শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান ঢাকাস্থ চাঁদপুর ফোরামের সেতুবন্ধন সভা অনুষ্ঠিত অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়: প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ বিস্ময়কর হাফেজ শিশুর সঙ্গে শায়খ আহমাদুল্লাহ মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন ১৬ টি বছর জুলুম-ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল মাদরাসার ছাত্ররা: ড. শামছুল আলম  ‘সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন’ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ কাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

সবাই চায়, তবু হচ্ছে না কেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

দেশের প্রাচীনতম ও সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। এরপর দুই যুগেরও বেশি সময় ডাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে নানা জটিলতায়।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল বাকি সব সংগঠনের নির্বাচন নিয়মিতই হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নির্বাচন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন হয়। সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচনও হচ্ছে। এতে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ডাকসু নির্বাচন। আর তাদের দাবির সঙ্গে একাত্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া ডাকসুর সাবেক নেতা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই ডাকসু নির্বাচনের কথা বলছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানও এ নির্বাচনের পক্ষে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব সংগঠনই এ নির্বাচন চান। মজার ব্যাপার, সবাই ডাকসু নির্বাচন চাইলেও- হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের সঠিক জবাব কে দেবেন?

বলতে হয়, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কত আলোচনা আর জটিলতা! কেউ বলেন নির্বাচন দেবেন তো আরেকজন বলেন পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। আজ ডাকসু চাই-দাবি জোরাল হচ্ছে তো কাল আবার স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ ২৮ বছর। আর কত? কার স্বার্থে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ মাস্ট। এটা না হলে ভবিষ্যতে নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি হবে।’

রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্যের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ডাকসু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সবাই ভেবেছিলেন এবার হয়ত নির্বাচন হবেই। হয়ত বা হবে, তবে কবে যে হবে তা নিশ্চিত করে বলবেন কে?

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডাকসু থেকে নির্বাচিত ৫ জন প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিনেটে থাকার কথা। কিন্তু দীর্ঘ দিন নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দুই তলাবিশিষ্ট ডাকসু ভবনের নিচ তলার এক পাশে ডাকসু সংগ্রহশালা, অন্যদিকে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া। দ্বিতীয় তলাটি ডাকসু কার্যলয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে থাকা ৮টি কক্ষের মধ্যে ভিপি-জিএসের কক্ষদুটিতে তালা ঝুলছে দীর্ঘদিন ধরে।

বাকি ৬টির মধ্যে পরিচালকের কক্ষ একটি, তরুণ দাস নামে একজন ভাস্কর উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করছেন আরেক কক্ষ। অন্য একটি কক্ষে বিভিন্ন সংগঠন সভা-সেমিনার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

আর এক সময় সরগরম থাকা ডাকসুর সম্পাদকদের জন্য নির্ধারিত কক্ষ এখন নিরিবিলি পত্রিকা পড়ার জায়গা। বাকি কক্ষ দুটি তালা দেওয়া। কখনো কখনো কক্ষগুলো কোনো সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খুলে দেওয়া হয়। উইপোকা ধরেছে প্রতাপশালী ভিপির কক্ষের হার্ডবোর্ডে।

Image result for ডাকসু

ডাকসুর নির্বাচন চেয়ে কয়েকদিন আগে এমন দেয়াললিখনও হয়েছে

যতদূর মনে পড়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সের ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেছিলেন। এরপরই আবারও জোরাল হয় ডাকসু নির্বাচনের দাবি। যদিও এর কিছুদিন আগে থেকেই ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরব ছিল বেশ কিছু বাম ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এর ঠিক ১৫ দিন পর ডাকসু নির্বাচন করার আশ্বাস দিয়ে ওয়ালিদের অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।

তারপর পার হয়ে গেছে তিন মাস! অবশ্য বলা হচ্ছে, ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেছেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। হলগুলোতে ছাত্রদের নতুন করে তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কবে হবে সে নির্বাচন? শোনা যাচ্ছে, আগামী বছরের মার্চ নাগাদ, ঠিক এক বছর পর! প্রশ্ন হচ্ছে, ডাকসুর মতো একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে কি এক বছর সময় লাগে? তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দু’চার মাসের প্রস্তুতিতে সম্পন্ন করা হয় কীভাবে?

তাহলে কি আবারও সেই আশাবাদী হওয়ার পালা? এবারের আশ্বাসও কি সেই তথাকথিত লোক দেখানো হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। অতীতের সব উপাচার্যের মতোই বর্তমান উপাচার্যের কথায়ও খুব বেশি ভরসা পাই না।

তবু বরাবরের মতো এবারও আশাবাদী হতে চাই বিশেস এক কারণে। কারণটি হচ্ছে- এ নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৮ বছর পর হলেও যেন ফিরে পায় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

soyedfaizul@gmail.com
২৪.০৩.২০১৮


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ