শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


মানুষদের বাঁচাতে খুলে দিলো ব্রিটেনের সব মসজিদের দুয়ার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম

গোটা ইউরোপ জুড়ে চলা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাবু গৃহহীন লোকদেরকে বাঁচাতে খুলে দেয়া হলো যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের বেশকিছু মসজিদের দুয়ার। ওইসব অসহায় লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ের পাশাপাশি সংস্থান করা হলো তাদের খাবারেরও। বরফের ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছে কত মানুষ। ভোগান্তির শেষ নেই।

শুক্রবার ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ ওয়ালেসে তুষারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করে। ঠাণ্ডা ঝড় ইমা নিয়ে আসে তুষার ঝড় ও প্রচণ্ড বাতাস।

‘তাপমাত্রা বেশ তীব্র। তাই আমরা ভাবলাম, অসহায়দের জন্য কিছু একটা করার’, আল জাজিরাকে বলছিলেন ম্যানচেস্টারের উত্তরাংশে অবস্থিত মাক্কি মসজিদের ট্রাস্টি রবনওয়াজ আকবর।

গত কয়েকদিন ধরে প্রার্থনার জায়গার বাইরের অংশে স্বেচ্ছাসেবিরা ম্যানচেস্টারের গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে।

আশ্রয়ের খোঁজ করা এসব মানুষের জন্য গোসলাদির ব্যবস্থা করছে মসজিদ।

মসজিদটি দক্ষিণ এশিয়ান অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায়, ভাত ও মুরগির গোশতের মতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি ঘরানার খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

আকবর বলছিলেন, ম্যানচেস্টারে গৃহহীন লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই মসজিদে অবস্থান করা ৪ জনের একজন ছিলেন জেমি।

তিনি বলেন, ‘আমি একজন মাদকাসক্ত। আমি জীবনে কখনো মসজিদে যাইনি। আমি দু’ধরনের চিন্তা করছিলাম। একবার ভাবছিলাম আমি কিছু হিরোইন নেব যাতে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারি। আমি যখন এ ধরনের ভাবছিলাম তখন একজন আমার পাশে এসে আমাকে বললেন, আপনি গৃহহীন, আপনি মসজিদে রাত কাটাতে চান?’

‘তারা আমাকে অনেক আপ্যায়ন করলেন। আমাকে কিছু খেতে ও পান করতে দিলেন। সেখানে আরেকটা বিশেষ জিনিস পেলাম, সেটা হলো মনস্ত্বাত্ত্বিক পরামর্শ, যেটা আমাদের কখনো দেয়া হয় না’, বলছিলেন জিমি।

জিমির বক্তব্য, ‘মিডিয়ায় মসজিদকে প্রায়ই খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়।’

আয়ারল্যান্ডের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের অধীনস্থ লিডস গ্র্যান্ড মসজিদ, ওল্ডহাম মসজিদ, ফিনসবারি পার্ক মসজিদ, ক্যান্টাবারি মসজিদ ও ডাবলিনের ক্লোনসকিগ মসজিদও গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য তাদের দুয়ার খুলে দিয়েছে।

আয়ারল্যান্ড ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সুম্মায়াহ কেন্না ডাবলিনের ৯৮এফএম রেডিওকে বলেন, ‘রাতে তাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের একটি নিরাপত্তা দল নিয়োজিত থাকে। তারা ভবনের তাপমাত্রা বিশেষ করে শেষ রাতে তাপমাত্রা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে তার দিকে খেয়াল রাখে।’

জানুয়ারির শেষদিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে সেখানে রাত্রি যাপন করা লোক বর্তমানে ৮ হাজার। যদি এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে ২০২৬ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৫ হাজারে। সূত্র: আল জাজিরা।

নিম্ন তাপমাত্রায় আরও একটি রাত অতিবাহিত করলো ইউরোপের বিভিন্ন স্থানের লোকজন। সাইবেরিয়া থেকে ধেয়ে আসা বাতাসে ঠাণ্ডা এবং তুষারপাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়াও ওই অঞ্চলে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসি’র।

হিমবাহ ও ভারী তুষারপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানের রাস্তা-ঘাট, রেল সেবা এবং স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। তুষারপাতের কারণে বিভিন্ন বিমানবন্দরের কয়েক শ’ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

অস্বাভাবিক ঠান্ডার প্রকোপ ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণেও অনুভূত হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ জনই মারা গেছে পোল্যান্ডে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে ছিলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, এই তীব্র ঠাণ্ডায় হতদরিদ্র, গৃহহীন ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনতে পারে। কারণ আশ্রয়ের অভাবে তারা খোলা আকাশের নিচেই থাকছেন। ফলে প্রচন্ড ঠান্ডায় এসব লোকজন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যারা ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছেন, বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা এবং দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি বা যাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা রয়েছে তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পরে তুষার সরিয়ে পরে আবার বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়।

অপরদিকে ফ্রান্সের মনপেল্লিয়ের শহরের কাছে একটি সড়কে প্রায় দুই হাজার গাড়ি নিয়ে আটকা পড়েন চালকরা। বেশিরভাগ চালকই অভিযোগ করেছেন যে, রাস্তায় তাদের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে থাকতে হয়েছে।

আমস্টারডামের শিফোল এয়ারপোর্টও ঠাণ্ডা বাতাসে কাবু। কেএলএম এয়ারলাইন্স তাদের বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং কিছু দেরিতে ছাড়ছে।

ডাবলিন এয়ারপোর্ট তুষার ও প্রচণ্ড বাতাসে মারাত্মক বিঘ্নে পড়ে। লন্ডন, প্যারিজ ও ব্রাসেলকের মধ্যে চলাচলকারী ইউরোস্টারের অনেকগুলো রেল সার্ভিস বাতিল করতে হয়।

পোল্যান্ডের মতো প্রায় একই ধরনের অবস্থা স্পেন ও ইতালিতে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গত রোববার থেকে এ পর্যন্ত আবহাওয়াজনিত কারণে স্লোভাকিয়ায় মারা গেছেন ৭ জন। এবং সাম্প্রতিক সময়ে চেক রিপাবলিকানে মারা গেছেন ছয় জন।

গৃহহীন লোকজন রয়েছেন সবচেয়ে ঝুঁকিতে।

লিথুনিয়ায় ৫ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। ফ্রান্সে ৪ জন, সার্বিয়া, ইতালি, স্লোভেনিয়া ও রোমানিয়ায় ২ জন করে এবং ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডসে ১ জন করে মৃত্যুর খবর দিয়েছে এএফপি।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে কর্তৃপক্ষ গৃহহীন ৩ হাজার বাসিন্দার জন্য জরুরি শেল্টারের ব্যবস্থা করেছে। তাই খুলে দিয়েছে মসজিদগুলোর দুয়ার।

সূত্র: আল-জাজিরা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ