বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


যে সাতশ্রেণির লোক আরশের নিচে ছায়া পাবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এসএম আরিফুল কাদের

মৃত্যু থেকে শুরু হয় মানুষের পরলৌকিক জীবন। কবর হল তার প্রথম প্রবেশদ্বার। পর্যায়ক্রমে সবারই উঠতে হবে হাশরের মাঠে। যার ভয়াবহতা সবারই কম-বেশি জানা আছে।

যেদিন সূর্য থাকবে মাথা থেকে সূরমাদানির শলাকার মত উঁচুতে। সেই কঠিন সময়ে আরশের ছায়াতে থাকবেন হাদিসে বর্ণিত সাত শ্রেণির লোক।

আর তাঁরা হলেন ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। মানুষের মধ্যে তার পরিবার, গ্রাম-মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের শাসক রয়েছেন। তারা যদি তাদের সদস্যদের ন্যায় বিচার করেন তাহলে ওই ব্যক্তি আরশের ছায়া পাবেন।

এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন- ‘জেনে রাখো! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’। বুখারি ও মুসলিম

২. ওই যুবক/যুবতী- যে তাঁর যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে। যুবক বয়সের ইবাদতকে ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। ‘একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে’। [তিরমিযী]

হযরত শেখ সাদী রহ. বলেছেন, ‘ইহকাল ও পরকালে যা প্রয়োজন যৌবন কালেই তা সংগ্রহ করো।’

যুগে যুগে মহান আল্লাহ তা’আলা পথভুলা মানুষদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য নবী রাসুল আ. প্রেরণ করেছিলেন। যাঁদের সবাই ছিলেন টগবগে যুবক।

৩. এমন নামাজি- যার অন্তর মসজিদের দিকে ঝুলন্ত থাকে। অর্থাৎ এক ওয়াক্ত জামাতে নামাজ পড়ে; অন্য ওয়াক্তের জামাতে নামাজের অপেক্ষায় থাকেন।

কুরআনে পাকে এসেছে- ‘নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে’। [সূরা তওবা : ১৮]

৪. এমন দু'ব্যক্তি- যারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং পরস্পর পরস্পর পৃথক হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

দীনের কাজে একে অপরের মহব্বতে আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর বিধর্মী কাজে শামিল না হয়ে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পৃথক বা মনমালিন্যতাই আল্লাহর সন্তুষ্টি।

তাই হাদিসে নববীতে আছে- ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব।  আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া নেই। (মুসলিম)

৫. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর চোখের অশ্রু বিসর্জন করে। জাহান্নামের ভয়ে, জান্নাতের আশায়, মাওলার দিদারের জন্য ও সর্বপ্রকার চাওয়া-পাওয়ায় আল্লাহকে গোপনে স্মরণ করা।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি কি তোমাদের এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির কাছে সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম?

তারা বলল- হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! তিনি বললেন- জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)’। (তিরমিজি)

৬. যে ব্যক্তিকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী (কাম চরিতার্থে) ডাকে। আর সে সাহস করে বলে- আমি আল্লাহকে ভয় করি। তেমনি কোনো পুরুষ কোনো সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরীকে (কাম চরিতার্থে) ডাকে।

আর সে সাহস করে বলে- আমি আল্লাহকে ভয় করি। হাদীসের ভাষায়- ‘আবু হুরায়রাহ রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কে প্রশ্ন করা হ’ল কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে?

তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র। আবার প্রশ্ন করা হল কোন কাজটি  সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান’'। [তিরমিজী]

৭. গোপনে আল্লাহর রাস্তায় দানকারী। দুঃখজনিত হলেও সত্য যে, সমাজে এ পূন্যময় কাজ ছেড়ে শতকরা ত্রিশভাগ লোক নিজেকে প্রকাশ করতে দান করেন।

নীরবে দানকারীর ব্যাপারে কুরআনের ভাষায়- আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে দান করে দাও, তবে আরও বেশি উত্তম। দানের জন্য তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন"। (সূরা বাকারা- ২৭১)

হাদিসের ভাষায়- রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর"। (বুখারি ও মুসলিম)

আর মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে দানকারীর ব্যাপারে বিশ্বনবী সা. ইরশাদ ফরমান- ‘যারা মানুষের প্রশংসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে দান করবে, তাদের মাধ্যমেই প্রথমে জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে।

রাসূল সা. আরো বলেন- সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে দিয়ে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত করা হবে। তাদের মধ্যে (সর্ব প্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রশস্ততা দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের অর্থ-সম্পদ।

‘ধুলামুক্ত ঢাকা চাই’ ক্যাম্পিং শুরু করছে আওয়ার ইসলাম

তাকে সম্মুখে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর (আল্লাহ) তাকে দেওয়া নেয়ামত দেখাবেন। সে তা চিনতে পারবে। তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই নেয়ামতসমূহ দ্বারা? সে জবাব দেবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন এ ধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছি।

তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে, সে দানবীর।

অতঃপর তার ব্যাপারে বিচারের নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে মাটিতে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে"। (মুসলিম)

আল্লাহ পাক আমাদের মরণ থেকে হাশর পর্যন্ত জান্নাতি এবং বিচার দিবসে আরশের নিচে ছায়া দানের আমল করে মৃত্যু বরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা (প্রাইভেট), পানাহার, জয়কা, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ