বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


তিনটি চাহিদাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে জড়িয়ে থাকে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লুবাবা জান্নাত হুমায়রা

স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পর তিনটি চাহিদাকে কেন্দ্র করে একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। শারীরীক চাহিদা, মানসিক চাহিদা এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা। এর কোন একটির ঘাটতি বয়ে আনতে পারে অসন্তুষ্টি।

আর তাই বিয়ের আগ মুহূর্তে সুন্নাহ মোতাবেক পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করার একটা রাফ প্ল্যান করে নিতে পারেন। কিছু বিষয় হাইলাইট করে যদি সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা যায় তবে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়।

বিয়ে পরবর্তী রোমান্স যেনো আমৃত্যু টিকে থাকে এজন্য নিম্নের সুন্নাতি বিষয়গুলোতে আসুন সকলে একটু চোখ বুলিয়ে নেই।

১) সহধর্মিণীর হৃদয়ের ভাষা বুঝুন: রাসূলুল্লাহ সা. একবার আয়েশা রা. বললেন, হে আয়েশা ! আমি অবশ্যই জানি কখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক আর কখন অসন্তুষ্ট হও।

আয়েশা জিজ্ঞেস করলাম, তা আপনি কিভাবে জানেন? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, যখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তখন তুমি এরূপ বল,‘মুহাম্মাদের রবের কসম, আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট হও তখন বল, ‘ইবরাহীমের রবের কসম’! আয়েশা রা. বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আল্লাহর শপথ! (রাগের সময়) আমি কেবল আপনার নামটাই বাদ দেই।

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহর রাসুল (সা) তাঁর সহধর্মিণীর হৃদয়ের অনুভূতি কতোটা গভীরভাবে বুঝতেন। আসলে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমনই হওয়া উচিত। একে অপরের সুখ দুঃখ যতো বেশী বুঝতে পারবে ততো তাদের মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করবে।

২) স্ত্রী দুঃখ পেলে সান্ত্বনা দেয়া: আল্লাহর রাসুল সা. এর প্রিয় সহধর্মিণী সাফিয়াহ রা. ইসলাম গ্রহনের পুর্বে ইহূদী ছিলেন। তো রাসুলুল্লাহ সা. একবার হযরত সাফিয়াহর রা. গৃহে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন ।

কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন- আয়েশা রা. এবং যায়নাব রা. বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে একই রক্তধারার অধিকারিণী । সুতরাং আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।

একথা শুনে রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি কেন বললে না যে, ‘আমি আল্লাহর নবী হযরত হারুণের বংশধর ও হযরত মুসার ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং মুহাম্মদ সা. আমার স্বামী । অতএব তোমরা কোন দিক হতে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পার ?’

অতঃপর আল্লাহর রাসুল সা. তাঁর নিজ হাত দিয়ে সাফিয়াহর রা. চোখ মুছে দিলেন। বিয়ের পর একটি দম্পতির মাঝে অবশ্যই এই গুনটি বিরাজ করতে হবে।

আপনার বেটার হাফ সবসময় হাস্যজ্জ্বল থাকবে এমন ভাবাটা বোকামী। এসময় একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের কাছে টানতে হবে।

৩) স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শোয়া: আল্লাহর রাসুল সা. প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা রা. এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়েশা রা. এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন।

আয়েশা রা. যখন ঋতুবর্তী অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি তাঁর উরুর উপর শুয়ে কোর’আন তিলাওয়াত করতেন। একজন পুরুষ তার বৈবাহিক জীবনে কতোবার এভাবে স্ত্রীর উরুতে মাথা রেখে শুয়েছেন??

একটাবার ভাবুন, মহিলাদের এই সেন্সেটিভ সময়ে আপনার একটু সুক্ষ্ম আহ্লাদ তার মনের দুঃখ নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে।

একবার মাথা রেখে দেখুনই না স্ত্রী সব উজাড় করে দিয়ে দিবে, প্রমিজ। এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীরও উচিত স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে নিজের কথাগুলো শেয়ার করা। নিশ্চিত স্বামী বেচারা পরদিন আস্ত গোলাপ বাগান নিয়ে আসতেও কুন্ঠাবোধ করবেন না।

৪) একে অপরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন: উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. প্রায় সময় রাসুলুল্লাহর সা. মাথার চুল আচড়ে দিতেন। এমনকি তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর মাথা ধৌত করে দিতেন।

আমি তো মনে করি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছাকাছি আসার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, একে অপরের মাথায় সিম্পলি হাত বুলিয়ে দেয়া বা একে অপরের চুল আচড়ে দেয়ার মাধ্যমে যে ভালোবাসার আদানপ্রদান হবে তা অবিশ্বাস্য।

৫) একই পাত্র হতে খাওয়ার অভ্যেস শুরু করুন: যখন উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসুল সা. ঠিক প্রিয় সহধর্মিণীর ঠোট লাগা অংশে ঠোট লাগিয়ে পানি পান করতেন।

যখন আয়েশা রা. গোশত খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল সা. আয়েশা হতে গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আয়েশা রা. যেদিকটায় ঠোট লাগিয়ে খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনিও খাওয়া শুরু করতেন।

অফিস থেকে আসতে দেরী হোক আর যাই হোক, স্ত্রীর সাথে আজ হতে মাঝে মাঝে একই প্লেটে, একই গ্লাসে খাওয়া শুরু করুন। (প্রতিদিন করতে বলবো না, নাহয় নেকামি ভেবে বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব জেগে উঠতে পারে)। এতে হৃদতা, ভালোবাসা বাড়বে। খেতে খেতে দু’জনার হৃদয় হতে এমন ফ্রেগ্রেন্স বের হবে, আহ! শুধু সুকুন আর সুকুন।

৬) লজ্জা ফেলে মুসাহাফা করুন: আল্লাহর রাসুল সা. প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু খেতেন। তাঁদের সাথে আদর আহ্লাদ করতেন। যখন রাসুলুল্লাহ সা. সিয়াম রাখতেন, ঠিক তখন তিনি স্ত্রীদের চুমু দিয়েছেন এমন কথাও হাদিসে পাওয়া যায়।

স্ত্রীর চোখে চোখ রাখা, তার কাজের মধ্যখান দিয়ে হুট করে চুমু দিয়ে আসা, আপনার ভালোবাসার গভীরতাকে আপনার স্ত্রীর অন্তরে পৌছুতে সাহায্য করবে।

ভালোবাসা লুকোনোর বিষয় নয়, তা প্রকাশ করার মাধ্যম ইসলাম শিখিয়েছে আমাদের। লজ্জা ভুলে একে অপরের সম্মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করা শুরু করুন।

একে অপরের সাথে মিলিত হন। কাছে টানুন। নিশ্চই স্বামী স্ত্রীর পবিত্র মিলন সাদাকাহ হিসেবে আল্লাহ তা’য়লা কবুল করেন।

৭) একে অপরের মুখে হাত তুলে খাইয়ে দিন: ভালোবাসা প্রদর্শনের উত্তম মাধ্যম হলো এই ক্ষুদ্র কাজটি। নিজ হাতের উপার্জন স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়াও সওয়াবের কাজ। ভালোবাসার অস্তমিত সুর্যকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে এর তুলনা নেই।

আল্লাহর রাসুল সা. বলেন, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও’।

৮) স্ত্রীর হাতের কাজে সাহায্য করুন: আসওয়াদ রহ বলেন, আমি আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সা. ঘরে কী কাজ করতেন?

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন।

অভিমান করা স্ত্রীদের দোষ নয়, বরং এটা তাদের সৌন্দর্য

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ