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করে নিয়েছেন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ কাজে তার পারদর্শিতা এবং আন্তরিকতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নিজ গ্রাম বা দূরবর্তী গ্রাম, যেখান থেকে যখনই কারো মৃত্যু সংবাদ পান, আবেগতাড়িত দরদ নিয়ে ছুটে যান মনু মিয়া। তিনি কবর খোড়ার বিনিময়ে কারো কাছ থেকে কোন আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন না। এমনকি যাতায়াত খরচটুকুও না।

আর এ কারণেও মনু মিয়া পাচ্ছেন মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর সম্মান। তিনি নিজেও বার্ধক্যের কিনারায় দাঁড়িয়ে। ফলে কবর খোড়ার কাজে তিনি নিয়োজিত হন এক বিষাদময় আবেগে।

মনু মিয়া জানান, তিনি ঢাকার বনানী গোরস্তানসহ দেশের নানা প্রান্তে কবর খনন করেছেন। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি কারো মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন, তিনি সেখানেও কবর খননের কাজে লেগে গেছেন।

শুরুতে তার স্ত্রী রহিমা বেগম এ কাজে আপত্তি জানালেও মনু মিয়ার এ কাজের প্রতি আগ্রহ, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দেখে তিনিও স্বামীকে যতোটা সম্ভব মানসিক সমর্থন দিয়ে চলেছেন বলে জানান মনু মিয়া।

তিনি আরো জানান, এ কাজ করতে গিয়ে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে যে ভালবাসা পাচ্ছেন, এটাও তার পরম শান্তির। তাই শরীরে শক্তি-সামর্থ্য থাকলে আমৃত্যু এ কাজটি তিনি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন।

তিনি বলেন, আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, যখন আমার কবর খনন করার জন্য আমারই মতো কেউ নিঃস্বার্থ মন নিয়ে খন্তি-কোদাল হাতে-এগিয়ে আসবেন।

মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, এমনও হয়েছে, প্রচণ্ড জ্বরে তিনি বিছানা ছেড়ে ওঠতে পারছেন না। এরকম অবস্থায়ও কারো মৃত্যু সংবাদ কানে এলে ছুটে গেছেন কবর খুড়তে। তাদের কোন সন্তান নেই। মানুষের ভালবাসাই সন্তানের চেয়েও তাদের বড় সম্পদ বলে মন্তব্য করেন রহিমা বেগম।

চাঁদাবাজদের হুমকির ভয়ে জিডি করলেন খোদ ওসি

-রোরা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ