[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন।
গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান।
আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি সপ্তাহে দুদিন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। আজ প্রকাশ হলো ১৭ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা উমর ফারুক ইবরাহীমী।]
বয়সস্বল্পতার দরুন তখনো আমি ফুফু উম্মাতুল হান্নানের ঘরোয়া শিক্ষালয়ের নিয়মতান্ত্রিক ছাত্রত্ব লাভের উপযুক্ত হয়ে উঠিনি। তবুও আমার আব্বা, আম্মা তখন আমাকে কায়দায়ে বাগদাদি দিয়ে ফুফুর ঘরে পাঠিয়ে দিতেন।
এভাবেই আমি তাঁর ঘরোয়া মক্তবে কায়দায়ে বাগদাদি পড়া শুরু করি। সেখানে তিনি তার বলিষ্ঠ আওয়াজে, অত্যন্ত যত্ন ও আগ্রহের সাথে শিক্ষা ও তরবিয়তের কাজ আঞ্জাম দিতেন।
এ কথাগুলোই এখন আমার মনে আছে। এছাড়াও আরো অনেক বিষয়াদি রয়েছে, পাঠকবৃন্দ হয়তো সেগুলো জানার ব্যাপারে আগ্রহশীল নাও হতে পারেন বা সেগুলো তাদের উপকারে নাও আসতে পারে।
তখন আমার বয়সইবা কতো ছিলো? আমি এখন নিশ্চিতভাবে বলতে না পারলেও অবশ্যই সাড়ে চার বছরের কম ছিলো। কারণ আমার বয়স পাঁচবছর পূর্ণ হবার আগেই আমরা দেওবন্দ থেকে পাকিস্তান হিজরতের জন্য রওয়ানা হয়ে গিয়েছিলাম।
তবে আমাদের বড়ভাই জনাব মুহাম্মদ জাকি কাইফি রহ.এর বিবাহ ১৯৪৬ ইংরেজি সনে হয়েছিলো, সেটা আমার মনে আছে। আর তখন আমার বয়স নিশ্চিতভাবে তিন বছর ছিলো।
সুতরাং যে বিষয়গুলো আমার এখনো দিলে গেঁথে আছে, সেগুলো আমার তিন থেকে সাড়ে চার বছর বয়সী থাকাবস্থার কথা। অথচ আজ আমি আশ্চর্যবোধ করি যে, সেই আমিই কিনা কখনো কখনো কালকের কথাও মনে রাখতে পারি না।
অত অল্প বয়সের এসব বিষয়াদি এভাবে আমার মনে গেঁথে আছে- কেমন যেন এখনোও সবকিছু দেখতে পাচ্ছি। এই থেকে আন্দাজ করা যায়, বাল্যকালে যা কিছু মননে বদ্ধমূল হয়, তা কতোটা দৃঢ় এবং স্থায়ী হয়।
এ জন্যই বলা হয়, শিশুদের সামনে ভালো কথা বলো। এ কথা মনে করার সুযোগ নেই- এই অবুঝ শিশুদের উপর আমাদের কথার কিইবা প্রভাব পড়বে? এসব তো ওদের বুঝার উর্ধ্বে।
তবে এটা আমার মাহরুমি এবং এই আক্ষেপ সবসময় ছিলো যে, দেওবন্দ তখনোও বড় বড় উলামা, আওলিয়ায়ে কেরামের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো। কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় কারো যিয়ারতের কথা আমার মনে নেই।
হ্যাঁ! একবার আব্বা-আম্মার সাথে থানাভবন যাবার কথা মনে আছে। যদ্দুর মনে পড়ে- সেটাই ছিলো আমার প্রথম রেলভ্রমন। কিন্তু তখন এতটুকু অনুভূতি ছিলো না যে, থানাভবন আসলে কী? সেখানে যাবার উদ্দেশ্যইবা কী?
তবে হযরত থানবি রহ. এর পর আব্বাজানের অত্যন্ত প্রিয় উস্তাজ এবং মুরুব্বি হযরত মাওলানা সায়্যিদ আজগর হুসাইন রহ. (যিনি মিয়াজি সাহেব নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন) জীবিত ছিলেন।
খুবসম্ভব আব্বাজান আমার তাহনিকও তাঁর মাধ্যমে করিয়েছেন। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে-হযরতের যিয়ারতের কথাও আমার মনে নেই। তবে পরবর্তীকালে একবার স্বপ্নলোকে তার যিয়ারত লাভ করেছিলাম।
যখন ভাইবোনদের আমার স্বপ্নের কথা শুনালাম, যে অবয়বে আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি হুবহু তাদের বর্ণনীয় অবয়বের সাথে মিলে গেছে। তেমনিভাবে তখন শাইখুল ইসলাম মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানি এবং শাইখুল আদব মাওলানা ই'জাজ আলি রহ. প্রমুখ আকাবিররাও দেওবন্দে ছিলেন। কিন্তু ছোট হওয়ায় আমি তাঁদের যিয়ারত লাভ করতে পারিনি।
সে সময়ে ১৩৬৬হিজরি সনের ২৭ রমজানুল মুবারক, ১৯৪৭ ইংরেজি সনের ১৪ আগস্ট জুম'আতুল বিদার বরকতময় রাতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন আমার বয়স ছিলো আটদিন কম চারবছর।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভের দিনে আমাদের বাসার সুরতহাল তো নির্দিষ্ট করে আমার মনে নেই, তবে এতটুকু মনে আছে, আমাদের ঘরে তখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা খুববেশি আলোচনা হতো।
তাই আমার শিশুসুলভ মননে এমন কিছুর কল্পনা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো, পাকিস্তান হয়তো বড় কোনো অট্টালিকা হবে। সেখানে অনেক বড় একটি হল থাকবে। হলের দোর-দেয়ালজুড়ে চাঁদ, তারকারাজি শোভা পাবে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু-মুসলিম তুমুল দাঙ্গা বেঁধে গেলো। পূর্ব পাঞ্জাবে শিখ কর্তৃক মুসলিমদের উপর এক রক্তক্ষয়ী উপাখ্যানের সূচনা হলো। মুসলিমদের উপর নেমে এলো জুলুম, নিপীড়নের কালো আঁধার।
ইউপি জেলার অন্তর্গত দেওবন্দ এলাকাটি যেহেতু পূর্ব পাঞ্জাব সংলগ্ন ছিলো, তাই সেখানেও শিখদের একটি বড় অংশের বসতি ছিলো। শিখদের জুলুম, নিপীড়নের পরিধি আমাদের জেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লো।
সাথে হিন্দুরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো। শিখদের মত তারাও বিদ্বেষপূর্ণ, জিঘাংসিত স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করতো।