শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


তনু, ক্ষমা করে দিও...

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার পর দুই বছর পার হলেও শেষ হয়নি তদন্ত! গণমাধ্যমে প্রকাশ, প্রথমে থানা পুলিশ, পরে ডিবি পুলিশ হয়ে বর্তমানে সিআইডি মামলাটির তদন্ত করছে।

তবে কথা হচ্ছে, দীর্ঘ সময়েও চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়া খুবই দুঃখজনক।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই সময় পত্রপত্রিকায় এসেছিল-ঘাতকরা ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তনুকে। যে ঘটনা দেশবাসীকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।

ঘটনার পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলে মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি।

তার পরের মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়া এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

কিন্তু অবাক হতে হয়, যখন শুনি- দুদফায় ডাক্তারদের তৈরি করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে না পারায় অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে দেশব্যাপী বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি।

সর্বশেষ সিআইডির সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করতে আরও তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। কারণ যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, তাদের কেউ কেউ বিদেশে রয়েছেন। ঘটনাস্থল কুমিল্লা হলেও স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় ঢাকাতেই চলছে এর তদন্তসহ সব কার্যক্রম।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন করা হলেও দীর্ঘ এ সময়ে হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি। ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে।

‘ধুলামুক্ত ঢাকা চাই’ ক্যাম্পিং শুরু করছে আওয়ার ইসলাম

এমন বাস্তবতায় বলতে হচ্ছে, বিচার প্রলম্বিত হওয়া ন্যায় বিচারকে অনিশ্চিত করে তোলে। তনু হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটতে যাচ্ছে কি না অবস্থাদৃষ্টে সে উদ্বেগ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক।

দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফল হচ্ছে, সেসব মামলার অপরাধীদের সাজাও হচ্ছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রুপা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন আদালত। তাই বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে তনু হত্যা রহস্যও উদঘাটন সম্ভব হবে।

আমরা চাই তনুর খুনিরা দ্রুত শনাক্ত হোক, তাদের বিচারাধীন করা হোক। ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো তনুকে এভাবে নির্মম পাশবিকতার শিকার হতে না হয়, জীবন দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তনু হত্যাকাণ্ডের মতো সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হওয়া জরুরি।

সবশেষে বলতে বাধ্য হচ্ছি, হে স্বাধীন দেশের প্রয়াত তনু, ক্ষমা করে দিও।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

soyedfaizul@gmail.com
২২.০৩.২০১৮


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ