রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের মান যেসব কারণে অনুন্নত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এর ইতিহাস খুব একটা ভালো বলা চলে না।

বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করে ১৯৯৭ সালে৷ এরপর মোট ১২টি প্রাইভেট এয়ার লাইন্স এলেও টিকে আছে মাত্র তিনটি৷  ২০ বছরের এই পথচলায় বেসরকারি খাতে বিমান পরিচালনায় অর্জন কতটুকু?

নেপালে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ার লাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ার লাইন্সের সক্ষমতা এবং যাত্রীসেবা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ার লাইন্সগুলো কেন একের পর এক ঝরে পড়ছে?

বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় প্রাইভেট এয়ার লাইন ইউএস-বাংলা এয়ার লাইন্স৷ আর বাকি দু’টি হলো নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ার৷ ইউএস-বাংলা’র এখন আটটি অভ্যন্তরীণ এবং পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান রয়েছে৷

নভোএয়ারের বিমান চলে সাতটি অভ্যন্তরীণ রুট এবং একটি আন্তর্জাতিক রুটে৷ রিজেন্ট এয়ার পাঁচটি অভ্যন্তরীণ এবং পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে৷  নিয়ম অনুযায়ী, এক বছর অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ চালানোর পর আন্তর্জাকি রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়৷

১৯৯৫ সালে বেসরকারি এয়ারলাইন্স অ্যারো বেঙ্গলকে ফ্লাইট অপারেশনের অনুমতি দেয়া হয়৷ তবে তারা যাত্রী পরিবহন শুরু করে ১৯৯৭ সালে৷ আর পরের বছরই এই এয়ারলাইন্সটি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়৷ এরপর বাংলাদেশে একে একে কাজ শুরু করে এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, রয়েল বেঙ্গল ও বেস্ট এয়ার৷

এর কোনোটি এখন আর অপারেশনে নেই৷ আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে তারা বন্ধ করে দেয়৷ অ্যারো বেঙ্গলসহ ছয়টি প্রাইভেট এয়ার লাইন্সই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয় আর্থিক কারণ দেখিয়ে৷ ওই এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে শুধু জিএমজি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করতো৷

বাংলাদেশে মোট ১২টি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স বিভিন্ন সময় অনুমোদন পেলেও দুইটি এয়ার লাইন্স কখনো অপারেশনেই আসেনি৷ এরপর ২০০৭ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ যাত্রা শুরু করে ১১টি উড়োজাহাজ নিয়ে৷ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করেও শেষ পর্যন্ত তারা টিকে থাকতে পারেনি৷ ১১টি প্লেনের নয়টি পর্যায়ক্রমে অকার্যকর হয়ে যায়৷ দু’টি প্লেন দিয়ে আরো কিছুদিন সচল থাকার পর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে যায়৷

২০১০ সাল থেকে রিজেন্ট এয়ার এবং ২০১৫ সাল থেকে নভো এয়ার ও ইউএস বাংলা ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে৷ এই তিনটি এখনো টিকে আছে৷ রিজেন্ট এয়ারওয়েজও দেনায় পড়েছে৷ বেসামরিক বিমান চলাচলকর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর কাছে তাদের ২৪ কোটি টাকা দেনা রয়েছে বলে জানা গেছে৷

তাদের বিমানবহরে রয়েছে ড্যাশ-৮ এবং বোয়িং৷ নভোএয়ার এটিআর-৭২-৫০০ এয়াক্রাফট দিয়ে যাত্রী পরিবহণ করে৷ ইউএস-বাংলা ড্যাশ এবং বোয়িং উড়োজাহাজ ব্যবহার করে৷

আগের এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ হয়েছে প্রধানত দু’টি কারণে৷ অব্যাহত লোকসান এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি৷ ইউনাইটেড এয়ারকে তাদের ৮৪ কোটি টাকা দেনা তিন বছরে তিন কিস্তিতে শোধ করতে সুযোগ দেয়ার পরও টিকে থাকতে পারেনি৷

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং বিমান বোর্ডের সাবেক পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, একটি প্রাইভেট এয়া্রলাইন্স চালানোর জন্য যে ধরনের উদ্যোক্তা দরকার, যেমন দক্ষতা দরকার, ব্যবস্থাপনা দরকার সেগুলো আমাদের এখানে এখনো হয়নি৷

তিনি বলেন, প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোর যাত্রীসেবার মান ভালো হচ্ছে, কারণ, তাদের এখন আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ভালো এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়৷

তিনি আরো বলেন, ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার কারণে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ার লাইন্সের ব্যবসায় নেতবিাচক প্রভাব পড়তে পারে৷ কিন্তু এটা স্থায়ী হবে বলে আমার মনে হয় না৷

রিজেন্ট এয়ার-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আখতার ইউ আহমেদ দাবি করেন, বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোর যাত্রীসেবা অনেক ভালো, কারণ, আমাদের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী পেতে হয়৷ যাত্রী সেবার প্রথম শর্ত হলো শিডিউল মতো ফ্লাইট অপরেশন৷ আমরা সেটা চেষ্টা করি৷ আর অনবোর্ড সার্ভিসও মান সম্পন্ন৷

 

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে যারা প্রাইভেট এয়ালাইন্সের ব্যবসা করেন, তারা এটাকে আলু-পটলের ব্যবসার মতো মনে করেন৷ তাদের এটা করার দক্ষতা এবং যোগ্যতা নাই৷ তারা মনে করে, এ ব্যবসা করলে তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে৷ আর অনেক ব্যবসা হবে৷ কিন্তু ব্যবসায় নেমে যখন আর পারে না, তখন কোম্পানি বন্ধ করে দেয়৷ কারণ, এয়ারক্রাফট ওভারহলিং সম্পর্কে তাদের আগে ধারণা থাকে না৷ এটা ব্যয়বহুল৷ যখন করতে হয়, তখন ব্যবসার পুঁজিই শেষ হয়ে যায়৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ