শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


ঢাকায় কি প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হতেই থাকবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

রাজধানী ঢাকায় সড়ক না বাড়লেও প্রতিনিয়তই বাড়ছে গাড়ির চাপ, বাড়ছে যানজট। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণা অনুযায়ী রাজধানীতে বর্তমানে গাড়ি রয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা সাড়ে ১০ লাখ!

বুয়েট-এর গবেষণা সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশ, ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন যোগ হয় ২৫০ গাড়ি অর্থাৎ বছরে ৯০ হাজার। এর মধ্যে ৭০ হাজারই ব্যক্তিগত গাড়ি। ফলে ঢাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে গাড়ির চাপ, বাড়ছে যানজট।

বিআরটি-এর তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে ৩০ হাজার বাস থাকলে রাজধানীবাসীকে কোনো দুর্ভোগই পোহাতে হতো না। বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান বলছে, গত ৮ বছরে এই শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাই বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

যানজটের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িকে দায়ী করা হলেও এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর চ‚ড়ান্ত খসড়ায় ব্যক্তি বা পরিবারপ্রতি গাড়ি সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধান থাকলেও তা কতটা কার্যকর হবে?

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে মানসিক চাপের ১০টি শহরের মধ্যে একটি ঢাকা। যার অন্যতম প্রধান কারণ যানজট। বলা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ার কারণেই অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে রাজধানীর যানজট। এসব পরিবহনে চলাচল করে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ।

প্রসঙ্গত, ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় প্রতি ১০ বর্গফুট জায়গাতে মাত্র দুজন মানুষ চড়তে পারেন। অন্যদিকে, গণপরিবহনে একই পরিমাণ জায়গায় বসে ও দাঁড়িয়ে ১৫-১৬ জন যাত্রী চলাচল করতে পারেন। সেই হিসাবে যতসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, তা ঢাকার রাস্তার অর্ধেকের বেশি দখল করে রাখে।

বাকি অংশ থাকে অবৈধ দখলে। কিছু অংশে চলাচল করে গণপরিবহন। ফলে সাধারণ কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে দিন দিন। যানজটে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা।

গত ২৬ জুলাই বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়- যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলে।

গত ১০ বছর আগেও ঢাকায় যানবাহনের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এভাবে চলতে থাকলে কি আর কিছুদিন পর মানুষ হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে না?

বলা যায়, ব্যক্তিগত পরিবহনে নিয়ন্ত্রণ না থাকা, সড়কের অব্যবস্থাপনা এবং পর্যাপ্ত রুট না থাকায় রাজধানীতে এ পরিস্থিতি চলছে। যানজটের কারণে কর্মঘণ্টা যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি কমে যাচ্ছে কর্মস্পৃহাও। এমন বাস্তবতায় যানজট নিরসনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণবিষয়ক নীতিমালা করা আজ সময়ের দাবি।

ব্যক্তিগত গাড়িতে অনুৎসাহ তৈরি এবং এর ব্যবস্থাপনার জন্য এর আগে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ১০০ থেকে ৫০০ শতাংশ হারে করারোপ করা এবং জোড়-বেজোড় সংখ্যার গাড়ি চলাচলের জন্য দিন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব উদ্যোগ ভেস্তে গেছে নানা কারণে।

মনে রাখা চাই, একটা শহরে উন্নত কার্যকর গণপরিবহন না থাকলে এক সময় ওই শহর মুখ থুবড়ে পড়বে। ঢাকার মতো একটা শহরে কমিউটার ট্রেন, মেট্রোরেল, র‌্যাপিড বাস, ট্যাক্সি থাকা অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু এখানে এসবের কোনো কিছুই নেই। এসব নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনাও নেই, আর যা আছে তার সঠিক বাস্তবায়ন নেই।

যানজট দূর করার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গণপরিবহনের মানও বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারটা নিরুৎসাহী করতে হবে এবং যানজট নিরসনে শহরের রাস্তাগুলোও দখলমুক্ত করতে হবে। না হলে ফ্লাইওভার, মেট্রো রেলে কোনো লাভ হবে না। আমরা চাইÑ যানজটের কারণে ঢাকায় যেন প্রতিদিন ৩২ লাখ কেন এক কর্মঘণ্টাও নষ্ট না হয়।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

২৬.০২.২০১৮


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ