মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের দাঁতের যত্ন (পর্ব ১)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা. আদেলী এদিব খান : গর্ভকালীন সময়ে নারীদের দাঁতের যত্ন বিষয়টি মা ও অনাগত শিশুর সুস্থতার জন্য জরুরি। এই সময়টাতে নারীরা দাঁত ও মাড়ি নিয়ে অনেক ভোগেন। এ নিয়ে আছে অনেক ভুল ধারণাও। গর্ভাবস্থায় দাঁতের যত্ন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে।

কারণ গর্ভাবস্থার দুই মাস পর থেকে মুখ এবং দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।গর্ভাবস্থায় মায়ের দাঁতের সমস্যা সরাসরি গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু দাঁতে সমস্যা থাকলে তার ফলে মায়ের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। যা গর্ভের শিশুর উপর প্রভাব ফেলে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা গর্ভকালীন সময়ে মা ও গর্ভের শিশু – দুজনেরই সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে।

আজকের আলোচনা বিষয় হলো গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের দাঁতের সমস্যা, প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে।

গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের শারীরিক অন্যান্য বিষয়ে সুস্থ্য থাকা যেমন -  জরুরি তেমনে মায়েদের দাঁতের প্রতি সচেতন হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মায়েরা গর্ভকালীন অবস্থায় দাঁতের যত্ন নেওয়া থেকেএড়িয়ে যায়। কিন্তু মায়েদের গর্ভকালীন অবস্থায় দাঁতের সচেতনাতার উপর নির্ভর করে মুখগহব্বরে যেমন পরিবর্তন হয় তা সম্পর্কে মায়েদের সচেতন হওয়া আবশ্যক।

গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে নানা রকমের
সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন:

১. ‘জিনজিভাইটিস’ (Gingivitis) 
গর্ভকালীন সময় এই সমস্যাটি মায়েদের বেশী লক্ষ্য কারা যায়। এই
সমস্যাটি হলে সাধারণত মুখের ভেতরের মাড়ি ফুলে যায়। দাঁত ব্রাশ করার সময় রক্ত ক্ষরণ হয়। তাছাড়া খাবার চাবানোর সময় ব্যাথা অনুভব করেও দাঁত শিরশির করে।

২. ‘পেরিও ডেন্টাল ডিজিস’ (Periodontitis)
যদি পূর্বের সমস্যাটি (জিনজিভাইটিস) নিয়ে সচেতন না হয় তাহলে সেটি
পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী ধারণ করে। আর তখন এই পেরিওডোন্টাইটিস সমস্যাটি হয়। এই সমস্যাটি তখন একটি রোগে পরিণত হয়। যেটার কারণে মাড়িতে অনেক ব্যাকটোরিয়া জনিত কারণে প্রচণ্ড ভয়াবহরুপ ধারণ করে। প্রচণ্ড রক্ত ক্ষরণ হয়। প্রচন্ড ব্যথা হয়। দাঁতটিও হারাতে হয়।

৩. ‘ডেন্টাল কেরিজ’ (Dental Caries) 
গর্ভকালীন অবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে এসিডিটি বেড়ে যায়। যার কারণে দাঁতের এনামেল স্তরটিতে বিশাল একটি প্রলেপ পড়ে। ফলে এনামেল স্তরটি ক্ষয় হয়। যেটাকে ‘ডেন্টাল কেরিজ’ বলে। যেটা থেকে পরবর্তীতে এই ডেন্টাল কেরিজ দেখা দেয়।

-  হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের মুখের
লালার প্রবাহ কমে যায়। ফলে মুখ গহ্বর শুকিয়ে যায়।

-  রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাওয়ার কারণে কিডনি থেকে অতিরিক্ত পানি বের
হয়। যার ফলে মুত্র এর পরিমাণ বেড়ে যায়। এবং মুখগহ্বর শুকিয়ে যেতে পারে।

-  এসময়ে বিপাকীয় প্রক্রিয়ার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ঘাম
হয়। শরীরের জলশূন্যতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত পানি তৃষ্ণা বোধ হয়।

-  পর্যাপ্ত পরিমান পানি না খেলে মায়েদের শরীরে জলবিয়েজন ঘটে। ফলে
মুখগহ্বর শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. ‘প্রেগনেন্সি টিউমার’ (Pregnancy tumour) 
এটি একটি ক্ষতিকর টিউমার যেটা রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে ত্বকে দেখা দেয়।
উপরের সমস্যাগুলো যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হয় তাহলে গর্ভবর্তী মায়েদের এই টিউমার দেখা দেয়। এই “পায়োজেনিক প্র্যানুলোমা” ও বলা হয়ে থাকে।

পরবর্তী অংশে আমরা জানবো এসকল রোগের বিস্তারিত চিকিৎসা সম্পর্কে।

লেখক : ডা. আদেলী এদিব খান
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর (উত্তর), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ