[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।
আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি সপ্তাহে দুদিন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। আজ প্রকাশ হলো ১৬ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা উমর ফারুক ইবরাহীমী।]
আমাদের বোনদের মাঝে সবার ছোট এবং চারভায়ের বড়, মুহতারামা রাকিবা খাতুন। তাকে আমরা ছোট আপা বলতাম। আল্লাহর কৃপায় তিনি আজ অবধি বেঁচে আছেন। ছোট আপা একবার আমাকে (গত সংখ্যায়) উল্লেখিত কবিতাটি চমৎকার সুরে গেয়ে শুনিয়েছিলেন।
কবিতাটি আমার এতটাই ভালো লেগেছিলো যে, যতক্ষণ না আমি তার মুখে এটি না শুনতাম, ঘুমাতাম না। সুতরাং তিনি এটি দিয়ে আমার ‘ঘুমপাড়ানির গীত’ এর কাজ নিতেন এবং পরবর্তীকালে আমি তাকে সম্বোধন করে, নিম্নের এই কবিতাটি আবৃত্তি করতাম।
কবিতার প্রথম শ্লোকদুটি এমন-
ছোট আপা! আমার এই কবিতার শিরোনাম তুমি/ এই মাহফিলের সমুদয় সৌন্দর্যের আকর তুমি।
শেষের পঙক্তিতে সেই ঘুমপাড়ানি গীতের দিকে ইশারা।
ঘুমপাড়ানি গীতেও আমায় দরস দিতে তুমি/ হ্যাঁ! আমার বোন, আমার বন্ধু, আমার মা তুমি।
এছাড়াও পাড়া,মহল্লাজুড়ে তখন পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলন ও শ্লোগানে পথঘাট সব মুখরিত ছিলো। কবি, সাহিত্যিকরাও স্বাধীনতাকামীদের কবিতার মাধ্যমে তাদের সাহসের রসদ জোগাতেন।
কোত্থেকে যেনো আমি সেগুলো শুনেশুনে ছোট্টবয়সে আমার তোতলা মুখে বিক্রিতভাবে রিহার্সাল শুরু করে দিতাম। মাওলানা আমের উসমানি রহ. এর এই শ্লোক সে সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো।
হয়তো দুঃখ-দুর্দশার ভয় ছাড়ো/না হয় আজাদির নাম নেয়া বন্ধ করো!
যদি শূলি বা ফাঁসিতে ঝুলার হিম্মত নাই থাকে/তবে আজাদির অপবাদ থেকে বিরত থাকো।
এবং তারই রচিত আরেকটি শ্লোক।
যদি আজাদি পেতেই চাও, তবে মুসলিম লীগে এসো/ভ্রাতৃত্বের ঝাণ্ডা নিয়ে, বিশ্ব তাগুতের টুটি চেপে ধরো।
আমি ছোট্টবয়সে সেই কবিতা না বুঝেই বিক্রিতভাবে, তোতলামো করে আবৃত্তি করতাম। আর ঘরের সবাই শুনে অনেক মজা অনুভব করতেন।
এটা সে যুগের কথা, যখন গোটা হিন্দুস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুদায়িত্ব যুবশ্রেণীর কাঁধে ছিলো এবং মুসলমানদের পক্ষ থেকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জোরদাবি উঠছিলো। সুতরাং আমাদের ঘরের পূর্বপাশের সেই ছোট্ট সড়কটি মিটিং, মিছিলের শ্লোগানে মুখরিত ছিলো।
মিছিলকারী অধিকাংশই কারো না কারো জন্য 'জিন্দাবাদ'বলে শ্লোগান তুলতেন,আমি দূর থেকে যখন কোন মিছিলের হুইহুল্লোর শুনতে পেতাম, আমার তোতলা মুখে ঘরের সবাইকে বলতাম-جندہ باد آلہے ہیں (زندہ باد آ رہے ہیں)
এছাড়াও মিছিলের বিভিন্ন শ্লোগান শুনেশুনে আমার ইয়াদ হয়ে গিয়েছিলো। যেমন- سینے پے گولی کھائیں گے.پاکستان بنائیں گے.
আমি যখন তোতলামো করে শ্লোগান রিহার্সাল করতাম,ঘরের সবাই এতে চরম বিনোদিত হতেন। ফুফু উম্মাতুল হান্নানের ঘরোয়া মক্তব।
আমরা যে মহল্লায় থাকতাম, সেখানে চকের (চক মহল্লা সম্পর্কে আলোচনা পূর্বে অতিক্রম হয়েছে) সন্নিকটে আমাদের বংশের এক বুযুর্গ রমণী ছিলেন। তার নাম ছিলো উম্মাতুল হান্নান।আমরা সবাই তাকে ফুফি বলতাম। কারণ তিনি আমাদের আব্বাজানের বংশীয় বোন ছিলেন।
তার ঘরের ঝলক কতইনা চমকপ্রদ ছিলো! আমাদের পুরো খান্দানের, বরং যুগযুগ ধরে ছোট্ট বাচ্চাদের শিক্ষাকেন্দ্র ছিলো সেটি। সেখানে পরম্পরাক্ৰমে কয়েক বংশধর তার থেকে তালিম হাসিল করেছেন। ছোট বাচ্চাদের কুর'আনের নাজেরা তালিমের জন্য তিনি খ্যাতি পেলেও, মূলত তিনি কুর'আন শরিফ ছাড়া ও বেহেশতি জেওর ইত্যাদি পড়িয়ে দিতেন।
ফলে বিয়ের পর পর্যন্ত বাচ্চাদের সকল জরুরি প্রয়োজনীয় মাসায়েল জানা হয়ে যেতো। তিনি শুধু গতানুগতিকভাবেই পড়াতেন না, বরং সাথে সাথে আমলের তারবিয়তও দিতেন। এটাই ছিলো তার আসল ব্যস্ততা। এটাই ছিলো তার শওক।
যার মাধ্যমে তিনি শতশত বাচ্চার মনুষ্যত্ব শিখিয়েছেন। আমাদের সবার বড় বোন থেকে নিয়ে আমি পর্যন্ত সবাই তার শিষ্য। চলবে ইনশাআল্লাহ...
আগের পর্ব: ছোটবেলায় সবাই আমাকে তকি’র পরিবর্তে ‘তাকু’ ডাকতেন