বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


'জিহ্বা টেনে ধরে তওবা করা উচিত'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুস সাত্তার আইনী
লেখক ও অনুবাদক

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এবং তাঁর শিষ্য ইবনে কায়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ রহ. নির্দিষ্ট ফিকহি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত তরিকতের কোনো তরিকায় তাঁরা বিশ্বাস করতেন না। তো, তাঁরা যদি আখেরাতে জান্নাতপ্রাপ্ত না হন, তবে কোনো বাঙালি মুসলমান আখেরাতে জান্নাতপ্রাপ্ত হয়ে যাবে -- এটা আকাশকুসুম কল্পনা।

বরং, মুখে যা আসে তা-ই বলা জাহান্নামি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। মূলত জিহ্বার কারণেই অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামি হবে। এ-কারণে আবু বকর সিদ্দিক রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. প্রমুখ সাহাবি জিহ্বা টেনে ধরে বলতেন, এটাই আমাকে ধ্বংসাত্মক ও বিপর্যয়কর জায়গায় নামিয়েছে। একাধিক গ্রন্থে একাধিক সূত্রে এসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

যারা জনসম্মুখে উল্টাপাল্টা কথা বলে, মুসলমানকে জাহান্নামি বানিয়ে দেয়, সাহাবিদের প্রতি যদি তাদের ন্যূনতম ভালোবাসা থাকে, তাহলে তাদের জনসম্মুখেই নিজেদের জিহ্বা টেনে ধরে তওবা করা উচিত।

২.
আহত হরিণের ওপর হায়েরানা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মুসলমানদের ওপর শত্রুরা এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বর্তমান যুগে।কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা শত্রু চিনতে বরাবরই ভুল করছি। ফলে নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে দাঁড়াচ্ছি।

ব্যক্তিভক্তি, গোত্রপ্রীতি, ফেরকাপ্রেম ইত্যাদি ঠুকনো ব্যাপার আমাদেরকে উম্মাহর ঐক্যচেতনা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বের মুসলমানরা যখন নিজেদের মধ্যে কলহে ব্যস্ত তখন তাদের শত্রুরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।

আমরা যেকোনো মতবিরোধে জড়ানোর আগে কিছু ব্যাপার মনে রাখা চেষ্টা করবো।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেছেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ

ক. তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না;
খ. তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতকে স্মরণ করো, এ-কারণে যে, তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, পরে আল্লাহ তোমাদের অন্তরকে একত্রে জুড়ে দিয়েছেন এবং তাঁর অনুগ্রহের ফলে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেছো।
গ. তোমরা ছিলেন আগুনের/জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে, আল্লাহ তোমাদের তা থেকে উদ্ধার করেছেন।

তরজমা পয়েন্ট আকারে দিলাম যাতে বুঝতে সুবিধা হয়। আমার জিজ্ঞাসা হলো, আমরা কি আল্লাহর এই নির্দেশগুলো মান্য করছি?

“তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না” -- এখানে দুইবার তাকিদ দেওয়া হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার জন্য; প্রথমে বলা হয়েছে ‘সকলে’, তারপর আবার বলা হয়েছে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।

তারপর আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে অন্তরের হিংসাবিদ্বেষ দূর করে পরসস্পরকে ভাই বানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহর নির্দেশ না মানলে এবং এই ভ্রাতৃত্ব না থাকলে ধ্বংস অনিবার্য।

আমার জিজ্ঞাসা :
১। আমরা কেনো আল্লাহর রজ্জুকে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছি?
২। আমার কেনো আমাদের ভাইদেরকেই নিজেদের শত্রু বানাচ্ছি?
৩। আমাদের অন্তর কেনো বিচ্ছিন্নতাবোধে সুখ পায়?
৪। আমরা কেনো নিজেদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে চাচ্ছি?

সহীহ বুখারির হাদিস :
من قال لا اله الا الله دخل الجنة
যে-ব্যাক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদিসটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ; কিন্তু যার বুকে সামান্য ঈমান আছে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আর কে জান্নাতে যাবে এবং কে জাহান্নামে যাবে এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। আবেদ, আলেম, মুখলিস, ওলি, পীর -- কারো ব্যাপারেই এ-কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না তিনি জান্নাতি হবেন।

আর যারা ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে অথবা ভ্রান্তির মধ্যে থেকেও না-জেনে না-বুঝে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ওই কাজগুলো করছে -- তাদের ব্যাপারেও নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে তারা জাহান্নামি।

আসুন আমরা পরস্পর ভাই-ভাই হই এবং কোনো মুসলমানকে কাফেরের কাতারে ঠেলে না দিই।

লেখকের ফেসকবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া 

আরও পড়ুন : একজন শায়খুল হাদীস ও তার ভালোবাসা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ