বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


‘শিক্ষার্থীদের কাছে স্মার্টফোন থাকা অনুচিত: দেওবন্দের শায়খ কমরুদ্দীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোবাইল ফোন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। ইন্টানেটের ক্ষতিকর দিন, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি এসব দিন দিন বাড়ার ফলে মান কমছে পড়ালেখার। আর এ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষক ও অভিভাবক শ্রেণি।

কিছুদিন আগেও হাটহাজারী মাদরাসায় মোবাইল পোড়ানোর খবর ভাইরাল হয়। যা আলোচনায় আসে। পক্ষে বিপক্ষে নানা মত সমালোচনা উঠে আসে। মোবাইল যেমন বর্তমান একেবারে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না আবার শিক্ষার্থীদের জন্য তা লাগামহীনও করা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় মাদরাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চিন্তায় রয়েছে। চিন্তায় রয়েছে লাখো অভিভাবক।

আওয়ার ইসলাম বিষয়টি নিয়ে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খে সানি, বিশিষ্ট আলেমে দীন আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদের মুখোমুখি হয়েছিল। চরমোনাই মাহফিল থেকে ফেরার পথে লঞ্চে বসে গুরুত্বপূর্ণ এক ভাবনা বিনিময় হয় তার সঙ্গে।

তার সঙ্গে চলমান এসব বিষয়ে কথা বলেন রাজধানী ঢাকার শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ ও আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব

আওয়ার ইসলাম : আমাদের বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা এবং পাঠ্যসূচি দারুল দেওবন্দেরর পাঠ্যসূচির সাথে মিল রেখে প্রনয়ণ করা হয়ে থাকে। সামান্য এদিক-সেদিক হলেও, দারুল দেওবন্দের পাঠ্যসূচির সাথে আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোর পাঠ্যসূচির অধিকাংশে মিল রয়েছে।

কিন্তু এদেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক পর্যায়ের ইলমের ক্ষেত্রে বাংলার সাহায্য নিয়ে থাকে। যার ফলে দেখা যায়, নাহু-সরফের দূর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা বড় বড় কিতাবের ইবারত পড়ার ক্ষেত্রে দূর্বল রয়ে যায়।

এ ব্যাপারে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আপনার নসিহত কী?

আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ : মাতৃভাষার পাশাপাশি ফারসি এবং উর্দূতেও মাদরাসার তালাবাদের দক্ষতা অর্জন করা উচিৎ। প্রাথমিক ক্লাসের কিতাবগুলোর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ।

আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পারি, অধিকাংশ মাদরাসায় প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লাসগুলোতে নতুন ফারেগিনদের পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ, তাদের অভিজ্ঞতা কম থাকে, ছাত্ররাও সেসব কিতাবের ওপর দূর্বল থাকে।

এ ব্যাপারে আমার রায় হলো, কিতাবের ওপর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকরা যেমনিভাবে উপরের ক্লাসগুলোতে দরস দেন, তেমনিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের কিতাবও তাদের দেওয়া হোক।

মাদরাসাগুলোর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন বলে আমার অনুরোধ থাকবে।

ইলম হাসিরের জন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে- সরফ-নাহু অন্যতম। এসব বিষয় খুব ভালোভাবে পড়ানো এবং পড়া উচিৎ।

আওয়ার ইসলাম : বর্তমান সময়ে তালাবাদের মধ্যে মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবনতা অতিমাত্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মোবাইলের ব্যবহারের ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নজরিয়া হলো- অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম বলছেন, ছাত্রদের জন্য মোবাইল ব্যবহার করা হারাম করে দেওয়া হোক।

তাদের যুক্তি, মোবাইল-ইন্টারনেটের কারণে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আরেক শ্রেণির ওলামায়ে কেরাম বলছেন, বর্তমান গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডের যুগে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত।

তাদের যুক্তি, প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সমসাময়িক সকল বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখছে।

আমরা যদি, মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করি- তাহলে তা অধুনা সময়ের সঙ্গে বেমানানন হয়। এ ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের রায় কী?

আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ :  মোবাইল-ইন্টারনেটের বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঘরেই অনেক পেরেশানি হচ্ছে। বাচ্চারা পড়ালেখা বাদ দিয়ে, সর্বক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে মুখ গুজে পড়ে থাকছে।

ইতোপূর্বে  দারুল দেওবন্দ স্মার্টফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইল পাওয়া গেলে তা জব্দ করার আইন ছিল। অনেকসময় মাদরাসা থেকে বহিস্কার করা হতো।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে, প্রথমত মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয় পরবর্তীতে মাদরাসা বোর্ডিং এ খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয় অথবা অন্য কোনো শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।

তবে সাধারণ মোবাইলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই এবং এমন কোনো শাস্তিও দেওয়া হয় না।

আওয়ার ইসলাম : ছাত্রদের মানসিকতা উন্নত না হলে, মোবাইল নিষেধ করে কি কোনো ফায়দা হবে?

আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ :  স্মার্টফোন তো এমনিতেও রাখা অনুচিত। যার ফলে তালেবে ইলম পড়ালেখা থেকে দূরে থাকছে। কিন্তু, মোবাইলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিৎ।

আওয়ার ইসলাম :  মাদরাসাগুলোতে নিয়ম আছে-  ভর্তির সময় মোবাইল ব্যবহারের ওপরে কঠিন নসিহত করা হয় এবং ওয়াদা করানো হয়, মোবাইল পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নিতে হবে।

পরবর্তীতে যখন মোবাইল পাওয়া যায় এবং তা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জব্দ করে নিলাম করে দেয় এবং তার মূল্য মাদরাসা বোর্ডিং এ দিয়ে দেয় তখন কিছু ছাত্র প্রশ্ন করে মোবাইলের মালিক তো আমি সেটা কেন মাদরাসা ব্যবহার করবে বা নষ্ট করে ফেলবে?

এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ :  দারুল উলুমের কর্তৃপক্ষ বর্তমান কী করছে সে সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমার যতটুকু জানা ছিল, তা বলেছি-

দারুল উলুমের মতো  বড় মাদরাসা এমন কোনো নিয়ম করলে তাদের কোনো সমস্যা হয় না কারণ ছাত্ররা এখানে আসার জন্য মুহতাজ।

কিন্তু ছোট মাদরাসার ক্ষেত্রে এরকম নিয়ম করলে ছাত্র পেতে সমস্যায় পড়ে তারা।  তবে, মাদরাসাতে নিষেধাজ্ঞা থাকতেই হবে নতুবা ছাত্ররা লাগামহীন হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ‘যুগান্তকারী কাজ করলো হাটহাজারী মাদরাসা’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ