হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দেশের দুই খ্যাতিমান আলেম ইন্তেকাল করেছেন। যা বাংলাদেশের আলেম উলামা ও ইসলামপ্রিয় জনতার জন্য বড় বেদনার।
একজন হজরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুুর রহ.এর বড় ছেলে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাবেক আমীরে শরীয়ত মাওলানা কারী শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ।
এ বর্ষীয়ান আলেম আজ শুক্রবার সকাল ৭টা৩০ মিনিটে রাজধনীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালে এ দেশের আলেম সমাজের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। অশ্রুসিক্ত হন হাজারো ভক্ত অনুরাগী।
মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ ২০১৪ সালের মার্চ থেকে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ চার বছর বিছানায় শায়িত ছিলেন।
ইসলামি রাজনীতির অঙ্গনে শক্তিশালী বলয় তৈরি করার জন্য জীবনভর সংগ্রাম করেছেন তিনি। বাংলাদেশে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ এবং তওবার রাজনীতির দিকপাল তার বাবার হজরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুুর রহ.এর হাত ধরে রাজনৈতিক যে দর্শন লাভ করেছিলেন কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর সে পথেই হেঁটেছেন সারাটা জীবন।
ব্রেন স্ট্রোক করার পর থেকে কথা বলা প্রায় বন্ধই ছিলো। তাছাড়া মূত্রণালির সমস্যা, হাঁটুর ব্যথা, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। সমস্যা সঙ্কুল জীবন নিয়েই বিছানায় পড়ে ছিলেন এ মহান রাজনীতিবিদ আলেম।
অসুস্থ হওয়ার পরও মাদরাসার প্রতি তার টান ও আবেগ ছিলো দেখার মতো। একটু শক্তি পেলেই মাদরাসায় বারবার আসতে চাইতেন। মাদরাসা ও দীনি প্রতিষ্ঠানকে মনে-প্রাণে ভালোবাসতেন তিনি।
একুশে বইমেলায় প্রকাশিত যে কোনো বই দেখতে ও কিনতে ক্লিক করুন
যে শিক্ষা বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন তা জীবনের পরতে পরতে লালন করেছেন। স্বপ্নের মতো সে বীজ বুনেছেন জীবন ও সংসারের মসৃণ ভূবৃত্তে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক যে কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে পরবর্তী বংশ পরম্পরা সেই কাজ পূর্ণ করবে- এটাই জাতির কাছে তাঁর শেষ প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালের ৭ মে হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকালের পর খেলাফত আন্দোলনের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন মাওলানা কারী শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ।
একটানা ২৭ বছর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন । পরে তিনি পর পর কয়েক বার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে খেলাফত আন্দোলনের দায়িত্ব ভার তার ছোট ভাই কারী মাওলানা শাহ আতাউল্লাহকে বুঝিয়ে দেন।
চলে গেলেন আল্লামা মোস্তফা আজাদও
একদিকে যখন মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফের ইন্তেকালে সবার মাঝে শোক বিরাজ করছিলো তখনই বাংলারা আলেম সমাজকে আরেকটি শোক সংবাদ শুনতে হলো। নানা প্রান্ত থেকে খবর আসতে থাকল মাওলানা মোস্তফা আজাদ আর নেই।
আজ শুক্রবার বেলা ১০টার কিছু পর মাত্র ৩ ঘণ্টারও কম ব্যবধানে ঢাকার ওরিয়ন জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। শোকে ভাসে হাজার হাজার ছাত্র শিক্ষক, ভক্ত অনুরাগী।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ মেয়ে, ১ ছেলে, হাজার ছাত্র-শিষ্য ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এ আলেম ছিলেন বাংলাদেশের প্রবীণ আলেমদের অন্যতম। তিনি ঢাকার জামিয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘ দিন। মাদরাসার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও তিনি ছিলেন একজন সচেতন ও সক্রিয় আলেম।
বর্ণাঢ্য কর্ম দিয়ে সাজানো ছিলো মাওলানা মোস্তফা আজাদের জীবন। মাওলানা মোস্তফা আজাদ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্রযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর।
স্থানীয় যুবক, ছাত্রদের নিয়ে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করতে গ্রামের মাঠে ট্রেনিং নেন তিনি। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন ধলগ্রাম ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামের মাঠে ট্রেনিং সেন্টার খুলেছিলেন মোস্তফা আজাদের বাবা।
মুক্তিযুদ্ধে তার যুদ্ধের এলাকা ছিল মেজর অব. আ. জলিলের নেতৃত্বাধীন ৯ নং সেক্টরে। একবার এই আলেম মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মোস্তফা আজাদ রাগে-ক্ষোভে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।
শাকের হোসাইন শিবলী রচিত ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ মোস্তফা আজাদ বলেন, ‘আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ৭১-এর নয় মাস পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি বহুবার। এটা আমার গর্ব। আমার অহঙ্কার।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর সার্টিফিকেট ছিল আমার কাছে। সেই প্রমাণপত্র আমি ছিঁড়ে ফেলেছি এ অফিসকক্ষে। টুকরো টুকরো করে ছিঁড়েছি। কখন ছিঁড়েছি? যখন দেশের হালচাল পাল্টে গেছে। অযোগ্যরা ক্ষমতার মসনদে বসতে শুরু করেছে। রাজাকাররা রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পদক নিয়েছে।
মাওলানা মোস্তফা আজাদের দেশ প্রেম এ দেশের তরুণ সমাজকে ইসলাম, মানবতা ও দেশ প্রেমে অনুপ্রেরণা যোগাবে যুগ যুগ ধরে।
কাতারে কুরআন প্রতিযোগিতায় দেশের জন্য সাফল্য চায় আবু রায়হান